০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আস্থা ও নির্ভরতার অপর নাম বাবা

জীবনের প্রতিটি সন্তানের পাশে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো যিনি থাকেন তিনি হলেন বাবা। যেকোনো সংকটে, সব চাওয়া-পাওয়া ও আবদারের একমাত্র ঠিকানা বাবা। আস্থা ও নির্ভরতার অপর নাম বাবা। বাবার কাছেই পৃথিবীর ভালো-মন্দ শেখা।

সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন বাবা। সন্তান যেমনই হোক বাবার কাছে সন্তান সব সময় ভালোবাসার। বাবা ডাক যেমন মধুর তেমনি আবেগের। বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বাবা দিবসের।

পৃথিবীর সব বাবাদের ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে ১৯০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাবা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশটির ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই দিবসটি পালিত হয়। পরে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। এরপর থেকে আজকের এই দিনে সারাবিশ্ব বাবা দিবস উদযাপন করা হয়।

সন্তানের জন্য নির্ঘুম রাত পার করেনি এমন বাবা পাওয়া যাবে না। বাবা মানেই আদর আর ভালোবাসায় সিক্ত প্রাণ। বাবা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নির্ভরতা আর সাহস। আমর সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। এমনটাই চাওয়া হয় সব বাবার।

দুই মেয়ের কাছে তেমন বাবা ইদ্রিস আলম নামের একজন। জীবনে শত বাধা পার করেছেন শক্ত হাতে। ঝড় আসতে দেননি সন্তানদের উপর। কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা নন বরং মেয়েদের গড়ে তুলেছেন সফল নারী হিসেবে। এক মেয়ে তাসফিয়া তামান্না। কাজ করছেন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদকর্মী হিসেবে। আর ২য় সন্তান তানহা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেক চড়াই উতরাই পেরুতে হয়েছে। এখন সবাই আমাকে বলে ‘আপনি’ একজন সফল বাবা। আমি আমার সন্তানদের কখনো হাতছাড়া করতে চাই না। মেয়েরা একটা বাবার জন্য অনেক কিছু।’

সংবাদকর্মী কন্যা তাসফিয়া তামান্না বলেন, ‘বাবাকে যখন আমার কোনো কাজের জন্য হাসতে দেখি, তখন খুব শান্তি অনুভব করি। এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া। আসলে বাবাকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস লাগে না, প্রতিটি দিনই বাবা দিবস। কারণ বাবাকে ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না।’

বাবার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। বাবা মানেই নিত্য নতুন আবদার, নতুন জামা, জুতা আর ঈদ সালামি। বাবা মানেই দিন শেষে ফোন কল। আলাপটা দূরবর্তী হলেও হওয়া চাই-ই চাই। কারণ বাবারা কখনো ক্লান্ত হোন না।

বাবার কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনে পানি ব্যাংক কর্মকর্তা জহিরের। বাবা নেই এই কষ্টের কাছে হার মেনেছে সব কষ্ট। এ এক অদ্ভূত সম্পর্কের বাঁধন। এখন তিনি নিজেও একজন বাবা।

তিনি বলেন, ‘ যখন বাবা থাকে না তখনই তার অভাবটা বুঝা যায়। যেমন বাবার কথা এখন মনে করছি তাই চোখে পানি চলে আসতেছে। এখন আমার মেয়ের আনন্দ দেখেও চোখে পানি চলে আসে।’

সময় করে সন্তানকে নিয়ে হাঁটা। এক সাথে খেলা। নানা খুনসুঁটি। একজন সন্তানের কাছে এর চেয়ে দামি সময় আর কী হতে পারে! তবে এই ব্যস্ত শহরে সেই সময় হয়ে উঠে না অনেক বাবা’র। তবুও বাবা সন্তানের হাত ধরে এই পৃথিবীর সঙ্গে সন্তানের পরিচয় করিয়ে দেয়।

স্বল্প আয়ে জীবন চলছে রিকশা চালক আলাউদ্দিন খোকনের। তবু কষ্ট দিতে চান না সন্তানকে, পড়াচ্ছেন স্কুলে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কন্যা শিশুর বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে দ্বিধা নেই তার। সময় পেলেই কথা বলেন ছেলে-মেয়ের সাথে।

রিকশা চালক বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েটা প্রতিবন্ধী। যখন যা পারি সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে দেই। আমি জন্ম দিছি তাই ফালাবো কেমনে।’

বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে শুরু হয় বাবা দিবস উদযাপন। বাবা’র প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের হয়তো দিন লাগে না ঠিকই। তবু যাদের ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়ে উঠে না, তাদের বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হোক আজকের দিনটি।

বিশেষ এই দিনটিতে দেশে দেশে নানারকম আয়োজন করা হয় বাবাদের নিয়ে।

আস্থা ও নির্ভরতার অপর নাম বাবা

আপডেট : ১২:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, রোববার, ১৬ জুন ২০২৪

