দেশে যত দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের একজনেরও কোনো শাস্তি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের। আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি–বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় জিএম কাদের বলেন, ‘যত দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের একজনেরও কোনো শাস্তি হবে না। এটা আমার ধারণা থেকে আপনাদের পূর্বাভাস বললাম। এগুলো নাটক। যেহেতু দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেজন্য কিছু লোককে ভয় দেখানো হচ্ছে। আসলে দুর্নীতির বটবৃক্ষ এই সরকার।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে— পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হয়েছে, আসলে এটা জনগণের রক্ত চুষে হয়েছে। সরকারের সকল অর্থ জনগণের।’
শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য যে কোটা পদ্ধতি তা সংবিধানবিরোধী। এর মাধ্যমে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। সংবিধানের এই ধারা পরিবর্তনের সুযোগ কাউকে দেওয়া হয়নি। সরকার সমাজকে বিভক্ত করেছে। তারা শাসক শ্রেণি হিসেবে এই দেশকে তাদের নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। তারা আইনের ঊর্ধ্বে শুধু নয়, তারা নিজেদের পছন্দমতো আইন তৈরি করে তা প্রয়োগ করেছে। ব্রিটিশদের মতো তাদের অনুগত প্রশাসন, অনুগত লোক দরকার। তাদের লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে শোষণ, নিপীড়ন কার্যকর করার জন্য একটা প্রশাসন দরকার। জনগণ এখন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক তারা শাসক শ্রেণিকে শুধু সেবা দিবে।’
জিএম কাদের আরও বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বাড়ছে, ডলার সংকট চরমে। এই কারণেই বিনিয়োগ কমছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় এখন বেশি। দেশের অর্থনীতি ফুটো করে ফেলেছে এই সরকার। সেই ফুটো দিয়ে সব বের হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের এখন যে দুর্দশা তা সরকারের ভ্রান্ত নীতি ও দুর্নীতির কারণে হয়েছে। সরকারকে এগুলো বললে তারা আমাদের নানা কথা শুনায়।’
এর আগে, জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের কর্মসূচি শুরু হয়। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চন্নু। তিনি এসময় সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘দেশে চলছে লুটপাট, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায়। দেশের সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে হাজার হাজার কোটির টাকার মালিক হয়। সেদিকে সরকারের নজর নেই। দেশের নেতা–কর্মীরা যে টাকা কামাই করছে তাহলে আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রীরা কত টাকা কামাই করছে জনগণ এখন জানে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আগামী দুই বছরের জন্য গাজীপুর জেলার জাতীয় পার্টির কমিটিতে আব্দুস সাত্তার মিয়াকে সভাপতি ও কামরুজ্জামান মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।