ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কালো টাকা সাদা করলেও ছাড় দেবে না দুদক

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
  • / ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কালো টাকা সাদা নিয়ে ঢালাও প্রশ্নে বিব্রত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই অবৈধ আয় ও অপ্রদর্শিত অর্থের আইনগত ব্যাখ্যা চান ব্যবসায়ী নেতারা। আয়কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে বিনিয়োগের সুযোগ ইতিবাচক, তবে তা হতে হবে নির্ধারিত পন্থায়। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করে নিলেও দুর্নীতির প্রমাণ পেলে ছাড় দেবে না বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছে যদি এমন অর্থ থাকে, যার আয়ের উৎস তিনি ছাড়া কেউ জানেন না কিংবা জবাবদিহিতার ভয়ে তা প্রকাশও করছেন না। সেই টাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি বা জমি কেনার পাশাপাশি নগদ টাকার হিসাব দিলে ১৫ শতাংশ কর কেটে সে অর্থের বৈধতা দেবে এনবিআর। এমনকি কোন উৎস থেকে টাকা আয় হয়েছে, সে প্রশ্নও করা হবে না।

এ সুবিধা নিয়ে সরকারি চাকুরে, রাজনীতিবিদ বা অবৈধভাবে আয় করা যেকোনো ব্যক্তি তার অর্থ আইনগতভাবে বৈধ করে নিতে পারছেন বিনা প্রশ্নে। যদিও এনবিআর বলছে, বৈধ অবৈধ বিতর্কে যাচ্ছেন না তারা। দীর্ঘদিন অপ্রদর্শিত থাকা সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন সহজ করতেই এ আইন।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুবিধায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে কোম্পানির অপ্রদর্শিত অর্থ আর ব্যক্তির অবৈধ আয় আলাদা করে দু’টির জন্য পৃথক ধারা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘একজন ভালো ব্যবসায়ী, যে ১০ বা ১৫ বা ৩০ বছর ট্যাক্স দিয়ে তার ফাইলটা বড় করেছে। তার কাছে অবশ্যই এটা খারাপ লাগার কথা যে আমি কেন তাহলে এই সুযোগটা পেলাম না। যেসব টাকা ডিসিপ্লিন ওয়েতে আসেনি সেটাকে বৈধ করা যাবে না। একজন ব্যবসায়ীর টাকা কীভাবে এসেছে সেটাও দেখা সম্ভব। এটা আগে ছিল, সেই কারণটা দিয়ে দিয়ে দিলেই হবে।’

বিদ্যমান আয়কর আইনে বলা হয়েছে, আয়ের উৎস অবৈধ বা অপরাধমূলক কার্যক্রম হলে, অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে কোনো সংস্থার চোখে অপরাধী বা দুর্নীতির কারণে সমালোচিত এমন কোনো ব্যক্তি যদি তার অবৈধ অর্থ এনবিআরের কাছে প্রদর্শন করে প্রাপ্তি স্বীকার নিতে চান, সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না আইনে। তবে দুদক-থানা ও আদালতে মামলা বা অভিযোগ কিংবা কোনো সংস্থার নজরে আসার আগেই কোনো ব্যক্তি যদি তার অবৈধ অর্থ বৈধ করতে এনবিআরে ফাইল তৈরি করে প্রাপ্তি স্বীকার গ্রহণ করেন, প্রস্তাবিত আইনের বলে তার বৈধতা নিয়েও আর কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।

অবৈধ অর্থ পাচার কিংবা অপচয় না করে দেশেই বিনিয়োগের স্বার্থে এ সুযোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যদি এই অর্থটাকে প্রদর্শনের সুযোগ না রাখি তাহলে এই অর্থ ভোগ-বিলাসে ব্যয় হবে। অথবা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকবে। কালো এবং ধূসর দু’টাকেই সুযোগ দিতে চাচ্ছিল, কিন্তু এখন যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে শুধু ধূসরকেই সুযোগ দেবো, কালোকে সুযোগ দেবো না, কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না। তাহলে এই জায়গাতেও মানুষ আগ্রহী হবে না।’

প্রস্তাবিত বিধানে বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ আর অবৈধ আয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। নৈতিকভাবে এ নিয়ম দৃষ্টিকটু হলেও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়, সে বিনিয়োগের খাত নির্ধারণ করে দেয়া উচিত বলে মত এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মাজিদের।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন করা হবে কি হবে না, এই বিষয়টা উয্য থাকুক। এই বিষয়টা একবার হইলে সবার মাঝে ছড়িয়ে যায় যে টাকা কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই আয় করা যায়। মানে আমাকে কেউ কিছু বলবে না। কেউ কেউ কিছু বলতে পারবে না। জবাব দেয়ার মধ্য দিয়ে আলাদা খাতে ইনভেস্টের বিষয় শুনে নিতে হবে।’

তবে অবৈধ অর্থের হিসাব এনবিআরকে দিয়ে কালো টাকা সাদা করলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘১৫ শতাংশ টাকা কর দেয়ার পরও মানে কালো টাকা সাদা করার পরও যদি টাকার উৎস বৈধ না হয়, আর সেটা যদি আয় বহির্ভূত সম্পদ হয় তাহলে দুদক তার আইনের আওতায় ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। অনুসন্ধান করতে পারবে।’

অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা বা অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে গিয়ে তা যেন বৈধভাবে আয় করা নিয়মিত করদাতাদের হতাশ না করে সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

কালো টাকা সাদা করলেও ছাড় দেবে না দুদক

আপডেট সময় : ০১:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

কালো টাকা সাদা নিয়ে ঢালাও প্রশ্নে বিব্রত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই অবৈধ আয় ও অপ্রদর্শিত অর্থের আইনগত ব্যাখ্যা চান ব্যবসায়ী নেতারা। আয়কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে বিনিয়োগের সুযোগ ইতিবাচক, তবে তা হতে হবে নির্ধারিত পন্থায়। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করে নিলেও দুর্নীতির প্রমাণ পেলে ছাড় দেবে না বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছে যদি এমন অর্থ থাকে, যার আয়ের উৎস তিনি ছাড়া কেউ জানেন না কিংবা জবাবদিহিতার ভয়ে তা প্রকাশও করছেন না। সেই টাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি বা জমি কেনার পাশাপাশি নগদ টাকার হিসাব দিলে ১৫ শতাংশ কর কেটে সে অর্থের বৈধতা দেবে এনবিআর। এমনকি কোন উৎস থেকে টাকা আয় হয়েছে, সে প্রশ্নও করা হবে না।

এ সুবিধা নিয়ে সরকারি চাকুরে, রাজনীতিবিদ বা অবৈধভাবে আয় করা যেকোনো ব্যক্তি তার অর্থ আইনগতভাবে বৈধ করে নিতে পারছেন বিনা প্রশ্নে। যদিও এনবিআর বলছে, বৈধ অবৈধ বিতর্কে যাচ্ছেন না তারা। দীর্ঘদিন অপ্রদর্শিত থাকা সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন সহজ করতেই এ আইন।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুবিধায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে কোম্পানির অপ্রদর্শিত অর্থ আর ব্যক্তির অবৈধ আয় আলাদা করে দু’টির জন্য পৃথক ধারা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘একজন ভালো ব্যবসায়ী, যে ১০ বা ১৫ বা ৩০ বছর ট্যাক্স দিয়ে তার ফাইলটা বড় করেছে। তার কাছে অবশ্যই এটা খারাপ লাগার কথা যে আমি কেন তাহলে এই সুযোগটা পেলাম না। যেসব টাকা ডিসিপ্লিন ওয়েতে আসেনি সেটাকে বৈধ করা যাবে না। একজন ব্যবসায়ীর টাকা কীভাবে এসেছে সেটাও দেখা সম্ভব। এটা আগে ছিল, সেই কারণটা দিয়ে দিয়ে দিলেই হবে।’

বিদ্যমান আয়কর আইনে বলা হয়েছে, আয়ের উৎস অবৈধ বা অপরাধমূলক কার্যক্রম হলে, অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে কোনো সংস্থার চোখে অপরাধী বা দুর্নীতির কারণে সমালোচিত এমন কোনো ব্যক্তি যদি তার অবৈধ অর্থ এনবিআরের কাছে প্রদর্শন করে প্রাপ্তি স্বীকার নিতে চান, সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না আইনে। তবে দুদক-থানা ও আদালতে মামলা বা অভিযোগ কিংবা কোনো সংস্থার নজরে আসার আগেই কোনো ব্যক্তি যদি তার অবৈধ অর্থ বৈধ করতে এনবিআরে ফাইল তৈরি করে প্রাপ্তি স্বীকার গ্রহণ করেন, প্রস্তাবিত আইনের বলে তার বৈধতা নিয়েও আর কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।

অবৈধ অর্থ পাচার কিংবা অপচয় না করে দেশেই বিনিয়োগের স্বার্থে এ সুযোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যদি এই অর্থটাকে প্রদর্শনের সুযোগ না রাখি তাহলে এই অর্থ ভোগ-বিলাসে ব্যয় হবে। অথবা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকবে। কালো এবং ধূসর দু’টাকেই সুযোগ দিতে চাচ্ছিল, কিন্তু এখন যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে শুধু ধূসরকেই সুযোগ দেবো, কালোকে সুযোগ দেবো না, কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না। তাহলে এই জায়গাতেও মানুষ আগ্রহী হবে না।’

প্রস্তাবিত বিধানে বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ আর অবৈধ আয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। নৈতিকভাবে এ নিয়ম দৃষ্টিকটু হলেও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়, সে বিনিয়োগের খাত নির্ধারণ করে দেয়া উচিত বলে মত এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মাজিদের।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন করা হবে কি হবে না, এই বিষয়টা উয্য থাকুক। এই বিষয়টা একবার হইলে সবার মাঝে ছড়িয়ে যায় যে টাকা কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই আয় করা যায়। মানে আমাকে কেউ কিছু বলবে না। কেউ কেউ কিছু বলতে পারবে না। জবাব দেয়ার মধ্য দিয়ে আলাদা খাতে ইনভেস্টের বিষয় শুনে নিতে হবে।’

তবে অবৈধ অর্থের হিসাব এনবিআরকে দিয়ে কালো টাকা সাদা করলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘১৫ শতাংশ টাকা কর দেয়ার পরও মানে কালো টাকা সাদা করার পরও যদি টাকার উৎস বৈধ না হয়, আর সেটা যদি আয় বহির্ভূত সম্পদ হয় তাহলে দুদক তার আইনের আওতায় ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। অনুসন্ধান করতে পারবে।’

অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা বা অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে গিয়ে তা যেন বৈধভাবে আয় করা নিয়মিত করদাতাদের হতাশ না করে সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।