০১:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা

১৯৯৫ সালে সংঘটিত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওই গণহত্যায় বসনিয়ার আট হাজার মুসলিমকে হত্যা করে সার্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মানি এবং রুয়ান্ডার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। বিরোধিতা করে সার্বিয়া ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানোর পরও এটি পাস হয় সদস্যদের ভোটে।

এই প্রস্তাবকে ‘পলিটিসাইজড’ বলে আখ্যা দেন সার্ব রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিক। তার দাবি, এর ফলে পুরো সার্বিয়া এবং সার্ব জনগণের গণহত্যাকারী হিসেবে পরিচিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হলো।

‘১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ প্রচলনের পক্ষে ভোট দেয় ৮৪টি সদস্য রাষ্ট্র। প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ১৯টি ভোট। আর, ৬৮টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। খবরটি ওই গণহত্যায় নিহত আট হাজার পুরুষের স্বজনদের জন্য সন্তোষজনক। বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী মানুষগুলোর ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়।

দিবসটি ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার স্থায়ী ক্ষতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার শিকার মানুষগুলোকে স্বীকৃতি এবং শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

অবশ্য, সার্বিয়া সরকার বিষয়টিকে একইভাবে দেখছে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভুসিক হুঁশিয়ার করে বলেন, এই প্রস্তাব পাস হলে তা ‘প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতে পারে’।

সার্বিয়া সরকারের এমন তীব্র বিরোধিতায় সেই দেশটিতেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। কারণ, প্রস্তাবে সুনির্দিষ্টভাবে কেবল গণহত্যায় দায়ী ব্যক্তিদের কথাই বলা হয়েছে। স্পষ্ট করা হয়েছে, সেই দায় ‘নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর সামগ্রিকভাবে আরোপ করা যাবে না’।

স্রেব্রেনিৎসায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এমন রুল জারি করলেও, দেখতে পেয়েছে সার্বিয়া এর জন্য সরাসরি দায়ী বা সম্পৃক্ত নয়। অবশ্য, সার্বিয়া গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন বিচারকরা।

তিন বছর পর, সার্বিয়ার জাতীয় সংসদে গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। প্রতিরোধে আরও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ক্ষমাও চাওয়া হয় সেই প্রস্তাবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আলেকজান্ডার ভুসিক হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পূর্তিতে স্রেব্রেনিৎসায় শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন।

বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ তার দিকে বোতল এবং পাথর ছুঁড়ে মারে। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘তিনি ক্ষতিপূরণের নীতিতে অটল থাকবেন’।

অবশ্য, সার্ব জাতীয়তাবাদীদের অনেকে গণহত্যার হোতা ম্লাদিচকে একটা নায়কোচিত চরিত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে থাকেন। যেমন, বসনিয়ার সার্ব অধ্যুষিত রিপাবলিকা স্রপস্কা প্রদেশের প্রেসিডেন্ট মিলোরাদ দদিক ক্রমাগতভাবে স্রেব্রেনিৎসায় গণহত্যার কথা নাকচ করে আসছেন।

যদিও, দেশটির আইনে গণহত্যা অস্বীকারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিবিসি বাংলা

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা

আপডেট : ০৩:১৩:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

১৯৯৫ সালে সংঘটিত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওই গণহত্যায় বসনিয়ার আট হাজার মুসলিমকে হত্যা করে সার্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মানি এবং রুয়ান্ডার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। বিরোধিতা করে সার্বিয়া ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানোর পরও এটি পাস হয় সদস্যদের ভোটে।

এই প্রস্তাবকে ‘পলিটিসাইজড’ বলে আখ্যা দেন সার্ব রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিক। তার দাবি, এর ফলে পুরো সার্বিয়া এবং সার্ব জনগণের গণহত্যাকারী হিসেবে পরিচিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হলো।

‘১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ প্রচলনের পক্ষে ভোট দেয় ৮৪টি সদস্য রাষ্ট্র। প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ১৯টি ভোট। আর, ৬৮টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। খবরটি ওই গণহত্যায় নিহত আট হাজার পুরুষের স্বজনদের জন্য সন্তোষজনক। বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী মানুষগুলোর ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়।

দিবসটি ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার স্থায়ী ক্ষতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার শিকার মানুষগুলোকে স্বীকৃতি এবং শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

অবশ্য, সার্বিয়া সরকার বিষয়টিকে একইভাবে দেখছে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভুসিক হুঁশিয়ার করে বলেন, এই প্রস্তাব পাস হলে তা ‘প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতে পারে’।

সার্বিয়া সরকারের এমন তীব্র বিরোধিতায় সেই দেশটিতেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। কারণ, প্রস্তাবে সুনির্দিষ্টভাবে কেবল গণহত্যায় দায়ী ব্যক্তিদের কথাই বলা হয়েছে। স্পষ্ট করা হয়েছে, সেই দায় ‘নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর সামগ্রিকভাবে আরোপ করা যাবে না’।

স্রেব্রেনিৎসায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এমন রুল জারি করলেও, দেখতে পেয়েছে সার্বিয়া এর জন্য সরাসরি দায়ী বা সম্পৃক্ত নয়। অবশ্য, সার্বিয়া গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন বিচারকরা।

তিন বছর পর, সার্বিয়ার জাতীয় সংসদে গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। প্রতিরোধে আরও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ক্ষমাও চাওয়া হয় সেই প্রস্তাবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আলেকজান্ডার ভুসিক হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পূর্তিতে স্রেব্রেনিৎসায় শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন।

বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ তার দিকে বোতল এবং পাথর ছুঁড়ে মারে। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘তিনি ক্ষতিপূরণের নীতিতে অটল থাকবেন’।

অবশ্য, সার্ব জাতীয়তাবাদীদের অনেকে গণহত্যার হোতা ম্লাদিচকে একটা নায়কোচিত চরিত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে থাকেন। যেমন, বসনিয়ার সার্ব অধ্যুষিত রিপাবলিকা স্রপস্কা প্রদেশের প্রেসিডেন্ট মিলোরাদ দদিক ক্রমাগতভাবে স্রেব্রেনিৎসায় গণহত্যার কথা নাকচ করে আসছেন।

যদিও, দেশটির আইনে গণহত্যা অস্বীকারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিবিসি বাংলা