ঢাকা ১২:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তীরে এসে কেন তরী ডুবল ফরাসি ডানপন্থীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৪১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রথম দফা নির্বাচনের পর বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন ফ্রান্সের অতি ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির (আরএন) নেতা মারিঁ লো পেন। কারণ তাঁর দল ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিল। তিনি বলেছিলেন, দ্বিতীয় দফার ভোটেও তাঁর দল বিজয়ী হবে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।

কিন্তু গতকাল রোববার দ্বিতীয় দফার ভোটে পাশার দান উল্টে গেল। বিস্ময়করভাবে উত্থান ঘঠল বামপন্থী জোটের। পিছিয়ে পড়ল ডানপন্থী দল আরএন। বুথফেরত জরিপ বলছে, বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছে ১৮২ আসন, মাখোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্স ১৬৩টি আসন এবং লো পেনের ডানপন্থী দল আরএন পেয়েছে ১৪৩টি আসন।

ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য ২৮৯টি আসনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন পেতে হবে। এ অবস্থায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে ফ্রান্সে।

প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপের ভোটে এই বিস্ময়কর পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব হলো? এটি বোঝার জন্য একটু পেছনে তাকাতে হবে। এর আগে গত ৯ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য পায় ডানপন্থী দল আরএন। আর ভরাডুবি হয় প্রেসিডেন্ট মাখোঁর মধ্যপন্থী দল টুগেদার অ্যালায়েন্সের। তখন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন ইমানুয়েল মাখোঁ।

এরপর ৩০ জুন প্রথম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটেও ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে যায় আরএন। সারা ফ্রান্স মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় যে, এবার ফ্রান্সের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে উগ্র ডানপন্থীরা। এই উগ্র ডানপন্থী আরএনের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, ইহুদিবিদ্বেষ, ঘৃণা ছড়ানো থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ ছিল। ফলে তাদের উত্থান দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ফ্রান্সের বামপন্থী ও মধ্যপন্থীরা। তাদের ভয়—ডানপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে উদার, গণতান্ত্রিক ও বহুবৈচিত্রকে স্থান দেওয়া ফ্রান্স তার মর্যাদা হারাবে।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের মধ্যবর্তী দল হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর দল টুগেদার অ্যালায়েন্স বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোটের সঙ্গে সমঝোতায় বসে। এরপর তারা বিভিন্ন আসন থেকে শতাধিক প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে দুই জোট মিলে একজন করে প্রার্থী দেয়। এতে দুই জোটের সমর্থকদের ভোট একীভূত হয়। এভাবে ডানপন্থীদের জয় ঠেকিয়ে দেয় মধ্য ও বামপন্থীরা।

এর আগে ২০২২ সালের নির্বাচনেও ইমানুয়েল মাখোঁর কাছে পরাজিত হয়েছিল অতি ডানপন্থী আরএন। এবারও জিততে জিততে তীরে এসে তরী ডুবল ডানপন্থীদের। মাখোঁর কৌশলের কাছে হেরে গেলেন তারা।

বিজয় অত্যাসন্ন ভেবে গতকাল পার্টি অফিসে এসেছিলেন আরএনের সমর্থক জোসেলিন কাজিন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। যেতে যেতে রয়টার্সকে বলেন, ‘ফলাফলগুলো হতাশাজনক। ফরাসি জনগণ যা চায়, তার প্রতিনিধিত্ব করে না এই ফলাফল।’

আরএনের দুই নেতা—লা পেন ও বারডেলাও তাদের পরাজয়ের জন্য দায়ী করেছেন মধ্যপন্থী ও ডানপন্থীদের জোটকে। এই জোটকে ‘অসম্মানজনক’ জোট বলে অভিহিত করেছেন বারডেলা।

তবে প্যারিসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইপিএসওএস–এর গবেষক ব্রাইস টেইন্টুরিয়ার বলেন, ‘আরএনের নিজেদের ভুলের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। তাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনের আগে ইহুদিবিদ্বেষী মতামত প্রকাশ করেছিলেন।’

পশ্চিম ফ্রান্সের ব্রিটানির আরএন প্রার্থী ফ্লোরেন্ট ডি কেরসাউসন অবশ্য নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফলাফলটি আমাদের জন্য অবশ্যই ক্ষতি বয়ে আনবে। সন্দেহ নেই যে আমরা কিছুটা অহংকারী হয়ে উঠেছিলাম। আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছি—এমন পূর্বাভাস প্রচার করা আমাদের উচিত হয়নি।’

তবে লা পেন বলেন, ‘আমরা এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি, ঠিক আছে। তবে সমর্থকদের মধ্যে জোয়ার উঠেছে। আমাদের প্রতি ফরাসিদের আস্থা বাড়ছে। আমরা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকেই এগোচ্ছি।’

সমর্থকদের মধ্যেও এমন বিশ্বাস বাড়ছে। প্যারিসে আরএনের সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের একজন এলিয়া দা কুনহা বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের বিজয় সন্নিকটে। মানুষ বুঝতে পারছে, ন্যাশনাল র‍্যালি অতটা ভয়ঙ্কর নয়। আমরা ২০২৭ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ী হব।’

তবে সমর্থকেরা যতই আশাবাদী হোন না কেন, গতকালের ভোটের বুথফেরত ফলাফল নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা। এ ধাক্কাকে ফরাসি সংবাদপত্র লেস ইকোস প্রথম পৃষ্ঠায় বড় শিরোনামে লিখেছে—‘লা ক্ল্যাক’ যার সহজ বংলা ‘চপেটাঘাত’! তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি ও সিএনএন

