ঢাকা ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দৃশ্যমান দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোর ডিপো এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৩:১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
  • / ৩৯৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দৃশ্যমান দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পের ডিপো এলাকা। নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই লাইনে আরও একটি নির্মাণ ভাগে চলতি বছরের শেষ দিকেই শুরু হবে পাতাল রেললাইন নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। ১২টির মধ্যে আরও অন্তত তিনটি নির্মাণ প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।

সারি সারি এক্সকেভেটর, ডাম্প ট্রাক, বোরিং মেশিন, বুলডোজার কিংবা মোটর গ্রেডারের দিনরাত ব্যস্ততার লক্ষ্য, মেট্রোরেলের লাইন এক বা এমআরটি ওয়ানের, ডিপো নির্মাণের জন্য জায়গা প্রস্তুত করা। মূলত এই ডিপো থেকেই পরিচালিত হবে, নতুনবাজার পর্যন্ত উড়াল ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতাল মেট্রো।

শীতলক্ষ্যার পাড়ঘেষে প্রায় ৯৪ একর জায়গার ওপর চলছে নির্মাণযজ্ঞ। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে তারা অর্ধেকের মতো কাজ শেষ করে ফেলেছেন।

এমআরটি লাইন ০১ এর উপ-প্রকল্প পরিচালক মোমেনুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘আমাদের সয়েল ইম্প্রুভমেন্টের কাজ মাত্রই শেষ হলো। এটা পুরোপুরি জাপানি প্রযুক্তি। এখন সয়েলের ওপর আমাদের মূল কাজ হলো ফিলিং চালিয়ে যাওয়া। এটা পুরোদমে চলছে।’

জাপানি কন্ট্রাকটর মিতসুয়াকি ওকুদা বলেন, ‘জুন থেকেই বর্ষকাল শুরু হচ্ছে। তখন মাটি স্তরায়নের কাজটি কঠিন হয়ে পড়বে। সেকারণে বর্ষা শুরুর আগে কাজটি যতোটা সম্ভব এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’

কাগজে কলমে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের এ কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি দেখানো হয়েছে, তবে নির্মাণ সংশ্লিষ্টেদর দাবি এর অগ্রগতি আরও বেশি। ৫ ধাপে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজটি হচ্ছে তার সবশেষ ধাপে রয়েছে সেবা সড়ক ও পয়ঃনিস্কাশন নালা নির্মাণ। দেখা যাচ্ছে ডিপোর বিভিন্ন অংশে সেটিও নির্মাণ হয়েছে। তবে মোট ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেট্রো প্রকল্পের জন্য যে আরও ১১টি নির্মাণ চুক্তি হওয়ার কথা, তার অগ্রগতি ১ নম্বর নির্মাণ ভাগের মতো নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?

এমআরটি লাইন ০১ এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁঞা বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাকেজের ৬-৭ জন ঠিকাদার রয়েছে। উনারা সবাই প্রায় সমান। তাদের একটার পর একটা যাওয়ার দাবি আছে। তাই পরোক্ষভাবে একটু সময় লাগাচ্ছে। এজন্য প্যাকেজগুলো দেরি হচ্ছে।’

মূলত ২ নম্বর নির্মাণ ভাগ, ডিপো এলাকার অবকাঠামো, ইলেকট্রিক্যাল ও ম্যাকানিক্যাল সিস্টেম বসানোর মতো পূর্ত কাজের জন্য। যেটির জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নদ্দা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পাতাল লাইন, নির্মাণ প্যাকেজ ০৬ এর জন্য আহ্বান করা দরপত্র, চলতি মাসের শুরুর দিকে খোলা হয়েছে, এখন যেটির কারিগরি মূল্যায়ন চলছে। ০৩ নম্বর ভাগে আছে কমলাপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত পাতাল লাইন নির্মাণ, যেটির নির্মাণ অফিসের জন্য রেলওয়ে বিভাগ শাজাহানপুর কলোনিতে জায়গা দিতে চেয়েছে, তবে দরপত্র আহ্বানে এখনও পাওয়া যায়নি অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সম্মতি।

