তৃতীয় মেয়াদে মোদির নিরঙ্কুশ জয়ের আভাস
- আপডেট সময় : ০৩:৪১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
মোদির রাজনৈতিক আধিপত্যের পরীক্ষা ভারতের এবারের নির্বাচন। বুথফেরত জরিপের ফল ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া নতুন নয় বলে টানা তৃতীয় মেয়াদে মোদির নিরঙ্কুশ জয়ের আভাসের প্রতিক্রিয়ায় মত বিশ্লেষকদের। যদিও ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে মোদির দলকেই এগিয়ে রাখছেন তারাও। জরিপে বলা হচ্ছে, এবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্গও ভেঙে দিতে পারে মোদির দল। এরইমধ্যে জয় দাবি করেছেন খোদ মোদি; ৩শ’ আসনে জয়ের আশা রাখছে কংগ্রেসও।
নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ এবং সরকারের বিভিন্ন কল্যাণ কর্মসূচি বিজেপি’র ভোটে ভালো প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে উচ্চ বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি- বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুকে বিবেচনায় রেখেছেন অনেক ভোটার।
‘আব কি বার, ৪শ’ পার’ নির্বাচনের পুরো মৌসুমজুড়ে এই এক শ্লোগানেই আটকে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দেড় মাসে সাত দফা ভোট শেষে শনিবারের ( ১জুন) বুথফেরত জরিপের ফল বিশ্বাস করলে মানতেই হবে, বিরোধীদের সব হাসিঠাট্টাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শেষ হাসি হাসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই। অন্তত তিনটি জরিপ বলছে, লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে কমবেশি ৪শ’ আসন জিতবে ক্ষমতাসীনরা।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, একক বা জোট সরকার গড়তে দরকার হবে অন্তত ২৭২টি আসন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ন্যূনতম সীমা পার করে লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপের আভাস, পার্লামেন্টের মোট আসনের দুই-তৃতীয়াংশ নেয়ার পথে এনডিএ। ভোটগণনা শুরু ও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার বাকি আরও দু’দিন। ম্যারাথন ভোট শেষে বুথফেরত জরিপের উল্লেখ ছাড়াই নির্বাচনে বিজয় দাবি করেছেন চরম আত্মবিশ্বাসী মোদি। বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করার পাশাপাশি ওড়িষা আর দক্ষিণ ভারতও দখলে নেবে মোদির দল।
২০১৯ সালের বিগত নির্বাচনে ৩০৩ আসনে জিতেছিল বিজেপি, জোটগত অর্জন ছিল ৩৫৩ আসন, যা ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়েও পাঁচ শতাংশ বেশি। এবারের নির্বাচনে জিতলে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করে ইতিহাস গড়বেন মোদি। এবারের নির্বাচনে শুরু থেকেই মোদির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও দীর্ঘ প্রচারণায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী- কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও বিরোধী দলীয় জোটের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে লক্ষ্যণীয় মাত্রায়, বলছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। মোদিকে ঠেকাতে নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ নামে জাতীয় পর্যায়ে ২৮ দলীয় জোট গঠন করে কংগ্রেসসহ বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য, পাঁচটি প্রধান বুথফেরত জরিপে সর্বনিম্ন ৩৫৩ থেকে সর্বোচ্চ ৪০১টি আসনে মোদি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয়ের আভাস মিলেছে। এর মধ্যে তিনটি জরিপই বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি আসন পাবে বিজেপি একাই। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেতে পারে ১২৫টি থেকে সর্বোচ্চ ১৮২টি আসন। যদিও জোটগতভাবে ৩শ’র কাছাকাছি আসনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে ইন্ডিয়া জোট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে কমপক্ষে ২৯৫টি আসনে জিতবে। আরও বেশি আসনেও জিততে পারি আমরা। তবে নিশ্চিতভাবেই সংখ্যাটি এর কম হবে না।’
বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার বুথফেরত জরিপ অতীতে অনেকবারই ভুল ছিল এবং নিরপেক্ষ ছিল না। তবে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে মোদির দলকেই এগিয়ে রাখছেন তারাও।
দ্য ওয়্যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন বলেন, ‘যে ধরনের প্রচারণা মোদি চালিয়েছেন, ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়েছেন, মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা উসকে দিয়েছেন। এই ধরনের প্রচারণার পরেও যদি মোদি এমন চমৎকারভাবে জয়ী হন, যদি বুথফেরত জরিপ সঠিক হয়, তাহলে তা সত্যিই দুঃখজনক।’
দেড়শ’ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে এবার ভোটারসংখ্যা ছিল প্রায় ৯৭ কোটি। যা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মতো একেকটি দেশের মোট জনসংখ্যার সমান।
১৯ এপ্রিল শুরু হওয়া ভোট শেষ হয়েছে ১ জুন। নির্বাচনের পুরো মৌসুমজুড়ে আলোচনায় ছিল একের পর এক বিশাল রাজনৈতিক জনসমাবেশ, নেতাদের কাদা ছোড়াছুড়ি আর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, অনলাইন-অফলাইনে নানা অপপ্রচার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারসহ বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমন, ভোটিং মেশিনে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের কারচুপি, কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ভোট দিতে না দেয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রকে হুমকিতে ফেলাসহ অসংখ্য অভিযোগ।
ভোটারদের একজন বলেন, ‘নির্বাচনে কে জিতবে, তার চেয়ে বেশি আমরা ভাবছি কোন দল বা ব্যক্তি আমাদের জন্য কাজ করবে, আমাদের রেশন দেবে- সেটা নিয়ে। রেশন না পেলে কিসের ভোট? যে আমাদের পেনশন বাড়াবে না, তার জন্যও আমাদের ভোট নয়।’
আরেকজন বলেন, ‘মোদির বিদায়ের সময় চলে এসেছে। কংগ্রেস ফিরছে। কংগ্রেসের সরকারই আবার আসবে। বিজেপি এখানে জিতবে না।’
সবমিলিয়ে ভারতের এবারের নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে মোদির রাজনৈতিক আধিপত্যের পরীক্ষা হিসেবে।