ত্যাগের শিক্ষায় উদযাপিত হচ্ছে ঈদ-উল আযহা
- আপডেট সময় : ১২:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে
আজ পবিত্র ঈদুল আজহা বা ত্যাগের উৎসব। মুসলিমদের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ ঈদ যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি ত্যাগের। সামর্থ্যবান মুসলমানরা পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। এর মাধ্যমে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার মূল মর্মবাণী।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এর ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোরবানি ইবাদতের মর্যাদা লাভ করেছে। আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে পরীক্ষা করার জন্য স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে বললেন, তখন কোনো সংশয় তথা বিনা প্রশ্নে নিজ স্নেহাস্পদ সন্তানকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু আল্লাহর আদেশে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। তারপর থেকে পশু কোরবানির রেওয়াজ চালু হয়। মানবজাতিকে একনিষ্ঠ শিক্ষা দেয়াই হলো এর মর্মার্থ।
ত্যাগের এই উৎসবে পশুরহাটে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু কেনায় আনন্দ পান মুসল্লিরা। সামর্থ্যবানরা কোরবানির পশু কিনেছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই শহর থেকে হাজারো ভোগান্তি পেরিয়ে গেছেন গ্রামের শিকড়ের কাছে।
ঈদ মানেই আনন্দ। এ আনন্দ ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে সার্বজনীন করার বার্তা দিয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। আর ঈদুল আজহা মানেই ত্যাগের উৎসর্গ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পশু কোরবানি করে তার মনের পরিশুদ্ধিতা অর্জন করবেন।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছি, যাতে তারা ওই পশুদের জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। আর তোমাদের প্রতিপালক তো এক আল্লাহই, তোমরা তারই অনুগত হও। (সুরা হজ : ৩৪)
কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, পশু কোরবানি মানুষের মনে আত্মত্যাগের শিক্ষাকে প্রোথিত করে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে। এটা শুধু উৎসব না, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার একটি মেলবন্ধন। এটি সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যকে এক কাতারে নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, বর্তমান সমাজে অস্থিরতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে মুক্তির দিশারী হতে পারে পশু কোরবানি। অনেক শিক্ষা দিতে পারে। ঈদের দিন একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। এই শিক্ষা যদি সারা বছর জাগ্রত রাখতে পারি তবেই মানবতা মুক্তি মিলবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ভ্রাতৃত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য গড়া শিক্ষা হতে পারে ঈদে পশু কোরবানি।
ঈদগাহে জামাত আদায়ের মধ্যদিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের সব ইদগাহে প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সকাল সকাল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদগাহে নামাজ আদায় করে পশু কোরবানি করবেন।
ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ত্যাগের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরাও ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে।
কোরবানির রীতি অনুযায়ী, ঈদের দিন ছাড়াও পরের দু’দিনও পশু কোরবানি করার সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে বুধবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি করা ফরজ। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ বিলিয়ে দিতে হয় গরিব-মিসকিনকে। আত্মীয়দের দিতে হবে এক ভাগ।
ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এ ছাড়া, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ রাজধানীতে ১৮৪টি ঈদগাহ ও প্রায় দেড় হাজার মসজিদে ঈদের নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। এবার ১৯৭তম ঈদের জামাত হবে এ ঈদগাহে। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে। ঈদের জামাতের সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।