পানিতে ভাসছে সিলেটের সাড়ে ৯ লাখ মানুষ
- আপডেট সময় : ১২:১৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
- / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের ১৩ উপজেলার সবগুলোই এখন বন্যা কবলিত। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট নগর এবং জেলার সব উপজেলাই কমবেশি পানিতে ডুবে রয়েছে। জেলাজুড়ে পানিবন্দী প্রায় নয় লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির তেমন কোন খবর মিলছে না। আগামী কযেকদিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।
সবচেয়ে বেশি প্লাবিত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা। গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় এসব উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগও এখন বিচ্ছিন্ন। তলিয়েছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গরু-মহিষ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকেই। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন দরিদ্রদের একটি বড় অংশ।
চারপাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি। মাঝখানে ছোট্ট একটা দ্বীপের মতো বালুর ঢিবি। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় এখানে পলিথিন বা চাটাইয়ের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে ২০টি পরিবার। ৪০ জন মানুষের সঙ্গে একই ছাদের নিচে আশ্রয় পেয়েছে গৃহপালিত প্রাণীরাও।
সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, যতরপুর, সোবাহনীঘাট, মেন্দিবাগ ও উপশহর এলাকায় কোথাও-কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। পানিবন্দি এলাকার মানুষজন কেউ যাচ্ছেন ভ্যান করে, কেউবা রিকশায়। বিশেষ করে উপশহরের বাসিন্দাদের নৌকা ও ভ্যানে করে চলাচল করতে হচ্ছে।
বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে এবং রাস্তা ঘাট ডুবে নগরী, জেলা ও উপজেলা শহরের বাসিন্দাদের মতো গ্রামবাসীদের ভোগান্তি উঠেছে চরমে। দৈনন্দিন কাজও বন্ধ প্রায়। বন্যার পানির তোড়ে টিকতে না পেরে অনেকে নিরূপায় হয়ে ছুটছেন এখন আশ্রয়কেন্দ্রে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আদর্শ গ্রামে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের বসবাস। ঈদের আগের দিন থেকে হঠাৎই উজানের ঢলে নেমে আসে দুর্যোগ। পানির নিচে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ঈদ উদযাপন নয়, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাঁরা।
২০২২ সালের বানের তোড়ে ভেঙে যায়, জুলিকা বিবির ঘর। ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধার ঘর এবারের বন্যায়ও ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে। ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঠালবাড়ি গ্রামে নৌকা নিয়ে ঢুকলে এসব করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। অথচ বানভাসি এসব মানুষ এখনো দেখা পাননি, তাঁদের দেখে রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের।
সিলেটে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম পানির নিচে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় ৬৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা এক নারী বলেন,‘চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউই আমাদের কোনো খবর নেয় নাই।’ আরেক যুবক বলেন, ‘ঘরবাড়ি সব ভেঙে গেছে। গরু-বাছুরসব ভেসে গেছে। সবকিছুই ভেসে গেছে।’
অবশ্য জনপ্রতিনিধিদের দাবি ত্রাণ তৎপরতায় চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজির উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা আক্রান্তদের সহায়তার জন্য আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব দিয়েছি।’
সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন সূত্র বলেছে, সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের ২৩টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যাকবলিত।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩টি গ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে, তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে ১ হাজার ৪৪০ জন। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট জেলার সঙ্গে গোয়াইনঘাটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ মানুষ বন্যাদুর্গত হয়েছে, যাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন।