আজ পহেলা আষাঢ়
- আপডেট সময় : ১১:৩৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
- / ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে
এসো নীপ বনে ছায়া বীথি তলে এসো করো স্নান নব ধারা জলে’। আজ পহেলা আষাঢ়, বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। বৃষ্টির বারতা আর মেঘের ঘনঘটা নিয়ে এবছর বর্ষা ঋতুর আগমন ঘটছে।
ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে বর্ষা ঋতু। আজ ভোর থেকেই আকশে মেঘের ঘনঘটা জানান দিচ্ছে বর্ষার আগমনী বার্তা। গ্রীষ্মের দাবদাহে জীর্ণ, তপ্ত পৃথিবীতে বর্ষা নিয়ে আসে শান্তির ছোঁয়া। দোলনচাঁপা, কদম, মালতী আর কেতকীর সুবাস বাতাস। বাংলা সাহিত্যে বর্ষা কখনো প্রেমের ঋতু, আবার কখনো বা বিরহের।
বর্ষাকালে চলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। তাই চারপাশের পরিবেশ রূপ নেয় চিরসবুজের আভরণে। কদম, বেলি, বকুল, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির পানি গায়ে নিয়ে আনন্দে নেচে ওঠে তারা।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি, পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি।
গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রিমঝিম বৃষ্টি, কখনো বা মুষলধারে ভারী বর্ষণও হবে। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষা ঋতু কাব্যময়, প্রেমময়।
নানান কারণে বর্ষাকাল গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ঋতুবৈচিত্র্যের মাঝে বর্ষাকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করা যায়। গুরুজনদের মতে, মানুষের মনের আবেগ প্রকাশের জন্য অন্যতম সময় বর্ষাকাল। এছাড়াও যুগে যুগে কবিরা বর্ষাকে প্রেম-বিরহ ও সৃজনক্রিয়ার ঋতু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গাছ, গাছের পাতা, ফুল সবকিছু যেন নতুন করে জীবিত হয়ে ওঠে এই সময়ে। প্রকৃতি সেজে ওঠে নতুন সাজে। এমন মনোরম পরিবেশে মানুষের মনে বয়ে আসে নতুন প্রেম। বর্ষার বৃষ্টিতে আবেগ প্রকাশ করতে পছন্দ করে মানুষ। তাই এই বর্ষাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক প্রেম এবং বিরহের কবিতা। কবিদের ভাষ্যে মানুষের জীবনে প্রেম আসে বিরহ নিয়েই। আর বর্ষা মাঝে মাঝে প্রেমে নিয়ে আসে বিরহ। এই কারণেই বর্ষাকে বিরহের কাল বলা হয়ে থাকে।
আকাশে থাকা ঘন মেঘের ঘনঘটা, বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টি, নদীতে উপচে পড়া জল সব মিলে কারো মনে জাগিয়ে তোলে নতুন সুখের অনুভূতি, আবার কারো মনে দুঃখের। অনেক সময় বাদলের ধারায় বেদনার্ত হয়ে ওঠে মন এবং ঝরে বেদনাশ্রু।
তবে বর্ষায় পুরো দেশের প্রকৃতি সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। এছাড়াও বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস মেলে চারিদিকে। সেইসাথে উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোঁটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। বর্ষা আনন্দের হলেও অনেক সময় বিষাদেও রূপ নিয়ে থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টি অনেক সময় জনজীবনকে বিষাদময় করে তোলে।
তবুও বলা যায় বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আহ্বান। বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিল জলে টইটুম্বুর হয়ে যায়। এমনকি মরা নদীতে জোয়ার আসে। বিলের জলে দেখা যায় শাপলার হাসি।
বর্ষার এই সময়ে নৌকায় চড়ে খাল-বিল পেরিয়ে বহুদূর চলে যাওয়া যায়। ঢেউয়ের তালে তালে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নেচে ওঠে মন। কখনও হঠাৎ আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। আকাশ ছাপিয়ে বৃষ্টির ধারা নেমে আসে। একই সঙ্গে সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলীর আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। ফলে বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি। অপরদিকে মধ্যযুগে চণ্ডীদাসের কিছু কবিতায় বলা হয়েছে বর্ষা এসেছে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের ইন্ধন হিসেবে। সেই সময়ে কবিরা বর্ষাকে অভিসার ও বিরহ পর্বে ‘প্রেমের আগুনে ঘিয়ের ছিটা হিসেবে কল্পনা করেছেন।
বর্ষা একেকজনের কাছে একেক রকম। কখনো কোমল, কখনো বিদ্রোহী, কখনো কাম-বাসনার আকড়, কখনো আনন্দদায়িনী। বর্ষা হাসাতে পারে, কাঁদাতে পারে। বর্ষা ভাবায়, বর্ষা ভালোবাসায়। বর্ষা আসে, ভিজিয়ে রেখে যায় আমাদের। সেই সাথে রেখে যায় অসংখ্যক স্মৃতি এবং অনুভূতি। এরই সাথে আমরা আশায় থাকি, বর্ষার ধারায় শুদ্ধ হবে মানবমন।