উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার শঙ্কা: পাউবো
- আপডেট সময় : ০২:৩১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
- / ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সেইসঙ্গে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার শঙ্কার কথাও জানিয়েছে পাউবো। কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত গুরুতর বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি কিছুটা কম।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জানান, ‘সিলেটে অতি ভারি বর্ষণের কারণে নদীর পানির বেড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছিল। এর ফলে মৌসুমি বন্যা লক্ষ্য করেছি। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনে তা উন্নতির দিকে যেতে পারে।’
উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপাতত আগামী দুইদিন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীসহ আশপাশের এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি রয়েছে। তবে এটা পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এছাড়া প্রধান নদীগুলো যেমন ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। ফলে এসব নদীর পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে বলে জানান তিনি। বর্তমানে ৫ জেলার ৭টি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তলিয়েছে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল। অব্যাহতভাবে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি দুইটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কমেছে দুধকুমার নদের পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর শিমুল বাড়ি পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
পানিতে তলিয়েছে রৌমারীর জিঞ্জিরাম, কালোর ও ধরনী নদীর অববাহিকার কয়েকটি গ্রাম। পানি প্রবেশ করায় রৌমারী স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সদর, যাদুরচর ও চর শৌলমারী ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে এবং নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়নের বেশকিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। জেলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে।
ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসল। যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি, লালকুড়া, শ্রীফলগাতি; সদর ইউনিয়নের মাদারটিলা, নতুন চুলিয়ারচরসহ তিন ইউনিয়নের কয়েকশ’ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিস ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
আমাদের লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজানসহ অন্যসব নদ-নদীর পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। বৃহস্পতিবার (২০শে জুন) সকালে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।
তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, ফকিরপাড়া, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী কয়েক দিনে পানি আরও বাড়তে পারে।
আমাদের নেত্রকোণা প্রতিনিধি জানিয়েছে, নেত্রকোণায় পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ক্রমাগত বাড়ছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে বন্যার আশংকা করছেন প্রশাসনসহ এলাকাবাসী। গত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলোর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি কলামাকান্দায় বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
এছাড়া জেলার ধনু-কংশ-সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠতে শুরু করেছ। এছাড়া গ্রামীণ সড়কে পানি উঠায় চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বসত ঘরে পানি উঠবে। সুপেয় পানি ও খাবার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নেই পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে সদর, বড়খাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ও কৈলাটি, রংছাতি ও খারনৈসহ বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুকনো খাবার, আশ্রয় কেন্দ্র, উদ্ধারকারী দল, মেডিকেল টীমসহ সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান।
এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মদন মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর লোকালয়ে উজানের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।