নিউজটি শেয়ার করুন

তীরে এসে কেন তরী ডুবল ফরাসি ডানপন্থীদের

আপডেট সময় : ০৮:৪১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

প্রথম দফা নির্বাচনের পর বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন ফ্রান্সের অতি ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‍্যালির (আরএন) নেতা মারিঁ লো পেন। কারণ তাঁর দল ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিল। তিনি বলেছিলেন, দ্বিতীয় দফার ভোটেও তাঁর দল বিজয়ী হবে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।

কিন্তু গতকাল রোববার দ্বিতীয় দফার ভোটে পাশার দান উল্টে গেল। বিস্ময়করভাবে উত্থান ঘঠল বামপন্থী জোটের। পিছিয়ে পড়ল ডানপন্থী দল আরএন। বুথফেরত জরিপ বলছে, বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছে ১৮২ আসন, মাখোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্স ১৬৩টি আসন এবং লো পেনের ডানপন্থী দল আরএন পেয়েছে ১৪৩টি আসন।

ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য ২৮৯টি আসনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন পেতে হবে। এ অবস্থায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে ফ্রান্সে।

প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিতীয় ধাপের ভোটে এই বিস্ময়কর পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব হলো? এটি বোঝার জন্য একটু পেছনে তাকাতে হবে। এর আগে গত ৯ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য পায় ডানপন্থী দল আরএন। আর ভরাডুবি হয় প্রেসিডেন্ট মাখোঁর মধ্যপন্থী দল টুগেদার অ্যালায়েন্সের। তখন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন ইমানুয়েল মাখোঁ।

এরপর ৩০ জুন প্রথম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটেও ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে যায় আরএন। সারা ফ্রান্স মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় যে, এবার ফ্রান্সের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে উগ্র ডানপন্থীরা। এই উগ্র ডানপন্থী আরএনের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, ইহুদিবিদ্বেষ, ঘৃণা ছড়ানো থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ ছিল। ফলে তাদের উত্থান দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ফ্রান্সের বামপন্থী ও মধ্যপন্থীরা। তাদের ভয়—ডানপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে উদার, গণতান্ত্রিক ও বহুবৈচিত্রকে স্থান দেওয়া ফ্রান্স তার মর্যাদা হারাবে।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের মধ্যবর্তী দল হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর দল টুগেদার অ্যালায়েন্স বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোটের সঙ্গে সমঝোতায় বসে। এরপর তারা বিভিন্ন আসন থেকে শতাধিক প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে দুই জোট মিলে একজন করে প্রার্থী দেয়। এতে দুই জোটের সমর্থকদের ভোট একীভূত হয়। এভাবে ডানপন্থীদের জয় ঠেকিয়ে দেয় মধ্য ও বামপন্থীরা।

এর আগে ২০২২ সালের নির্বাচনেও ইমানুয়েল মাখোঁর কাছে পরাজিত হয়েছিল অতি ডানপন্থী আরএন। এবারও জিততে জিততে তীরে এসে তরী ডুবল ডানপন্থীদের। মাখোঁর কৌশলের কাছে হেরে গেলেন তারা।

বিজয় অত্যাসন্ন ভেবে গতকাল পার্টি অফিসে এসেছিলেন আরএনের সমর্থক জোসেলিন কাজিন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। যেতে যেতে রয়টার্সকে বলেন, ‘ফলাফলগুলো হতাশাজনক। ফরাসি জনগণ যা চায়, তার প্রতিনিধিত্ব করে না এই ফলাফল।’

আরএনের দুই নেতা—লা পেন ও বারডেলাও তাদের পরাজয়ের জন্য দায়ী করেছেন মধ্যপন্থী ও ডানপন্থীদের জোটকে। এই জোটকে ‘অসম্মানজনক’ জোট বলে অভিহিত করেছেন বারডেলা।

তবে প্যারিসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইপিএসওএস–এর গবেষক ব্রাইস টেইন্টুরিয়ার বলেন, ‘আরএনের নিজেদের ভুলের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। তাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনের আগে ইহুদিবিদ্বেষী মতামত প্রকাশ করেছিলেন।’

পশ্চিম ফ্রান্সের ব্রিটানির আরএন প্রার্থী ফ্লোরেন্ট ডি কেরসাউসন অবশ্য নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফলাফলটি আমাদের জন্য অবশ্যই ক্ষতি বয়ে আনবে। সন্দেহ নেই যে আমরা কিছুটা অহংকারী হয়ে উঠেছিলাম। আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছি—এমন পূর্বাভাস প্রচার করা আমাদের উচিত হয়নি।’

তবে লা পেন বলেন, ‘আমরা এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি, ঠিক আছে। তবে সমর্থকদের মধ্যে জোয়ার উঠেছে। আমাদের প্রতি ফরাসিদের আস্থা বাড়ছে। আমরা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকেই এগোচ্ছি।’

সমর্থকদের মধ্যেও এমন বিশ্বাস বাড়ছে। প্যারিসে আরএনের সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের একজন এলিয়া দা কুনহা বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের বিজয় সন্নিকটে। মানুষ বুঝতে পারছে, ন্যাশনাল র‍্যালি অতটা ভয়ঙ্কর নয়। আমরা ২০২৭ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ী হব।’

তবে সমর্থকেরা যতই আশাবাদী হোন না কেন, গতকালের ভোটের বুথফেরত ফলাফল নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা। এ ধাক্কাকে ফরাসি সংবাদপত্র লেস ইকোস প্রথম পৃষ্ঠায় বড় শিরোনামে লিখেছে—‘লা ক্ল্যাক’ যার সহজ বংলা ‘চপেটাঘাত’! তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি ও সিএনএন