যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাঁর দল লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের অল্পসময়ের মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ২০ জন মন্ত্রী বেছে নিয়ে তাঁদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এই মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অব একচেকার) পদসহ রেকর্ড ১১টি পদে নারীদের বেছে নিয়েছেন স্টারমার।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনে গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হয়, দুটি বাদে শুক্রবার পাওয়া যায় ৬৪৮টি আসনের ফল। এতে দেখা যায় গতবারের চেয়ে ২১৪টি আসন নিয়ে কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি এবার ৪১২টিতে জয় নিশ্চিত করেছে। আর গতবারের চেয়ে ২৫২টি আসন হাতছাড়া হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির, তারা এবার পেয়েছে ১২১টি আসন। বাকি আসনগুলো অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছে।
বিদায়ী টোরি নেতা ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পদত্যাগ করার পরই বাকিংহাম প্রাসাদে রাজার সঙ্গে দেখা করেন স্টারমার। সেখান থেকে সরকার গঠনের অনুমতি পেয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এরপরই শুরু হয় তার মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া।
শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল নাগাদ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একে একে ডাক পান লেবার পার্টির অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা। শুক্রবারের নির্বাচনে জয়ী এসব নেতাকে দপ্তর ভাগ করে দেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবারই মন্ত্রিসভা গঠনের কথা জানায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট।
স্টারমারের মন্ত্রিসভায় যাঁরা
উপপ্রধানমন্ত্রী: যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে অ্যাশটন-আন্ডার-লিনের এমপি অ্যাঞ্জেলা রেইনাহকে।
চ্যান্সেলর অব একচেকার (অর্থমন্ত্রী): নতুন মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বড় চমকের নাম রেইচেল রিজ। তিনিই দেশটির ৮০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অর্থমন্ত্রী তথা ‘চ্যান্সেলর অব একচেকার’। এটি যুক্তরাজ্য সরকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী: স্টারমারের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন গায়ানিজ বংশোদ্ভূত ডেভিড লামি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: লেবার পার্টির অন্যতম শীর্ষ পদধারী নারী এভেট কুপা স্টারমারের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
অন্যান্য মন্ত্রী
যুক্তরাজ্যের সার্বভৌম ‘প্রাইভেট এস্টেট’ ডাচি অব ল্যাংকাসটাহর চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা প্যাট ম্যাকফ্যাডেন। আইনজীবী শাবানা মাহমুদকে করা হয়েছে বিচার প্রতিমন্ত্রী ও লর্ড চ্যান্সেলর। সাবেক কনজারভেটিভ নেত্রী লিজ ট্রাসের পর তিনিই দ্বিতীয় নারী, যিনি এ দায়িত্ব পেলেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে জন হিলিকে। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়েস স্ট্রিটিং। শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে ব্রিজিট ফিলিপসনকে।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারযুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
জ্বালানি নিরাপত্তা ও নেট জিরো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন এড মিলিব্যান্ড। কর্ম ও পেনশন মন্ত্রী হয়েছেন লিজ কেন্ডাল। ব্যবসা ও বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন জোনাথন রেনল্ডস। বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পিটার কাইল। লুইস হাইগকে করা হয়েছে পরিবহন মন্ত্রী। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন হয়েছেন স্টিভ রিড।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিসা নন্দিকে। এছাড়া হিলারি বেনকে নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, আইয়ান মুরেইকে স্কটল্যান্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও ওয়েলস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে জো স্টিভেনসকে।
গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে যাঁরা
কমন্স নেতা করা হয়েছে লুসি পাওয়েলকে। লর্ডসের নেতা হয়েছেন ব্যারোনেস স্মিথ। পার্লামেন্টে লেবার পার্টির চিফ হুইপ করা হয়েছে অ্যালান ক্যাম্বলকে।
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী রেইচেল রিজের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ড্যারেন জোনস। ল্যাঙ্কাস্টারের ডাচির চ্যান্সেলর হয়েছেন প্যাট ম্যাকফ্যাডেন। যুক্তরাজ্যের নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল পদ দেওয়া হয়েছে রিচার্ড হারমারকে।