ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বাংলাদেশে ২৫৭ ধরনের কোটা, যা বিশ্বে বিরল ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:০৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী বুধবার (১০ জুলাই) সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। দিনশেষে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ৩টা থেকে আবারো সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে একই বছর সরকার পরিপত্র জারি করে। সেই পরিপত্র গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া সেই রায়ের ওপর বুধবার (১০ জুলাই) চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অবশ্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা বহাল ছিল এবং এখনো আছে।

সরকারি তথ্যানুসারে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।

এই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোটার বিপুল পদ শূন্য থাকত। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ ৭জন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন।

কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষে করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সময় নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। পরে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ।

ওই রায়ের পর আইনজীবীদের ভাষ্য, সব কোটা, নাকি শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরছে, তা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বলা যাবে।

১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর {(ইডি/আরআই/আর-৭৩/৭২-১০৯(৫০০)} তৎকালীন সংস্থাপন বিভাগের সচিব এম এম জামানের স্বাক্ষরে স্বাধীনতার পর দেশের সব অঞ্চলের জনগণকে সরকারি চাকরিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে চাকরিতে নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়।

১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। কোটার পক্ষে অবস্থান নেয়া এম এম জামান প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা প্রয়াত ড. আকবর আলি খান ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫৭ ধরনের কোটা আছে, যা ঐতিহাসিক এবং বিশ্বে বিরল ঘটনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশে ২৫৭ ধরনের কোটা, যা বিশ্বে বিরল ঘটনা

আপডেট সময় : ০১:০৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী বুধবার (১০ জুলাই) সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। দিনশেষে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ৩টা থেকে আবারো সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে একই বছর সরকার পরিপত্র জারি করে। সেই পরিপত্র গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া সেই রায়ের ওপর বুধবার (১০ জুলাই) চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অবশ্য তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা বহাল ছিল এবং এখনো আছে।

সরকারি তথ্যানুসারে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।

এই অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে এ কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোটার বিপুল পদ শূন্য থাকত। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ ৭জন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন আপিল বিভাগ নট টুডে (৪ জুলাই নয়) বলে আদেশ দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন।

কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষে করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সময় নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। পরে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ।

ওই রায়ের পর আইনজীবীদের ভাষ্য, সব কোটা, নাকি শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরছে, তা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বলা যাবে।

১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর {(ইডি/আরআই/আর-৭৩/৭২-১০৯(৫০০)} তৎকালীন সংস্থাপন বিভাগের সচিব এম এম জামানের স্বাক্ষরে স্বাধীনতার পর দেশের সব অঞ্চলের জনগণকে সরকারি চাকরিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে চাকরিতে নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়।

১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। কোটার পক্ষে অবস্থান নেয়া এম এম জামান প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা প্রয়াত ড. আকবর আলি খান ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫৭ ধরনের কোটা আছে, যা ঐতিহাসিক এবং বিশ্বে বিরল ঘটনা।