এভাবে জাইকার সম্মতির অপেক্ষায় আছে, ০৭ থেকে ১২ পর্যন্ত সব কটি নির্মাণ ভাগ। তবে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের পর সবচে এগিয়ে আছে, কুড়িল এলাকা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত উড়াল থেকে পাতালে ট্রানজিশন লাইন নির্মাণ অংশটুকু, যেটি ৫ নম্বর ভাগের অন্তর্ভূক্ত।

মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাটির প্রায় ১০ থেকে ১১ মিটার গভীর দিয়ে নির্মাণ হবে পাতাল মেট্রোর লাইন, তাই এর জন্য শহরবাসীর তেমন ভোগান্তি হবে না । তবে উড়াল ৭টি ও পাতাল ১২টি মিলিয়ে ১৯টি স্টেশন নির্মাণে দরকার হবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সেবা সংস্থাগুলোর পরিষেবা লাইন স্থানান্তর। এরই মধ্যে একটি চুক্তির আওতায় কাজ শুরু করে দিয়েছে সেনাবাহিনী প্রকৌশল কোর।

আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই লাইনটি নির্মাণে যে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে ২০২৬ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৬ এর প্যাকেজগুলো আমরা বড় করেছিলাম। আর এখন লাইন-১ বারোটা প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থাৎ প্যাকেজের সংখ্যা দেড়গুণের বেশি হয়ে গেছে। আর প্যাকেজ যেহেতু ছোট হয়ে গেছে, তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো। তবে টার্গেটে কাজ শুরুর আগে কোন পরিবর্তন আনতে চাই না।’

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোলাইন এমআরটি ওয়ানের নির্মাণে ২০১৭, ১৯ ও ২০২১ সালে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রয়াত্ত্ব কোম্পানি ডিএমটিসিএলের সঙ্গে ভিন্ন তিনটি ঋণ চুক্তি করে জাপানিজ সহায়তা সংস্থা: জাইকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এসব চুক্তির আওতায় প্রায় ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। আশা করা হচ্ছে, বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হলে বিমানবন্দর কিংবা নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে দৈনিক ১০ লাখেরও বেশি যাত্রী ঢাকার মূল অংশের সঙ্গে সহজ যাতায়াত সুবিধা পাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দৃশ্যমান দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোর ডিপো এলাকা

আপডেট সময় : ০৩:১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

দৃশ্যমান দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পের ডিপো এলাকা। নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই লাইনে আরও একটি নির্মাণ ভাগে চলতি বছরের শেষ দিকেই শুরু হবে পাতাল রেললাইন নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। ১২টির মধ্যে আরও অন্তত তিনটি নির্মাণ প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।

সারি সারি এক্সকেভেটর, ডাম্প ট্রাক, বোরিং মেশিন, বুলডোজার কিংবা মোটর গ্রেডারের দিনরাত ব্যস্ততার লক্ষ্য, মেট্রোরেলের লাইন এক বা এমআরটি ওয়ানের, ডিপো নির্মাণের জন্য জায়গা প্রস্তুত করা। মূলত এই ডিপো থেকেই পরিচালিত হবে, নতুনবাজার পর্যন্ত উড়াল ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এবং বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতাল মেট্রো।

শীতলক্ষ্যার পাড়ঘেষে প্রায় ৯৪ একর জায়গার ওপর চলছে নির্মাণযজ্ঞ। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে তারা অর্ধেকের মতো কাজ শেষ করে ফেলেছেন।

এমআরটি লাইন ০১ এর উপ-প্রকল্প পরিচালক মোমেনুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘আমাদের সয়েল ইম্প্রুভমেন্টের কাজ মাত্রই শেষ হলো। এটা পুরোপুরি জাপানি প্রযুক্তি। এখন সয়েলের ওপর আমাদের মূল কাজ হলো ফিলিং চালিয়ে যাওয়া। এটা পুরোদমে চলছে।’

জাপানি কন্ট্রাকটর মিতসুয়াকি ওকুদা বলেন, ‘জুন থেকেই বর্ষকাল শুরু হচ্ছে। তখন মাটি স্তরায়নের কাজটি কঠিন হয়ে পড়বে। সেকারণে বর্ষা শুরুর আগে কাজটি যতোটা সম্ভব এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।’

কাগজে কলমে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের এ কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি দেখানো হয়েছে, তবে নির্মাণ সংশ্লিষ্টেদর দাবি এর অগ্রগতি আরও বেশি। ৫ ধাপে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজটি হচ্ছে তার সবশেষ ধাপে রয়েছে সেবা সড়ক ও পয়ঃনিস্কাশন নালা নির্মাণ। দেখা যাচ্ছে ডিপোর বিভিন্ন অংশে সেটিও নির্মাণ হয়েছে। তবে মোট ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেট্রো প্রকল্পের জন্য যে আরও ১১টি নির্মাণ চুক্তি হওয়ার কথা, তার অগ্রগতি ১ নম্বর নির্মাণ ভাগের মতো নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?

