৭৭ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা
- আপডেট সময় : ১১:২৮:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
- / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে
অচেনা রাস্তায় দৌড়ে যেতে নেই, শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে কেউ সম্ভবত সেটা বলেননি ম্যাচের আগে! না হলে টস জিতে কেউ এমন পিচে আগে ব্যাটিং নেয়!
যে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম এর আগে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখেনি, দুদিন আগে বাংলাদেশ আর ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচের বাইরে আর কোনো ম্যাচই যেখানে হয়নি, এমন মাঠে আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেওয়া আর জেনেশুনে কুয়ায় ঝাঁপ দেওয়ার মধ্যে কার্যত খুব একটা পার্থক্য তো থাকে না!
কুয়ায় ঝাঁপ দেওয়ার ফলটা টের পেল শ্রীলঙ্কা। পিচে বল এসেছে দুইরকম গতিতে, কখনো প্রত্যাশার চেয়ে ধীরে, কখনো দ্রুতগতিতে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার আনরিখ নর্কিয়া আইপিএলের ফর্মকে কাঁচকলা দেখিয়ে বল হাতে যা করলেন, সেটিকে আগ্নেয়গিরির সঙ্গেই তুলনা করা চলে। ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট! মহারাজও দারুণ বোলিং করেছেন। আর শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা দৃশ্যত পিচ না বুঝে ব্যাটিং করেছেন – যেমনটা বাংলাদেশ সেদিন ভারতের বিপক্ষে করেছিল আর কী!
ফল? আগে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা বোঝাল, ব্যাটিংয়ে দুর্বলতা শুধু বাংলাদেশেরই নয়। মাত্র ৭৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা – তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেই সর্বনিম্ন! বাংলাদেশ সেদিন ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে মাত্র ১২২ রান করেছে, শ্রীলঙ্কাকে দেখে শান্ত-লিটনদের হতাশা কিছুটা কমতে পারে!
পিচটা একেবারে ব্যাটিংসহায়ক নয় বলে দক্ষিণ আফ্রিকার সহজ জয়ের ব্যাপারে অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাচ্ছে না, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বড় ব্যবধানে জিতলে বাংলাদেশের জন্য একটু আশার বাণী থাকে বটে! বড় ব্যবধানে হারলে যে শ্রীলঙ্কা রানরেটে বেশ পিছিয়ে যাবে, আর গ্রুপ পর্ব থেকে সুপার এইটে ওঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিন্তা যে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তত কোনো একটিকে হারানো নিয়ে (নেদারল্যান্ডস আর নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে ধরে নিয়ে আর কী)!
চতুর্থ ওভারে ওটনিল বার্টম্যান এসেই নিজের প্রথম বলে ফিরিয়ে দিলেন পাথুম নিশাঙ্কাকে – দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে বিশ্বকাপে প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার বনে গেলেন বার্টম্যান। এরপর কামিন্দু মেন্ডিস আর কুশল মেন্ডিস মিলে টুকটুক করে হলেও কিছু রান তো করছিলেন। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান দাঁড়াল ২৪/১।
কিন্তু অষ্টম ওভারে নর্কিয়া এসে কামিন্দুকে (১৫ বলে ১১) ফেরানোর পর থেকে যে ধস নামল, শ্রীলঙ্কা আর পিঠ সোজা করে দাঁড়াতেই পারল না! পরের ওভারে মহারাজের বলে দেখা মিলল ‘জোড়া হাঁসে’র – পরপর দুই বলে মহারাজ ফেরালেন হাসারাঙ্গা আর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে। এর মধ্যে এমন পিচে চারে নামা হাসারাঙ্গা এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পড (২ বলে ০), সাদিরা হলেন বোল্ড (১ বলে ০)। চোখের পলকে ১ রানে শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেট নেই!
কিন্তু নর্কিয়া তো তখনো মাত্র গা গরম করেছেন! দশম ওভারের শেষ বলে তিনি আউট করে দিলেন কুশল মেন্ডিসকে, শ্রীলঙ্কার ততক্ষণে কাঁপাকাঁপি শুরু! ৪০ রানেই যে ৫ উইকেট নেই! ১০ ওভারে ৪০ রান – এটাও রেকর্ড শ্রীলঙ্কার, টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসের অর্ধেকে এর চেয়ে কম রান তারা আর করেনি।
এতটাই ধুঁকেছে শ্রীলঙ্কা যে, প্রথম দশ ওভারে মাত্র দুটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছে তারা, এর মধ্যে একটি আবার ব্যাটের কানায় লেগে!
চারিথ আসালঙ্কাও এলেন আর গেলেন, নর্কিয়ার গোলার শিকার তিনিও। তখনো শ্রীলঙ্কার দলীয় স্কোর ৫০ ছুঁতেও ৫ রান বাকি!
মাঝে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (১৬ বলে ২ ছক্কায় ১৬) আর দাসুন শানাকা (১০ বলে ১ ছক্কায় ৯) কিছুটা ঝলক দেখিয়েছিলেন। এমনই যে, পুরো ইনিংসে সব মিলিয়ে তিনটি চার মারা শ্রীলঙ্কা দুজনের সৌজন্যে ৯ বলের মধ্যেই ৩টা ছক্কা দেখে ফেলল! কিন্তু অতটুকুই!
১৫তম ওভারে শানাকা বোল্ড হয়ে গেলেন রাবাদার স্টাম্পের বলে অতিআগ্রাসী হতে গিয়ে লাইন মিস করে। ম্যাথুস এর ছয় বল পর নর্কিয়ার চতুর্থ শিকার হয়ে ফিরলেন। শ্রীলঙ্কার রান তখনো ৭০। তিকসানার সৌজন্যে এরপর আর ৭টা রান পেল আর কী!
নর্কিয়া এবারের আইপিএলে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ১৩.৩৬ করে, সেই নর্কিয়াই আজ গতিতে-বাউন্সে বেসামাল করে দিয়েছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। ৭ রানে ৪ উইকেট তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। এর আগের সেরা ছিল আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, বাংলাদেশের বিপক্ষে (৪/১০)।