সংঘাতে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের অর্থনীতি
- আপডেট সময় : ০২:০৩:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪
- / ৩৮১ বার পড়া হয়েছে
জান্তা সরকার আর সেনাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সংঘাতে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের অর্থনীতি। ৬ বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশটিতে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে দারিদ্র্য। কমছে প্রবৃদ্ধি, বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, কৃষি সরঞ্জামের অভাব আর চড়া দামে চালের উৎপাদন চলতি বছর কমে যাবে ৫০ শতাংশ। যুদ্ধের মধ্যে জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে রাখাইন রাজ্যে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
গেলো ৭ মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সেনাবিরোধী অভিযান। রাখাইনের উত্তরাঞ্চল দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই অঞ্চলের সাড়ে ৮ লাখ আবাদযোগ্য কৃষিজমির মধ্যে বেশিরভাগই উত্তরে অবস্থিত হওয়ায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পাশাপাশি গেলো নভেম্বর থেকে রাস্তাঘাট ও সমুদ্রপথ বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে সার, জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জাম সংকট। বাজারে কৃষি সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে চড়ামূল্যে।
যে কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ কমছে চালের উৎপাদন। রাখাইনের কৃষক ইউনিয়ন বলছে, চলতি বছর মাত্র ৫ লাখ একর জমিতে চালের আবাদ করতে পারবেন তারা। এরমধ্যে অতিবৃষ্টির মতো বৈরি আবহাওয়াও প্রভাব ফেলতে পারে চালের উৎপাদনে। এতে করে হুমকিতে পড়তে পারে এই রাজ্যের ৩০ লাখ মানুষের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা।
রাখাইনের রাজ্য কৃষক ইউনিয়ন বলছে, যুদ্ধকবলিত এই রাখাইন রাজ্যের ১০ লাখ একরের বেশি কৃষি জমিতে উৎপাদিত হতো ১৬ লাখ টন চাল। সাধারণ সময়ে বর্ষাকালে চাল উৎপাদনে কৃষকদের ঋণ দেয় কৃষি ব্যাংক। কিন্তু চলমান সংঘাতে বেশিরভাগ কৃষকই ঋণ পাচ্ছে না।
জাতিসংঘ বলছে, আরাকান আর্মি আর জান্তা সেনাবাহিনী, দুই পক্ষই ব্যর্থ হয়েছে রাখাইনের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে। বাসিন্দাদের বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত মংডু শহর দ্রুত ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে আরাকান আর্মি। বিপাকে পড়ে গেছে সেখানে বসবাস করা রোহিঙ্গারা। যুদ্ধের কারণে সেখানে আটকা পড়েছে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মংডুর পর আরাকান আর্মির লক্ষ্য রাজধানী সিতওয়ে। এখন পর্যন্ত রাখাইনের ৫ জেলার মধ্যে ৪ জেলার অনেক শহর দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। মংডু আর থাডওয়ে শহরে চলছে তুমুল লড়াই।
দেশটিতে বেকারত্ব, দারিদ্র্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। মিয়ানমারে ১২ হাজার কিয়াত থেকে চলতি বছর ডিজেলের দর পৌঁছেছে ৪০ হাজার কিয়াতে। সারের দর এক প্যাকেট ১ লাখ কিয়াত থেকে পৌঁছেছে ৩ লাখ কিয়াতে। বিদ্যুৎ স্বল্পতা, শ্রমিক সংকট, মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা। এরমধ্যেই জান্তা সরকার প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালেই দেশটিতে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন।