ঢাকা ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বিদেশি ঋণনির্ভরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:০৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • / ৩৮৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বিদেশি ঋণনির্ভরতা। অর্থনীতিবিদরা সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিলেও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলছেন, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেবে সরকার। এদিকে, প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং স্থানীয় সরকারের খাতের বরাদ্দ কমছে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতকে। সবমিলিয়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। তবে খাতভিত্তিক বিবেচনায় এবারও শীর্ষেই থাকছে পরিবহন ও যোগাযোগ।

উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোন খাত কত টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এবার সেই হিসেবটা দেখে নেয়া যাক। এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। টাকার অংকে যা ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে তা চলমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতেই। তবে এ খাতেও চলমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমে যাচ্ছে।

এছাড়াও বরাদ্দ কমছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা খাতে। বরাদ্দ কমে যাচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও।

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জলবায়ু খাতে। এই খাতগুলো প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার নির্দেশনা থাকবে বৃহষ্পতিবারের এনইসি সভায়।

প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০২৪-২৫ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা। চলমান অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত এডিপিতে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে ১ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি ঋণকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে হোঁচট খাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি।

বিশ্বব্যাংক ( বাংলাদেশ আবাসিক মিশন) সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ নিয়ে যেসকল প্রকল্প করা হচ্ছে সেগুলো না করা হয় তাহলে ঋণ নির্ভরশীলতা একটা দুর্দশা বাড়াবে।’

যদিও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলছেন, স্বল্প মেয়াদে কিংবা উচ্চ সুদে কোনো ঋণ নিচ্ছে না সরকার। তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

বৃহষ্পতিবার রাজধানীর শের ই বাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা। ওই সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেট।

উত্তরা থেকে মতিঝিল এমআরটি লাইন-৬। চলমান অর্থ বছরে সস্পন্ন হওয়া একটি মেগা প্রকল্পের সুফল ভোগ করছেন এখন রাজধানীবাসী। নগরবাসীকে যানজট থেকে আরও স্বস্তি দিতে এবার ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি-১ প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে পাতাল রেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিমানবন্দর থেকে রামপুরা হয়ে এটি চলে যাবে কমলাপুর পর্যন্ত। আর উড়াল অংশটি যাবে পূর্বাচলের দিকে। আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত মেঘা প্রকল্পের তালিকায় এটি রয়েছে প্রথম দিকে।

এছাড়াও ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পাঁচটি মেঘা প্রকল্প পুরো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ১৩ শতাংশের বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। সবমিলিয়ে উন্নয়ন বাজেটের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ। যা চলমান অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপির তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই প্রথমবারের মত আগের অর্থ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃদ্ধি নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবতার নিরিখেই এডিপির আকার ঠিক করবে সরকার।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এখন সংকুচিত অবস্থায় আছে। কিছুটা সংকোচন মূলক চিন্তা ভাবনা আমাদেরও আছে। আমরা চেয়েছি এডিপি ও বাজেটের সাইজ খুব ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি না করে। একটা স্মার্ট বাজেট করার চেষ্টা করেছি।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে এডিপির ব্যয় করবার এবং অতীতে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। সেসব খাতে গুরুত্ব দিয়ে এডিপি আমরা প্রস্তাব করছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বিদেশি ঋণনির্ভরতা

আপডেট সময় : ১২:০৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বিদেশি ঋণনির্ভরতা। অর্থনীতিবিদরা সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিলেও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলছেন, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেবে সরকার। এদিকে, প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং স্থানীয় সরকারের খাতের বরাদ্দ কমছে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতকে। সবমিলিয়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। তবে খাতভিত্তিক বিবেচনায় এবারও শীর্ষেই থাকছে পরিবহন ও যোগাযোগ।

উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোন খাত কত টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এবার সেই হিসেবটা দেখে নেয়া যাক। এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। টাকার অংকে যা ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে তা চলমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতেই। তবে এ খাতেও চলমান অর্থ বছরের তুলনায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমে যাচ্ছে।

এছাড়াও বরাদ্দ কমছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা খাতে। বরাদ্দ কমে যাচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতেও।

আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও জলবায়ু খাতে। এই খাতগুলো প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার নির্দেশনা থাকবে বৃহষ্পতিবারের এনইসি সভায়।

প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০২৪-২৫ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারের উন্নয়ন বাজেটে বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা। চলমান অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত এডিপিতে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হচ্ছে ১ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি ঋণকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে হোঁচট খাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি।

বিশ্বব্যাংক ( বাংলাদেশ আবাসিক মিশন) সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঋণ নিয়ে যেসকল প্রকল্প করা হচ্ছে সেগুলো না করা হয় তাহলে ঋণ নির্ভরশীলতা একটা দুর্দশা বাড়াবে।’

যদিও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলছেন, স্বল্প মেয়াদে কিংবা উচ্চ সুদে কোনো ঋণ নিচ্ছে না সরকার। তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

বৃহষ্পতিবার রাজধানীর শের ই বাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা। ওই সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেট।

উত্তরা থেকে মতিঝিল এমআরটি লাইন-৬। চলমান অর্থ বছরে সস্পন্ন হওয়া একটি মেগা প্রকল্পের সুফল ভোগ করছেন এখন রাজধানীবাসী। নগরবাসীকে যানজট থেকে আরও স্বস্তি দিতে এবার ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি-১ প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে পাতাল রেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিমানবন্দর থেকে রামপুরা হয়ে এটি চলে যাবে কমলাপুর পর্যন্ত। আর উড়াল অংশটি যাবে পূর্বাচলের দিকে। আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত মেঘা প্রকল্পের তালিকায় এটি রয়েছে প্রথম দিকে।

এছাড়াও ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পাঁচটি মেঘা প্রকল্প পুরো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ১৩ শতাংশের বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। সবমিলিয়ে উন্নয়ন বাজেটের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ। যা চলমান অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপির তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই প্রথমবারের মত আগের অর্থ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃদ্ধি নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবতার নিরিখেই এডিপির আকার ঠিক করবে সরকার।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এখন সংকুচিত অবস্থায় আছে। কিছুটা সংকোচন মূলক চিন্তা ভাবনা আমাদেরও আছে। আমরা চেয়েছি এডিপি ও বাজেটের সাইজ খুব ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি না করে। একটা স্মার্ট বাজেট করার চেষ্টা করেছি।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে এডিপির ব্যয় করবার এবং অতীতে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। সেসব খাতে গুরুত্ব দিয়ে এডিপি আমরা প্রস্তাব করছি।’