জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেছেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল বা বহাল নয়, বরং সংস্কার করা জরুরি। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা এই কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৮ সালে একদল ছাত্র-ছাত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। এটি আবেগপ্রসূত এবং ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর, কিছু ছাত্র-ছাত্রী মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে তথাকথিত ‘বাংলা ব্লকেড’ আন্দোলন শুরু করে, যা নিছক কোটা বাতিলের নিষ্পাপ আন্দোলন ছিল না। তাদের কথাবার্তায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পেছনে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক ইন্ধনও প্রকাশিত হয়েছে।
জাসদের নেতারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা শুধু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানই নন, তাদের পরিবারও মুক্তিযুদ্ধে ও পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সরকারগুলির দ্বারা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাধীনতার পর সকল সরকার যৌক্তিক কারণে কোটা পদ্ধতি বহাল রেখেছে। সমাজে বৈষম্য কমানোর জন্যই এটি করা হয়েছে। কিন্তু একসময় কোটা পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে এবং তুলে দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পরিবারে কত প্রজন্ম পর্যন্ত এ সুবিধা পাবে, তারও পদ্ধতি ও সময় কাঠামো নির্ধারণ করা জরুরি। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ ২৯(৩)(ক) তে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।’ সংবিধানের আলোকে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে নারী, ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য যৌক্তিক পরিমাণ কোটা সংরক্ষণ করে কোটা ব্যবস্থা যৌক্তিক করতে হবে। জাসদ নেতৃবৃন্দ, কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘কোটা সংস্কার কমিশন’ গঠনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। কোটা সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুততার সাথে একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে এবং তার ভিত্তিতে কোটা সংস্কারের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান তারা।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অপর এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বৈষম্যমূলক পেনশন ব্যবস্থার পরিবর্তে সার্বজনীন পেনশন চালুর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, জনপ্রশাসনের জন্য এক রকম পেনশন ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সেক্টর কর্পোরেশনসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আরেক রকম পেনশন স্কিমের বিধান বৈষম্যমূলক। এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম বাতিল করে একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।