ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, উপকূলে মাইকিং
- আপডেট সময় : ১১:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪
- / ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলে। ঝড় মোকাবিলায় উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করছে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রূপ নেয়ার পর বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে মূলত খুলনা বিভাগ পড়ে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘন্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে আগামীকাল সন্ধ্যা থেকে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি বাড়বে বলেও পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আজ শুক্রবার (২৪ মে) রাতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক মোস্তফা খানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে পানি ভবনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নাম্বারঃ ০২২২২২৩০০৭০, ০১৭৬৫৪০৫৫৭৬, ০১৫৫ ৯৭২৮১৫৮
এদিকে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এসব নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে উত্তরপূর্ব উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে শুক্রবার রাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপের কেন্দ্রে বাতাসের যে গতিবেগ রয়েছে তা ঘণীভূত হয়ে ধাপে ধাপে শনিবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে নাম হবে রেমাল। এখন পর্যন্ত এটির গতিপথ বাংলাদেশ অভিমুখী। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৬শে মে রোববার সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় এক’শ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী উপকূল ধরে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ। একই সঙ্গে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশজুড়ে অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম।
নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
কোথায় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি
১। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার এ সম্ভাবনা থাকবে শতকরা ৬৫ ভাগ
২। ওড়িশার উত্তর থেকে পশ্চিম বঙ্গ পর্যন্ত সম্ভাবনা ২৫ ভাগ
৩। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শতকরা ১০ ভাগ
বাংলাদেশে এর প্রভাব
◑ সম্ভাবনা ১ : যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা কলকাতা থেকে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে তবে খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। এবং প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।
◑ সম্ভাবনা ২ : আবার যদি এটি ওড়িশা থেকে কলকাতার আশেপাশে ল্যান্ডফল করে তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন হিসেবে চট্টগ্রাম ও বরিশালে ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দুর্বল প্রভাব সারা দেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে। যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টি হতে পারে।
◑ সম্ভাবনা ৩ : যদি এটি বরিশাল-চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে ল্যান্ডফল করে তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি সারাদেশেই ভালো বৃষ্টিপাত পেতে পারে। শুধু ব্যতিক্রম হিসেবে রংপুর বিভাগে কিছুটা কম বৃষ্টি হবে।
◑ সম্ভাবনা ৪ : যদি চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের মাঝে দিয়ে অতিক্রম করে তবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হতে পারে।
◑ সম্ভাবনা ৫ : যদি এটি মায়ানমারে যায় তবে একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল ব্যতীত আর কোথাও বৃষ্টিপাত হবে না।
এই আবহাওয়া গবেষক আরও মনে করেন, সিস্টেম যত বেশি শক্তিশালী হয় তত এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়। ফলে আশপাশে মেঘের ব্যাসার্ধ কমে যায়। অপরদিকে যত কম শক্তিশালী হয় মেঘ তত দূরে ছড়ানো ছিটানো থাকে যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে।