ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশে রোগীর চাপ বাড়লেও কাটেনি নার্সের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
  • / ৪১৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রোগীর সান্নিধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকেন নার্স বা সেবিকা। রোগীর পরিচর্যা, আন্তরিকতা নিয়ে সংকট থাকলেও দায়িত্বরত অবস্থায় বসে থাকার ফুসরত খুব একটা মেলে না নার্সদের।

মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ বাড়লেও কাটেনি নার্সের সংকট। মাত্র ৯৫ হাজার নিবন্ধিত নার্স দিয়ে চলছে পুরো দেশের স্বাস্থ্য সেবা। সরকারিতে কর্মরত প্রায় ৫০ হাজারের সবাই নিবন্ধিত হলেও রয়েছে তীব্র সংকট। আর বেসরকারিতে হাজার হাজার নার্স অনিবন্ধিত হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের।

ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডের শয্যা ১৫টি। পালাক্রমে সকালের শিফটে ১২ জন, দুপুরে ৩ জন এবং রাতে ২ জন নার্স দায়িত্ব পালন করেন। মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত নার্স দিয়ে চলছে ওয়ার্ডের সেবা। অথচ এই ওয়ার্ডে শিশু রোগী রয়েছে ৫০ জন।

নার্সদের অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপের পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে। যেকারণে তাদের দায়িত্ব ঘাড়ে আসায় চাইলেও রোগীদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারেন না তারা।

তারা বলেন, রক্ত সংরক্ষণ করা কিন্তু আমাদের দায়িত্ব না। তবুও সেটা আমাদেরকে করতে হয়। অফিসের রিপোর্ট খাতা নিয়ে আমাদেরকে যেতে হয়। চতুর্থ শ্রেণির চাপটাও নিতে হয়। কারণ ওদের কাজটাও আমাদের করতে হয়।

প্রতিদিন প্রায় ২৩০০ নার্স সেবা দিয়ে থাকেন ঢাকা মেডিকেলে। বিপরীতে আন্তঃবিভাগে সেবা নেন অন্তত সাড়ে ৪ হাজার রোগী। অর্থাৎ দুজন রোগীর বিপরীতে সেবা দিচ্ছেন একজন নার্স। তবে নার্সরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে রোগী সুস্থ করার হারও বাড়তো বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান।

তিনি বলেন, ‘মেডিকেল সোশ্যাল ওয়ার্কার এ ধরনের কিছু পোস্ট থাকলে নার্সদের চাপ অনেক কম হতো। তাহলে উনাদের সেবা দেয়ার মান অনেক বৃদ্ধি পেত।’

এদিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৩০০ শয্যার বিপরীতে রয়েছে ৭০২ জন নার্স। পাশাপাশি মূল দায়িত্বের বাইরে করতে হয় না অন্য কোন কাজ।

ইবনে সিনা হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতে ৫ জন রোগীর বিপরীতে ১ জন করে নার্স নিয়োজিত রাখি। তবে জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে আমরা ১ জন রোগীর বিপরীতে ১ জন নার্স রাখি।’

প্রায় সাড়ে ৪০০ ইনস্টিটিউট থেকে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ হাজার নার্স বের হলেও হাসপাতালে পদায়নে ধীরগতি স্বাস্থ্য সেবার মানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করছে বলে দাবি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের।

বিএমডিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘এমন সব জায়গায় নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করা হয়েছে, যেখানে হাসপাতালেই নাই। নার্সিং পরিদপ্তরটাকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ৪৫ শতাংশ লোক দিয়ে আমরা কাজ করছি। চিকিৎসকরা কিন্তু রোগীর সাথে সবসময় থাকে না, নার্সরা থাকে।’

চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নিবন্ধিত নার্স না থাকায় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনিবন্ধিত নার্সদের দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। যাতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবার মান। সমস্যা সমাধানে সরকারিতে নার্সের সংখ্যা বাড়ানোসহ সব ধরনের হাসপাতালকে কঠোর মনিটরিং এর আওতায় আনার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশে রোগীর চাপ বাড়লেও কাটেনি নার্সের সংকট

