ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার শিশুদেরও যেমন প্রাণ যাচ্ছে তেমনি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে অনেক শিশু। এরই মধ্যে ১১০টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সময় অন্তত ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে যার মধ্যে ৪৫০ জনই স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে গাজার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
৮ মাসের বেশি সময় ধরে এভাবেই গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। যাদের বর্বরতায় সাড়ে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির খবর এলেও, এরমধ্যে কত শত শিশু যে এতিম হয়েছে তার সঠিক হিসেব নেই। একইভাবে সন্তানহারা বাবা-মায়ের সংখ্যাও অজানা। তবে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সবশেষ তথ্য বলছে, অন্তত ১৪ হাজারের বেশি শিশুর প্রাণ গেছে ইসরাইলি হামলায়।
ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণের মাত্রা এখন এতোটাই বেড়েছে যে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের কোনো শিশুই নিরাপদ নয়, দখলদারিত্ব অভিযানের তীব্রতা বাড়ানোয় পশ্চিমতীরেও একই হাল। স্কুলে গিয়েও প্রাণ হারাতে হচ্ছে শিশুদের। অনেক শিশু-কিশোর আবার বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে হাসপাতালের বিছানায়। এরমধ্যেই চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকটও দীর্ঘ হচ্ছে। এ অবস্থায় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমি স্কুলে আহত হয়েছিলাম। সেখানে কোনো সশস্ত্র লোক ছিলো না তবুও ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। সেখানে আমার বাবা শহীদ হয়েছেন। আমি প্রাণে রক্ষা পেলেও গুরুতর আহত।’
আরেকজন বলেন, ‘আমি স্কুলে যেতাম, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হতেই পরিস্থিতি বদলে যায়। আমি এখন হাঁটতে পারিনা। এতে আমি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এখন আগের মতো খেলতে পারি না।’
ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ৪৫০ জন স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। এরমধ্যে গাজায় ৪৩০ ও পশ্চিমতীরে ২০ জন। যারা সবাই হাই স্কুলে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো। এছাড়া একই সময় ১১০টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে সব মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। এমনকি গাজার অন্তত ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে পারেনি।
গাজার শিশুরা যখন এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি, তখন গিটার হাতে ধ্বংস্তুপের নগরী ঘুরে ঘুরে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের মনে সাহস যোগানোর চেষ্টা করছেন এক মেডিকেল শিক্ষার্থী। যিনি নিজেও পড়া-লেখা চালিয়ে যেতে পাড়ছেন না। প্রাণ বাঁচাতে এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটছেন প্রতিনিয়ত। আবেগি গানের সুরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে নিজেদের করুণ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরতে চান তিনি। যাতে যুদ্ধ বন্ধে আসে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ।
মেডিকেল শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি আমার সমস্ত স্মৃতি, আমার শৈশবের সমস্ত খেলনা, আমার বাড়িতে ফেলে চলে এসেছি। সাথে করে কিছুই আনতে পারিনি। এমনকি আমার সখের বাদ্যযন্ত্রগুলো রেখে এসেছি। এখন আমি আমার বাবার বন্ধুর গিটারটি ধার নিয়ে শিশুদের মনে সাহস যোগাতে রাস্তায় রাস্তায় গান করে বেড়াই। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছেও আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।'
এদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। যার সবশেষ রায়ে তেল আবিবকে অবিলম্বে রাফাহ শহরে হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল।