ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে: জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৬তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি আজ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

রেজুলেশন গৃহীত হওয়ার পর জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মিজ সঞ্চিতা হক বলেন, অপ্রতুল সম্পদ ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভবপর নয়।

তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ প্রত্যাবসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা। এছাড়া, প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা এবং এর নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের শুরু করার উপর জোর দেন।

গৃহীত প্রস্তাবটিতে সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের জোরপূর্বক বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবটি মিয়ানমারে যুদ্ধরত সকল পক্ষকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। মিয়ানমার সংঘাতের কারনে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবটি মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়।

গৃহীত প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এই প্রস্তাবে, রোহিঙ্গাদের জন্য অপর্যাপ্ত ও সংকুচিত আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা প্রদান করার জন্য আহবান জানানো হয়।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্যাতন, মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। এছাড়া, প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

এছাড়াও, প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমার বিষয়ক “নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন”-এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে: জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত

আপডেট সময় : ১১:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৬তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

মানবাধিকার পরিষদের চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর সকল সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপস-আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি আজ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

রেজুলেশন গৃহীত হওয়ার পর জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মিজ সঞ্চিতা হক বলেন, অপ্রতুল সম্পদ ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভবপর নয়।

তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ প্রত্যাবসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা। এছাড়া, প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা এবং এর নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের শুরু করার উপর জোর দেন।

গৃহীত প্রস্তাবটিতে সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের জোরপূর্বক বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবটি মিয়ানমারে যুদ্ধরত সকল পক্ষকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। মিয়ানমার সংঘাতের কারনে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবটি মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়।

গৃহীত প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এই প্রস্তাবে, রোহিঙ্গাদের জন্য অপর্যাপ্ত ও সংকুচিত আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা প্রদান করার জন্য আহবান জানানো হয়।

প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্যাতন, মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা ও তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও সমর্থন জানানো হয়। এছাড়া, প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

এছাড়াও, প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে মিয়ানমার বিষয়ক “নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন”-এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়।