ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। সে হিসেবে বর্তমানে তার বয়স ৬৩ বছর। তিনি নিজেকে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর দাবি করেন। বিশ্বনবীর রক্তসম্পর্কিত উত্তরাধিকার হওয়ার কারণে সবসময় কালো রঙের পাগড়ি পরেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সে রাইসি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। এ পদে থাকার সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়ায় দেশের অভ্যন্তরে জনপ্রিয়তা বাড়ে তার।
বিচারবিভাগ এবং ধর্মীয় দিক থেকে রাইসি ছিলেন এলিট সমাজের। ২০১৭ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। কিন্তু ২০২১ সালে তিনি আবারও নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন।
নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোর বিরোধী হিসেবে প্রকাশ করা রাইসি রাজনৈতিক দিক থেকে শিয়া ইসলামি কট্টরপন্থার সমর্থক। দেশের গণতন্ত্রপন্থিদের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য দেশগুলোরও কঠোর সমালোচক।
১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাইসি তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত কওম ধর্মীয় সেমিনারিতে অধ্যায়ন শুরু করেন এবং বেশ কয়েকজন মুসলিম প্রখ্যাত স্কলারের কাছ থেকে তিনি শিক্ষা লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে ইব্রাহিম রাইসি জামিলেহ আলামলহোদা কে বিয়ে করেন। তিনি আবার মাশহাদ জুম্মার নামাজের ইমাম আহমেদ আলামলবগদার মেয়ে। তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
১৯৮৮ সালে পাঁচ মাসের জন্য রাজনৈতিক কারাবন্দিদের মৃত্যুদণ্ডের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি তার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ইরানের বিরোধী রাজনীতিবিদদের কাছে ব্যাপক অপছন্দের ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল। এরপর ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রথম সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির মৃত্যু হলে তাকে তেহেরানের প্রসিকিউটর পদে নিযুক্ত করা হয়।
ইরানের গণতন্ত্রপন্থি বলয়ে রাইসির জনপ্রিয়তা বেশ কম। কারণ, আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দেশটিতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রপন্থিরা, যারা ক্ষমতাসীন ইসলামী কট্টরপন্থি সরকারের বিরোধী। যুদ্ধ শেষে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার কারণে শত শত গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তেহরানের রেভ্যুলুশনারি আদালত সংক্ষিপ্ত বিচারকাজের পরই তাদের অধিকাংশকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। সে সময় রেভ্যুলুশনারি আদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন তিনি।
ইরান কখনও এই গণ-মৃত্যুদণ্ডের কথা স্বীকার করেনি। রাইসির ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কখনও কিছু বলেননি।
দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যু ইরানের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন।