ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বন্যা-জলাবদ্ধতায় সিলেটের ঈদ আনন্দে বিষাদ

সিলেট প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
  • / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঈদুল আজহা অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসলেও তার ছোঁয়া লাগেনি সিলেটের বানবাসীদের গায়ে। জলাবদ্ধতা ও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেটের লাখো মানুষ।

২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হলো পর্যটন নগরী সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের প্লাবিত হয়েছে এ অঞ্চল।

রোববার (১৬ জুন) রাতে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে আজ (সোমবার, ১৭ জুন) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। সঙ্গে নামছে উজানের ঢল। ফলে সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়েছে।

এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোয় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া শাহী ঈদগাহে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন পাঁচশোরও কম।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোরুজ্জামান চৌধুরী সকালে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর জানান, কষ্ট হলেও ঈদের প্রধান জামাতের নামাজে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি; কোরবানির পর চামড়া সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৎপর আছে সিসিক।

এদিকে বাসবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কোরবানিদাতারা বেশ বিপাকে পড়েছেন। অনেকে কোরবানির পশু দুতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কোরবানি দিতে পারবেন না বলে জানান তারা। কেউ কেউ বলছেন দু-একদিন পরে কোরবানি দিতে হতে পারে।

সকালে সিলেট মহানগর ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় কোমর পর্যন্ত পানি। এছাড়া শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি উঠেছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষজন। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসায় সড়কগুলোতে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন লোক বন্যায় আক্রান্ত। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম রোববার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত খোলা হয়েছে। শনিবার থেকে এসব কেন্দ্রে মানুষজন আসতে শুরু করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ঈদের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বন্যা-জলাবদ্ধতায় সিলেটের ঈদ আনন্দে বিষাদ

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪

ঈদুল আজহা অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসলেও তার ছোঁয়া লাগেনি সিলেটের বানবাসীদের গায়ে। জলাবদ্ধতা ও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেটের লাখো মানুষ।

২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হলো পর্যটন নগরী সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের প্লাবিত হয়েছে এ অঞ্চল।

রোববার (১৬ জুন) রাতে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে আজ (সোমবার, ১৭ জুন) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। সঙ্গে নামছে উজানের ঢল। ফলে সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়েছে।

এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোয় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া শাহী ঈদগাহে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন পাঁচশোরও কম।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোরুজ্জামান চৌধুরী সকালে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর জানান, কষ্ট হলেও ঈদের প্রধান জামাতের নামাজে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি; কোরবানির পর চামড়া সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৎপর আছে সিসিক।

এদিকে বাসবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কোরবানিদাতারা বেশ বিপাকে পড়েছেন। অনেকে কোরবানির পশু দুতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কোরবানি দিতে পারবেন না বলে জানান তারা। কেউ কেউ বলছেন দু-একদিন পরে কোরবানি দিতে হতে পারে।

সকালে সিলেট মহানগর ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় কোমর পর্যন্ত পানি। এছাড়া শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি উঠেছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষজন। বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে আসায় সড়কগুলোতে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন লোক বন্যায় আক্রান্ত। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম রোববার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত খোলা হয়েছে। শনিবার থেকে এসব কেন্দ্রে মানুষজন আসতে শুরু করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ঈদের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।