আপডেট সময় : ০১:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

রোগীর সান্নিধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকেন নার্স বা সেবিকা। রোগীর পরিচর্যা, আন্তরিকতা নিয়ে সংকট থাকলেও দায়িত্বরত অবস্থায় বসে থাকার ফুসরত খুব একটা মেলে না নার্সদের।

মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ বাড়লেও কাটেনি নার্সের সংকট। মাত্র ৯৫ হাজার নিবন্ধিত নার্স দিয়ে চলছে পুরো দেশের স্বাস্থ্য সেবা। সরকারিতে কর্মরত প্রায় ৫০ হাজারের সবাই নিবন্ধিত হলেও রয়েছে তীব্র সংকট। আর বেসরকারিতে হাজার হাজার নার্স অনিবন্ধিত হলেও তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের।

ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডের শয্যা ১৫টি। পালাক্রমে সকালের শিফটে ১২ জন, দুপুরে ৩ জন এবং রাতে ২ জন নার্স দায়িত্ব পালন করেন। মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত নার্স দিয়ে চলছে ওয়ার্ডের সেবা। অথচ এই ওয়ার্ডে শিশু রোগী রয়েছে ৫০ জন।

নার্সদের অভিযোগ, মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপের পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট রয়েছে। যেকারণে তাদের দায়িত্ব ঘাড়ে আসায় চাইলেও রোগীদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারেন না তারা।

তারা বলেন, রক্ত সংরক্ষণ করা কিন্তু আমাদের দায়িত্ব না। তবুও সেটা আমাদেরকে করতে হয়। অফিসের রিপোর্ট খাতা নিয়ে আমাদেরকে যেতে হয়। চতুর্থ শ্রেণির চাপটাও নিতে হয়। কারণ ওদের কাজটাও আমাদের করতে হয়।

প্রতিদিন প্রায় ২৩০০ নার্স সেবা দিয়ে থাকেন ঢাকা মেডিকেলে। বিপরীতে আন্তঃবিভাগে সেবা নেন অন্তত সাড়ে ৪ হাজার রোগী। অর্থাৎ দুজন রোগীর বিপরীতে সেবা দিচ্ছেন একজন নার্স। তবে নার্সরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে রোগী সুস্থ করার হারও বাড়তো বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান।

তিনি বলেন, ‘মেডিকেল সোশ্যাল ওয়ার্কার এ ধরনের কিছু পোস্ট থাকলে নার্সদের চাপ অনেক কম হতো। তাহলে উনাদের সেবা দেয়ার মান অনেক বৃদ্ধি পেত।’

এদিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৩০০ শয্যার বিপরীতে রয়েছে ৭০২ জন নার্স। পাশাপাশি মূল দায়িত্বের বাইরে করতে হয় না অন্য কোন কাজ।

ইবনে সিনা হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতে ৫ জন রোগীর বিপরীতে ১ জন করে নার্স নিয়োজিত রাখি। তবে জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে আমরা ১ জন রোগীর বিপরীতে ১ জন নার্স রাখি।’

প্রায় সাড়ে ৪০০ ইনস্টিটিউট থেকে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ হাজার নার্স বের হলেও হাসপাতালে পদায়নে ধীরগতি স্বাস্থ্য সেবার মানকে প্রশ্নের মুখোমুখি করছে বলে দাবি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের।

বিএমডিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘এমন সব জায়গায় নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করা হয়েছে, যেখানে হাসপাতালেই নাই। নার্সিং পরিদপ্তরটাকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ৪৫ শতাংশ লোক দিয়ে আমরা কাজ করছি। চিকিৎসকরা কিন্তু রোগীর সাথে সবসময় থাকে না, নার্সরা থাকে।’

চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নিবন্ধিত নার্স না থাকায় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনিবন্ধিত নার্সদের দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। যাতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবার মান। সমস্যা সমাধানে সরকারিতে নার্সের সংখ্যা বাড়ানোসহ সব ধরনের হাসপাতালকে কঠোর মনিটরিং এর আওতায় আনার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।