এমআরটি লাইন ০১ এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঁঞা বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাকেজের ৬-৭ জন ঠিকাদার রয়েছে। উনারা সবাই প্রায় সমান। তাদের একটার পর একটা যাওয়ার দাবি আছে। তাই পরোক্ষভাবে একটু সময় লাগাচ্ছে। এজন্য প্যাকেজগুলো দেরি হচ্ছে।’

মূলত ২ নম্বর নির্মাণ ভাগ, ডিপো এলাকার অবকাঠামো, ইলেকট্রিক্যাল ও ম্যাকানিক্যাল সিস্টেম বসানোর মতো পূর্ত কাজের জন্য। যেটির জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নদ্দা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পাতাল লাইন, নির্মাণ প্যাকেজ ০৬ এর জন্য আহ্বান করা দরপত্র, চলতি মাসের শুরুর দিকে খোলা হয়েছে, এখন যেটির কারিগরি মূল্যায়ন চলছে। ০৩ নম্বর ভাগে আছে কমলাপুর থেকে রামপুরা পর্যন্ত পাতাল লাইন নির্মাণ, যেটির নির্মাণ অফিসের জন্য রেলওয়ে বিভাগ শাজাহানপুর কলোনিতে জায়গা দিতে চেয়েছে, তবে দরপত্র আহ্বানে এখনও পাওয়া যায়নি অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সম্মতি।

এভাবে জাইকার সম্মতির অপেক্ষায় আছে, ০৭ থেকে ১২ পর্যন্ত সব কটি নির্মাণ ভাগ। তবে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের পর সবচে এগিয়ে আছে, কুড়িল এলাকা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত উড়াল থেকে পাতালে ট্রানজিশন লাইন নির্মাণ অংশটুকু, যেটি ৫ নম্বর ভাগের অন্তর্ভূক্ত।

মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাটির প্রায় ১০ থেকে ১১ মিটার গভীর দিয়ে নির্মাণ হবে পাতাল মেট্রোর লাইন, তাই এর জন্য শহরবাসীর তেমন ভোগান্তি হবে না । তবে উড়াল ৭টি ও পাতাল ১২টি মিলিয়ে ১৯টি স্টেশন নির্মাণে দরকার হবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সেবা সংস্থাগুলোর পরিষেবা লাইন স্থানান্তর। এরই মধ্যে একটি চুক্তির আওতায় কাজ শুরু করে দিয়েছে সেনাবাহিনী প্রকৌশল কোর।

আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই লাইনটি নির্মাণে যে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে ২০২৬ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৬ এর প্যাকেজগুলো আমরা বড় করেছিলাম। আর এখন লাইন-১ বারোটা প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থাৎ প্যাকেজের সংখ্যা দেড়গুণের বেশি হয়ে গেছে। আর প্যাকেজ যেহেতু ছোট হয়ে গেছে, তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো। তবে টার্গেটে কাজ শুরুর আগে কোন পরিবর্তন আনতে চাই না।’

দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোলাইন এমআরটি ওয়ানের নির্মাণে ২০১৭, ১৯ ও ২০২১ সালে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রয়াত্ত্ব কোম্পানি ডিএমটিসিএলের সঙ্গে ভিন্ন তিনটি ঋণ চুক্তি করে জাপানিজ সহায়তা সংস্থা: জাইকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এসব চুক্তির আওতায় প্রায় ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। আশা করা হচ্ছে, বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হলে বিমানবন্দর কিংবা নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে দৈনিক ১০ লাখেরও বেশি যাত্রী ঢাকার মূল অংশের সঙ্গে সহজ যাতায়াত সুবিধা পাবে।