জীবনের প্রতিটি সন্তানের পাশে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো যিনি থাকেন তিনি হলেন বাবা। যেকোনো সংকটে, সব চাওয়া-পাওয়া ও আবদারের একমাত্র ঠিকানা বাবা। আস্থা ও নির্ভরতার অপর নাম বাবা। বাবার কাছেই পৃথিবীর ভালো-মন্দ শেখা।

সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন বাবা। সন্তান যেমনই হোক বাবার কাছে সন্তান সব সময় ভালোবাসার। বাবা ডাক যেমন মধুর তেমনি আবেগের। বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বাবা দিবসের।

পৃথিবীর সব বাবাদের ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে ১৯০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাবা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশটির ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই দিবসটি পালিত হয়। পরে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। এরপর থেকে আজকের এই দিনে সারাবিশ্ব বাবা দিবস উদযাপন করা হয়।

সন্তানের জন্য নির্ঘুম রাত পার করেনি এমন বাবা পাওয়া যাবে না। বাবা মানেই আদর আর ভালোবাসায় সিক্ত প্রাণ। বাবা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নির্ভরতা আর সাহস। আমর সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। এমনটাই চাওয়া হয় সব বাবার।

দুই মেয়ের কাছে তেমন বাবা ইদ্রিস আলম নামের একজন। জীবনে শত বাধা পার করেছেন শক্ত হাতে। ঝড় আসতে দেননি সন্তানদের উপর। কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা নন বরং মেয়েদের গড়ে তুলেছেন সফল নারী হিসেবে। এক মেয়ে তাসফিয়া তামান্না। কাজ করছেন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদকর্মী হিসেবে। আর ২য় সন্তান তানহা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেক চড়াই উতরাই পেরুতে হয়েছে। এখন সবাই আমাকে বলে ‘আপনি’ একজন সফল বাবা। আমি আমার সন্তানদের কখনো হাতছাড়া করতে চাই না। মেয়েরা একটা বাবার জন্য অনেক কিছু।’

সংবাদকর্মী কন্যা তাসফিয়া তামান্না বলেন, ‘বাবাকে যখন আমার কোনো কাজের জন্য হাসতে দেখি, তখন খুব শান্তি অনুভব করি। এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া। আসলে বাবাকে ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস লাগে না, প্রতিটি দিনই বাবা দিবস। কারণ বাবাকে ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না।’

বাবার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। বাবা মানেই নিত্য নতুন আবদার, নতুন জামা, জুতা আর ঈদ সালামি। বাবা মানেই দিন শেষে ফোন কল। আলাপটা দূরবর্তী হলেও হওয়া চাই-ই চাই। কারণ বাবারা কখনো ক্লান্ত হোন না।

বাবার কথা বলতে গিয়ে চোখের কোনে পানি ব্যাংক কর্মকর্তা জহিরের। বাবা নেই এই কষ্টের কাছে হার মেনেছে সব কষ্ট। এ এক অদ্ভূত সম্পর্কের বাঁধন। এখন তিনি নিজেও একজন বাবা।

তিনি বলেন, ‘ যখন বাবা থাকে না তখনই তার অভাবটা বুঝা যায়। যেমন বাবার কথা এখন মনে করছি তাই চোখে পানি চলে আসতেছে। এখন আমার মেয়ের আনন্দ দেখেও চোখে পানি চলে আসে।’

সময় করে সন্তানকে নিয়ে হাঁটা। এক সাথে খেলা। নানা খুনসুঁটি। একজন সন্তানের কাছে এর চেয়ে দামি সময় আর কী হতে পারে! তবে এই ব্যস্ত শহরে সেই সময় হয়ে উঠে না অনেক বাবা’র। তবুও বাবা সন্তানের হাত ধরে এই পৃথিবীর সঙ্গে সন্তানের পরিচয় করিয়ে দেয়।

স্বল্প আয়ে জীবন চলছে রিকশা চালক আলাউদ্দিন খোকনের। তবু কষ্ট দিতে চান না সন্তানকে, পড়াচ্ছেন স্কুলে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কন্যা শিশুর বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে দ্বিধা নেই তার। সময় পেলেই কথা বলেন ছেলে-মেয়ের সাথে।

রিকশা চালক বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েটা প্রতিবন্ধী। যখন যা পারি সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে দেই। আমি জন্ম দিছি তাই ফালাবো কেমনে।’

বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে শুরু হয় বাবা দিবস উদযাপন। বাবা’র প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের হয়তো দিন লাগে না ঠিকই। তবু যাদের ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়ে উঠে না, তাদের বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হোক আজকের দিনটি।

বিশেষ এই দিনটিতে দেশে দেশে নানারকম আয়োজন করা হয় বাবাদের নিয়ে।