০১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : কোটা সংস্কার না করে ঘরে ফিরব না

সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে আজও আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন তারা।

এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমবেত হতে দেখা যায় তাদের। এ সময় ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীদের মূলত দাবি চারটি। দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে।

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজনিন ফাতেমা বলেন, আমরা এখানে এসেছি যাতে এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠে যায়। আমরা চাই না কোটায় কেউ একটা যোগ্যতাসম্পন্ন জায়গায় যাক। এই জায়গায় যাওয়ার অধিকার শুধু মেধাবীদের। আমরা চাই মেধার যথাযথ ব্যবহার হোক। তবে পিছিয়ে পড়া জনগণ অর্থাৎ প্রতিবন্ধীদের ব্যাপার আলাদা। তারা কোটার যোগ্য। তবে মুক্তিযোদ্ধারা তো আর পিছিয়ে পড়া জনগণ নন। তাই আমরা চাই এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি উঠে যাক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিক মঈন বলেন, কোটার মতো একটি চরম বৈষম্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বৈষম্য আমাদের পূর্বপুরুষরাও মানেননি, আমরাও মানব না। স্বাধীন দেশে বৈষম্যের শিকার হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বৈষম্যের শিকারই যদি হব, তাহলে যারা আজ বৈষম্য তৈরি করছে তাদের পিতারাই কেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন? ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলে মেধাবীদের রিকশা চালানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সরকার তাহলে আমাদের রিকশা কিনে দিক, নয়তো কোটা সংস্কার করুক। কোটা সংস্কার না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’

আন্দোলরত শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছে।

এদিকে, সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেছেন আদালত।

আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আজকের শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনব।

বিশ্বমঞ্চে মাহফুজকে বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করালেন ড. ইউনূস

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : কোটা সংস্কার না করে ঘরে ফিরব না

আপডেট : ০১:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে আজও আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন তারা।

এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমবেত হতে দেখা যায় তাদের। এ সময় ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীদের মূলত দাবি চারটি। দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে।

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজনিন ফাতেমা বলেন, আমরা এখানে এসেছি যাতে এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠে যায়। আমরা চাই না কোটায় কেউ একটা যোগ্যতাসম্পন্ন জায়গায় যাক। এই জায়গায় যাওয়ার অধিকার শুধু মেধাবীদের। আমরা চাই মেধার যথাযথ ব্যবহার হোক। তবে পিছিয়ে পড়া জনগণ অর্থাৎ প্রতিবন্ধীদের ব্যাপার আলাদা। তারা কোটার যোগ্য। তবে মুক্তিযোদ্ধারা তো আর পিছিয়ে পড়া জনগণ নন। তাই আমরা চাই এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি উঠে যাক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিক মঈন বলেন, কোটার মতো একটি চরম বৈষম্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বৈষম্য আমাদের পূর্বপুরুষরাও মানেননি, আমরাও মানব না। স্বাধীন দেশে বৈষম্যের শিকার হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বৈষম্যের শিকারই যদি হব, তাহলে যারা আজ বৈষম্য তৈরি করছে তাদের পিতারাই কেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন? ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলে মেধাবীদের রিকশা চালানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সরকার তাহলে আমাদের রিকশা কিনে দিক, নয়তো কোটা সংস্কার করুক। কোটা সংস্কার না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’

আন্দোলরত শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছে।

এদিকে, সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেছেন আদালত।

আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আজকের শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনব।