০৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে নতুন পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করবে রাশিয়া

ভারতে নতুন পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করবে রাশিয়া। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত-রাশিয়া। নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় কয়েকটি চুক্তি। জীবাশ্ম জ্বালানি বাণিজ্য বাড়াতে ভবিষ্যতে আর্কটিকের সমুদ্রপথ ব্যবহার করবে ভারত-রাশিয়া।

একদিকে চলছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলন, অন্যদিকে একত্রিত হয়েছেন এশিয়ার শক্তিশালী দু’দেশ রাশিয়া আর ভারতের নেতৃত্ব। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়িয়ে নিজেই নিয়ে গেছেন তার বাসভবনে, তাতে দুই নেতার মধ্যে রসায়ন বেশ স্পষ্ট। ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযানের সময় মোদির রাশিয়া সফর আভাস দিচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মস্কোতে বেশ সীমিত।

পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চলাচল এটাও প্রমাণ করে যে, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও দেশটি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও ঝুঁকছে। সঙ্গে পরমাণু সক্ষমতা জোরদার করছে। সফরে মস্কোতে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে আয়োজিত অ্যাটম এক্সপোতে অংশ নেন দুই দেশের নেতা।

বিশ্বের অন্যতম গণতন্ত্রের দেশ পরিচালনাকারী নরেন্দ্র মোদি দু’বছর ধরে রাশিয়ার তেল আর গ্যাসের বিশ্বস্ত ক্রেতা দেশ। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরকালে জানা যায়, ভারতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ষষ্ঠ বৃহত্তম পরমাণু রিঅ্যাক্টর স্থাপনে আগ্রহী রাশিয়া। পাশাপাশি আলোচনা হয় পরবর্তী প্রজন্মের ছোট পরমাণু পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কোম্পানি রোসাটম জানায়, আগামীতে ৬ টি পরমাণু শক্তি কেন্দ্র ভারতে স্থাপন করবে তারা।

পরমাণু শক্তি নিয়ে যেখানে বিতর্কের শেষ নেই, সেখানে এটি তৈরি হতে কোনো কার্বন নিঃসরণ হয় না। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেক দেশ। পরমাণু প্ল্যান্ট আর জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম উৎস হয়ে গেছে রাশিয়া। দু’দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয় ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ শিল্প আর ব্যাংক খাত নিয়ে। সফরে স্বাক্ষরিত হয় দ্বিপাক্ষিক কয়েকটি চুক্তি।

গেলো কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে মস্কো। ২০২৩ সালে দু’দেশের বাণিজ্য পৌঁছেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারে। সফরে মোদি জানান, রাশিয়া থেকে গম আর সার আমদানি বাড়াবে ভারত। বছরের শুরু থেকে প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ সারই সরবরাহ করেছে রাশিয়া। বিশ্ব সমৃদ্ধিতে নতুন শক্তি হিসেবে কাজ করতে দু’দেশ আগ্রহী বলেও জানান তিনি। যদিও সফরে কিয়েভে হাসপাতালে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশু মৃত্যুর দুঃখ প্রকাশ করেন মোদি।

এ সময় বেশ বিনয়ের সঙ্গে পুতিন জানান, ইউক্রেনের সংকট সমাধানের উপায় খুঁজছে ক্রেমলিন। যদিও হাসপাতালে হামলার ঘটনাই অস্বীকার করছে মস্কো। হোয়াইট হাউজ বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব, মস্কোকে ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে আলোচনায় সহযোগিতা করবে।

এদিকে, ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ভারতের যেসব সেনা রাশিয়া নিয়োগ দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে রুশ প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। নয়াদিল্লি বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে ভারতের ৩০ থেকে ৫০ জন নাগরিক।

২২তম রাশিয়া-ভারত সম্মেলনে মোদি-পুতিন সাক্ষাৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে ভারতকে বেছে নিয়েছেন পুতিন। পরমাণু শক্তির মধ্য দিয়ে এখনও বিশ্বে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে, পশ্চিমাদের বন্ধু থেকেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে ভারত। এখানে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপন করলে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রয়োজন পড়বে ইউরেনিয়াম।

নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে চীনের তুলনায় পিছিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রাশিয়া। পরমাণু রিঅ্যাক্টর তৈরি আর সেগুলোকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান এখনও কোনো দেশ দখল করতে পারেনি। রাশিয়ার ইউরেনিয়াম খাত বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। কিন্তু পরমাণু প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পে রাশিয়া এখনও এক নম্বরে। দশকের পর দশক ধরে মস্কো পরমাণু শক্তিকেন্দ্র স্থাপনের যে বাজার তৈরি করেছে সেই অবস্থানকে টেক্কা দেয়া কঠিন বলে মনে করছেন পরমাণু বিজ্ঞানীরা।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিলেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসছে না কোনো দেশ। বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় গ্রিন হাউজ নিঃসারক দেশ ভারত, চতুর্থ রাশিয়া। তেল আর গ্যাস বাণিজ্য চালিয়ে যাবে দু’দেশই। উত্তর মেরুর আর্কটিকের বরফ গলার কারণে এই সমুদ্রপথ বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ব্যবহার করবে দু’দেশ। অথচ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের কারণেই ২০৫০ সালের মধ্যে পুরোপুরি বরফ শূন্য হয়ে যাবে আর্কটিক।

বিশ্বমঞ্চে মাহফুজকে বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করালেন ড. ইউনূস

ভারতে নতুন পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করবে রাশিয়া

আপডেট : ০৮:২২:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

ভারতে নতুন পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করবে রাশিয়া। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত-রাশিয়া। নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় কয়েকটি চুক্তি। জীবাশ্ম জ্বালানি বাণিজ্য বাড়াতে ভবিষ্যতে আর্কটিকের সমুদ্রপথ ব্যবহার করবে ভারত-রাশিয়া।

একদিকে চলছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলন, অন্যদিকে একত্রিত হয়েছেন এশিয়ার শক্তিশালী দু’দেশ রাশিয়া আর ভারতের নেতৃত্ব। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়িয়ে নিজেই নিয়ে গেছেন তার বাসভবনে, তাতে দুই নেতার মধ্যে রসায়ন বেশ স্পষ্ট। ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযানের সময় মোদির রাশিয়া সফর আভাস দিচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মস্কোতে বেশ সীমিত।

পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চলাচল এটাও প্রমাণ করে যে, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও দেশটি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও ঝুঁকছে। সঙ্গে পরমাণু সক্ষমতা জোরদার করছে। সফরে মস্কোতে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে আয়োজিত অ্যাটম এক্সপোতে অংশ নেন দুই দেশের নেতা।

বিশ্বের অন্যতম গণতন্ত্রের দেশ পরিচালনাকারী নরেন্দ্র মোদি দু’বছর ধরে রাশিয়ার তেল আর গ্যাসের বিশ্বস্ত ক্রেতা দেশ। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরকালে জানা যায়, ভারতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ষষ্ঠ বৃহত্তম পরমাণু রিঅ্যাক্টর স্থাপনে আগ্রহী রাশিয়া। পাশাপাশি আলোচনা হয় পরবর্তী প্রজন্মের ছোট পরমাণু পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কোম্পানি রোসাটম জানায়, আগামীতে ৬ টি পরমাণু শক্তি কেন্দ্র ভারতে স্থাপন করবে তারা।

পরমাণু শক্তি নিয়ে যেখানে বিতর্কের শেষ নেই, সেখানে এটি তৈরি হতে কোনো কার্বন নিঃসরণ হয় না। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেক দেশ। পরমাণু প্ল্যান্ট আর জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম উৎস হয়ে গেছে রাশিয়া। দু’দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয় ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ শিল্প আর ব্যাংক খাত নিয়ে। সফরে স্বাক্ষরিত হয় দ্বিপাক্ষিক কয়েকটি চুক্তি।

গেলো কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে মস্কো। ২০২৩ সালে দু’দেশের বাণিজ্য পৌঁছেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারে। সফরে মোদি জানান, রাশিয়া থেকে গম আর সার আমদানি বাড়াবে ভারত। বছরের শুরু থেকে প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ সারই সরবরাহ করেছে রাশিয়া। বিশ্ব সমৃদ্ধিতে নতুন শক্তি হিসেবে কাজ করতে দু’দেশ আগ্রহী বলেও জানান তিনি। যদিও সফরে কিয়েভে হাসপাতালে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশু মৃত্যুর দুঃখ প্রকাশ করেন মোদি।

এ সময় বেশ বিনয়ের সঙ্গে পুতিন জানান, ইউক্রেনের সংকট সমাধানের উপায় খুঁজছে ক্রেমলিন। যদিও হাসপাতালে হামলার ঘটনাই অস্বীকার করছে মস্কো। হোয়াইট হাউজ বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব, মস্কোকে ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে আলোচনায় সহযোগিতা করবে।

এদিকে, ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ভারতের যেসব সেনা রাশিয়া নিয়োগ দিয়েছে, তাদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে রুশ প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। নয়াদিল্লি বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে ভারতের ৩০ থেকে ৫০ জন নাগরিক।

২২তম রাশিয়া-ভারত সম্মেলনে মোদি-পুতিন সাক্ষাৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে ভারতকে বেছে নিয়েছেন পুতিন। পরমাণু শক্তির মধ্য দিয়ে এখনও বিশ্বে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে, পশ্চিমাদের বন্ধু থেকেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে ভারত। এখানে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপন করলে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রয়োজন পড়বে ইউরেনিয়াম।

নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে চীনের তুলনায় পিছিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রাশিয়া। পরমাণু রিঅ্যাক্টর তৈরি আর সেগুলোকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান এখনও কোনো দেশ দখল করতে পারেনি। রাশিয়ার ইউরেনিয়াম খাত বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। কিন্তু পরমাণু প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পে রাশিয়া এখনও এক নম্বরে। দশকের পর দশক ধরে মস্কো পরমাণু শক্তিকেন্দ্র স্থাপনের যে বাজার তৈরি করেছে সেই অবস্থানকে টেক্কা দেয়া কঠিন বলে মনে করছেন পরমাণু বিজ্ঞানীরা।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিলেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসছে না কোনো দেশ। বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় গ্রিন হাউজ নিঃসারক দেশ ভারত, চতুর্থ রাশিয়া। তেল আর গ্যাস বাণিজ্য চালিয়ে যাবে দু’দেশই। উত্তর মেরুর আর্কটিকের বরফ গলার কারণে এই সমুদ্রপথ বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ব্যবহার করবে দু’দেশ। অথচ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের কারণেই ২০৫০ সালের মধ্যে পুরোপুরি বরফ শূন্য হয়ে যাবে আর্কটিক।