ঢাকা ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান?

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত সাঈদ জালিলিকে তিনি পরাজিত করেন। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর থেকেই মাসুদ পেজেশকিয়ানকে নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

সংস্কারপন্থি এই রাজনীতিবিদ ইরানিদের কাছে আশার দিশারি হয়ে উঠেছেন। কারণ মানুষের সামাজিক স্বাধীনতার ওপর কঠোর কড়াকড়ি আরোপ না করা এবং বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রতিশ্রুতির জন্য এই নেতাকে নিয়ে ইরানিরা নতুন আশা দেখছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তির পথে হাঁটতে পারেন।

৬৯ বছর বয়সী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ইরানের পররাষ্ট্রনীতিকে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করাসহ রাজনৈতিক যে অস্থিরতা রয়েছে তা কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন। তবে সেটি বাস্তববে কতটা সম্ভব হবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দিবে।

ইরানের দ্বৈত নীতির রাজনৈতিক কাঠামোতে একজন প্রেসিডেন্ট চাইলেই নিজের মতো করে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন না। কারণ ইরানের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির তত্ত্ববধায়নে।

তবে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াতে কিছুটা প্রভাব রাখার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচনের প্রচারণায় সময় পেজেশকিয়ান টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির নীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবেন না। তবে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যদি তিনি সেটা না পারেন তাহলে রাজনীতি থেকে নিজেকে বিদায় জানাবেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, জনগণকে সেবা দিতে না পারলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।

মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট পদে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি। কারণ ইরানে বহু বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে তিনি পেজেশকিয়ানের মধ্যে তেমন কিছু দেখতে পেয়েছেন।

বলা হচ্ছে ইব্রাহিম রাইসির ঠিক বিপরীতে কাজ করবেন পেজেশকিয়ান। তিনি রাষ্ট্রীয় অব্যস্থাপনা, দুর্নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৪৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সোহরাব হুসেইনি বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষায় কিছুটা চেষ্টা করবেন। তবে সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নির্ভর করছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির দৃষ্টির ওপর। তবে আমি কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলির জয় ঠেকাতে পেজেশকিয়ানকে ভোট দিয়েছি।

২০২২ সালে পোশাক বিধি লঙ্ঘন করায় নৈতিক পুলিশের নির্যাতনে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান। এই তরুণীর মৃত্যুল পর পুরো ইরান জুড়ে তখন ব্যাপক আকারে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, হিজাব আইনের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু এর জন্য নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়।

গত মাসে তেহরান বিশ্ববিদ্যায়ে আয়োজিত একটি বৈঠকে ২০২২-২৩ সালের বিক্ষোভে কারাবন্দী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পেজেশকিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বন্দিরা আমার আয়ত্বের মধ্যে নেই। যদিও আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই। তবে আমি কর্তৃপক্ষ নই।’

১৯৮০ সালের ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সময় মাসুদ পেজেশকিয়ানকে সম্মুখ সারির চিকিৎসকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাসুদ পেজেশকিয়ান তার স্ত্রী ও এক সন্তান হারান। পরবর্তীতে তিনি আর বিয়ে করেননি। তবে তিনি দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। সূত্র: রয়টার্স

নিউজটি শেয়ার করুন

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান?

আপডেট সময় : ০২:০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত সাঈদ জালিলিকে তিনি পরাজিত করেন। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর থেকেই মাসুদ পেজেশকিয়ানকে নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

সংস্কারপন্থি এই রাজনীতিবিদ ইরানিদের কাছে আশার দিশারি হয়ে উঠেছেন। কারণ মানুষের সামাজিক স্বাধীনতার ওপর কঠোর কড়াকড়ি আরোপ না করা এবং বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রতিশ্রুতির জন্য এই নেতাকে নিয়ে ইরানিরা নতুন আশা দেখছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তির পথে হাঁটতে পারেন।

৬৯ বছর বয়সী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ইরানের পররাষ্ট্রনীতিকে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করাসহ রাজনৈতিক যে অস্থিরতা রয়েছে তা কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন। তবে সেটি বাস্তববে কতটা সম্ভব হবে সেটা ভবিষ্যতই বলে দিবে।

ইরানের দ্বৈত নীতির রাজনৈতিক কাঠামোতে একজন প্রেসিডেন্ট চাইলেই নিজের মতো করে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারেন না। কারণ ইরানের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির তত্ত্ববধায়নে।

তবে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াতে কিছুটা প্রভাব রাখার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচনের প্রচারণায় সময় পেজেশকিয়ান টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির নীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করবেন না। তবে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। যদি তিনি সেটা না পারেন তাহলে রাজনীতি থেকে নিজেকে বিদায় জানাবেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, জনগণকে সেবা দিতে না পারলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।

মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট পদে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন দেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি। কারণ ইরানে বহু বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে তিনি পেজেশকিয়ানের মধ্যে তেমন কিছু দেখতে পেয়েছেন।

বলা হচ্ছে ইব্রাহিম রাইসির ঠিক বিপরীতে কাজ করবেন পেজেশকিয়ান। তিনি রাষ্ট্রীয় অব্যস্থাপনা, দুর্নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৪৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সোহরাব হুসেইনি বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষায় কিছুটা চেষ্টা করবেন। তবে সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নির্ভর করছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ির দৃষ্টির ওপর। তবে আমি কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলির জয় ঠেকাতে পেজেশকিয়ানকে ভোট দিয়েছি।

২০২২ সালে পোশাক বিধি লঙ্ঘন করায় নৈতিক পুলিশের নির্যাতনে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান। এই তরুণীর মৃত্যুল পর পুরো ইরান জুড়ে তখন ব্যাপক আকারে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, হিজাব আইনের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু এর জন্য নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়।

গত মাসে তেহরান বিশ্ববিদ্যায়ে আয়োজিত একটি বৈঠকে ২০২২-২৩ সালের বিক্ষোভে কারাবন্দী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পেজেশকিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বন্দিরা আমার আয়ত্বের মধ্যে নেই। যদিও আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই। তবে আমি কর্তৃপক্ষ নই।’

১৯৮০ সালের ইরাক ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সময় মাসুদ পেজেশকিয়ানকে সম্মুখ সারির চিকিৎসকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাসুদ পেজেশকিয়ান তার স্ত্রী ও এক সন্তান হারান। পরবর্তীতে তিনি আর বিয়ে করেননি। তবে তিনি দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। সূত্র: রয়টার্স