ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বাজেটে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারেনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:২৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এডিপির বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পেরে প্রতিবছরই ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গড়ে ২৮ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পারে না মন্ত্রণালয়। অথচ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ভুগছে জনবল সংকটে। এজন্য দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের সরকারি হাসপাতালের প্রতি রোগীর আস্থা ফেরাতে, দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ জরুরি।

দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল তার নির্ধারিত বাজেট খরচ করতে পারে না। যার প্রতিফলন স্পষ্ট বিগত দিনের স্বাস্থ্য বাজেটে। গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সেবা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। অথচ সেবারও ফেরত গিয়েছে ২৫ শতাংশ। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ফেরত গেছে ২১ শতাংশ টাকা। হতাশার খবর হলো, অপ্রতুল বরাদ্দের মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফেরত গেছে সর্বোচ্চ তথা ৪০ শতাংশ। এভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের গড়ে ২৮ শতাংশ ফেরত যাচ্ছে প্রতি অর্থবছরে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, ‘বাজেট ১শ’ শতাংশ পদের বাজেট ধরেই করা হয়। এখন ৮০ শতাংশ পদ থাকে আর ২০ শতাংশ ফাঁকা থাকে তাহলে তো বাজেট ফেরত যাবেই। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে টাকা দিচ্ছে না বাজেট খরচ করতে না পারায় অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দোষারোপ করছে জনবলের নিয়োগ নেই।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, অদক্ষ ব্যবস্থাপক, অদক্ষ জনশক্তি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ভীতির কারণে প্রতি বছর বরাদ্দের বড় অংশ ফেরত যাচ্ছে। যে কারণে সরকারি সেবায় আস্থা ফিরছে না। বিদেশমুখী হবার হার বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি দেখায় মার্চ, এপ্রিলে যে বরাদ্দকৃত বাজেট শেষ করে ফেলেছি তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় বাধ্য হবে বাজেট দিতে।’

জেলা উপজেলা হাসপাতালে জনবলের সঙ্কট ১০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চিকিৎসক, নার্সসহ সহায়ক জনশক্তি নিয়োগে ধীরগতি বরাবরই পরিলক্ষিত হয়। জনবল নিয়োগে স্বাস্থ্য বিভাগেরও উদাসীনতা রয়েছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স করেছি সেখানে যদি জনবল সঠিক না দিতে পারি তাহলে চিকিৎসা ঠিক মতো আশা করতে পারি না।’

খরচের সক্ষমতা না থাকায় ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে স্বাস্থ্যের বরাদ্দ। সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে এসে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার থাকতে হবে। সেখানে সরকারি ডাক্তার না থাকতে চাইলে কন্টাক্টচুয়ালভাবে দেয়া যেতে পারে।’

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০০ টাকার চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে ৭৩ টাকাই খরচ করতে হয় ব্যাক্তির পকেট থেকে। আর এ কারণে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সংকট সমাধানে স্বাস্থ্যের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি তা খরচ করার সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা বলেন, ‘বাজেটের অর্থ যদি বেশি নিয়ে আসি সেটা আবার ফেরত দেয়া ভালো কিছু না। এখন পর্যন্ত আমরা যে বাজেট করেছি সেই বাজেট দিয়ে কাজ করে আমরা পুরোপুরি অর্থ খরচ করতে পেরেছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

বাজেটে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারেনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

আপডেট সময় : ০২:২৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এডিপির বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পেরে প্রতিবছরই ফেরত পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গড়ে ২৮ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পারে না মন্ত্রণালয়। অথচ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ভুগছে জনবল সংকটে। এজন্য দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের সরকারি হাসপাতালের প্রতি রোগীর আস্থা ফেরাতে, দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ জরুরি।

দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল তার নির্ধারিত বাজেট খরচ করতে পারে না। যার প্রতিফলন স্পষ্ট বিগত দিনের স্বাস্থ্য বাজেটে। গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সেবা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। অথচ সেবারও ফেরত গিয়েছে ২৫ শতাংশ। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ফেরত গেছে ২১ শতাংশ টাকা। হতাশার খবর হলো, অপ্রতুল বরাদ্দের মধ্যেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফেরত গেছে সর্বোচ্চ তথা ৪০ শতাংশ। এভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের গড়ে ২৮ শতাংশ ফেরত যাচ্ছে প্রতি অর্থবছরে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, ‘বাজেট ১শ’ শতাংশ পদের বাজেট ধরেই করা হয়। এখন ৮০ শতাংশ পদ থাকে আর ২০ শতাংশ ফাঁকা থাকে তাহলে তো বাজেট ফেরত যাবেই। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে টাকা দিচ্ছে না বাজেট খরচ করতে না পারায় অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দোষারোপ করছে জনবলের নিয়োগ নেই।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, অদক্ষ ব্যবস্থাপক, অদক্ষ জনশক্তি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ভীতির কারণে প্রতি বছর বরাদ্দের বড় অংশ ফেরত যাচ্ছে। যে কারণে সরকারি সেবায় আস্থা ফিরছে না। বিদেশমুখী হবার হার বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি দেখায় মার্চ, এপ্রিলে যে বরাদ্দকৃত বাজেট শেষ করে ফেলেছি তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় বাধ্য হবে বাজেট দিতে।’

জেলা উপজেলা হাসপাতালে জনবলের সঙ্কট ১০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় চিকিৎসক, নার্সসহ সহায়ক জনশক্তি নিয়োগে ধীরগতি বরাবরই পরিলক্ষিত হয়। জনবল নিয়োগে স্বাস্থ্য বিভাগেরও উদাসীনতা রয়েছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স করেছি সেখানে যদি জনবল সঠিক না দিতে পারি তাহলে চিকিৎসা ঠিক মতো আশা করতে পারি না।’

খরচের সক্ষমতা না থাকায় ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে স্বাস্থ্যের বরাদ্দ। সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে এসে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার থাকতে হবে। সেখানে সরকারি ডাক্তার না থাকতে চাইলে কন্টাক্টচুয়ালভাবে দেয়া যেতে পারে।’

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০০ টাকার চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে ৭৩ টাকাই খরচ করতে হয় ব্যাক্তির পকেট থেকে। আর এ কারণে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সংকট সমাধানে স্বাস্থ্যের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি তা খরচ করার সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ ইভা বলেন, ‘বাজেটের অর্থ যদি বেশি নিয়ে আসি সেটা আবার ফেরত দেয়া ভালো কিছু না। এখন পর্যন্ত আমরা যে বাজেট করেছি সেই বাজেট দিয়ে কাজ করে আমরা পুরোপুরি অর্থ খরচ করতে পেরেছি।’