০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে হিটস্ট্রোকে ১৫ জনের মৃত্যু, সতর্কতা জারি

গত ৭২ ঘণ্টায় ভারতের দিল্লি ও নয়ডায় হিটস্ট্রোকে ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে দিল্লিতে ৫ ও নয়ডায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, এমন তাপপ্রবাহের অবস্থা বেশ কয়েকদিন জারি থাকবে দিল্লিতে। এ অবস্থায় প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল এবং বয়স্ক নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

দিল্লির সরকারি রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অজয় শুক্লা ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের শিকার হয়ে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো এবং তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন এবং ১২ জন লাইফ সাপোর্টে আছেন।

জানা গেছে, হিটস্ট্রোকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল ও রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে দুজন করে এবং লোক নায়ক হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, যারা প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থদের ভর্তি করা হচ্ছে আইসিইউতে। হাসপাতালে মোট চারজন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তার মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

মূলত যাদের উচ্চচাপ বেশি এবং বয়স্ক অথবা ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, সেই ধরনের রোগীরাই গরমে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হিটস্ট্রোকের যে সমস্ত লক্ষণগুলো দেখা দিচ্ছে, সেগুলো হলো- প্রচুর ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, পেশিতে দুর্বলতা, বমি বমি ভাব প্রভৃতি। সাধারণত গরমে ক্লান্তিতে অসুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে এক থেকে দুদিন।

চলতি গ্রীষ্মে দিল্লির বাসিন্দারা প্রায় একমাস ধরে অবিরাম তাপপ্রবাহের মধ্যে ভুগছেন। শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে, যা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক ডিগ্রি বেশি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। কলের পানি গরম থাকছে, এমনকি এয়ার কন্ডিশনও ঠিক মতো কাজ করছে না।

আবহাওয়া অফিস তার পূর্বাভাসে বলেছে, উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং এরপর কমতে পারে। রাতের বেলায়ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বিরাজ করছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় দিল্লির বাসিন্দাদের অস্বস্তি সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) বিজ্ঞানী রজনীশ সরিন বলেন, রাজধানীকে ইট ও কংক্রিটের স্থাপনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কংক্রিটের দালানগুলো দিনে তাপ শোষণ করে এবং রাতে তা ছেড়ে দেয়। এই কারণেই বড় শহরগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, আগে গরমের সময় রাতের বেলায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিল্লিতে নির্মাণ কাজ বাড়ছে এবং সবুজ এলাকা কমে যাচ্ছে। উঁচু ভবন নির্মাণ বাতাস চলাচলেও প্রভাব ফেলছে। কংক্রিট ব্যবহার কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

এদিকে, দীর্ঘমেয়াদি তাপদাহের কারণে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলতি সপ্তাহে বিদ্যুৎ চাহিদা রেকর্ড ৮ হাজার ৬৪৭ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিল্লি এবং উত্তর ভারতের অন্যান্য এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

এসির মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের ওপর চাপ বেড়েছে। যার ফলে দিল্লিতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার উত্তর ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবহার ৮৯ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছায়। সোমবার দিল্লি বিমানবন্দর বেশ কয়েক মিনিট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো।

এছাড়া তীব্র পানির সংকটে ভুগছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষ বালতি হাতে পানির ট্রাকের সামনে ভিড় জমাচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর ভারতে চলমান তাপপ্রবাহ আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। মার্চ মাসে গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার পর থেকে তাপজনিত অসুস্থতায় ভারতে কয়েক ডজন লোক মারা গেছে।

ভারতে গত কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। সোমবার দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬.৪ ডিগ্রি বেশি। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

প্রতিপক্ষ ইসরায়েল, ম্যাচ বয়কট করলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়

ভারতে হিটস্ট্রোকে ১৫ জনের মৃত্যু, সতর্কতা জারি

আপডেট : ০৬:৫৮:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

গত ৭২ ঘণ্টায় ভারতের দিল্লি ও নয়ডায় হিটস্ট্রোকে ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে দিল্লিতে ৫ ও নয়ডায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, এমন তাপপ্রবাহের অবস্থা বেশ কয়েকদিন জারি থাকবে দিল্লিতে। এ অবস্থায় প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল এবং বয়স্ক নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

দিল্লির সরকারি রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অজয় শুক্লা ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোকের শিকার হয়ে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো এবং তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন এবং ১২ জন লাইফ সাপোর্টে আছেন।

জানা গেছে, হিটস্ট্রোকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল ও রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে দুজন করে এবং লোক নায়ক হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, যারা প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থদের ভর্তি করা হচ্ছে আইসিইউতে। হাসপাতালে মোট চারজন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তার মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

মূলত যাদের উচ্চচাপ বেশি এবং বয়স্ক অথবা ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, সেই ধরনের রোগীরাই গরমে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হিটস্ট্রোকের যে সমস্ত লক্ষণগুলো দেখা দিচ্ছে, সেগুলো হলো- প্রচুর ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, পেশিতে দুর্বলতা, বমি বমি ভাব প্রভৃতি। সাধারণত গরমে ক্লান্তিতে অসুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে এক থেকে দুদিন।

চলতি গ্রীষ্মে দিল্লির বাসিন্দারা প্রায় একমাস ধরে অবিরাম তাপপ্রবাহের মধ্যে ভুগছেন। শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে, যা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক ডিগ্রি বেশি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। কলের পানি গরম থাকছে, এমনকি এয়ার কন্ডিশনও ঠিক মতো কাজ করছে না।

আবহাওয়া অফিস তার পূর্বাভাসে বলেছে, উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং এরপর কমতে পারে। রাতের বেলায়ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বিরাজ করছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় দিল্লির বাসিন্দাদের অস্বস্তি সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) বিজ্ঞানী রজনীশ সরিন বলেন, রাজধানীকে ইট ও কংক্রিটের স্থাপনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কংক্রিটের দালানগুলো দিনে তাপ শোষণ করে এবং রাতে তা ছেড়ে দেয়। এই কারণেই বড় শহরগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, আগে গরমের সময় রাতের বেলায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। দিল্লিতে নির্মাণ কাজ বাড়ছে এবং সবুজ এলাকা কমে যাচ্ছে। উঁচু ভবন নির্মাণ বাতাস চলাচলেও প্রভাব ফেলছে। কংক্রিট ব্যবহার কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

এদিকে, দীর্ঘমেয়াদি তাপদাহের কারণে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলতি সপ্তাহে বিদ্যুৎ চাহিদা রেকর্ড ৮ হাজার ৬৪৭ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিল্লি এবং উত্তর ভারতের অন্যান্য এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

এসির মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের ওপর চাপ বেড়েছে। যার ফলে দিল্লিতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার উত্তর ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবহার ৮৯ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছায়। সোমবার দিল্লি বিমানবন্দর বেশ কয়েক মিনিট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো।

এছাড়া তীব্র পানির সংকটে ভুগছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষ বালতি হাতে পানির ট্রাকের সামনে ভিড় জমাচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর ভারতে চলমান তাপপ্রবাহ আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। মার্চ মাসে গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার পর থেকে তাপজনিত অসুস্থতায় ভারতে কয়েক ডজন লোক মারা গেছে।

ভারতে গত কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। সোমবার দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬.৪ ডিগ্রি বেশি। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।