০১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি আয়ে ধীরগতি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ১২:০৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
  • ৩৬ দেখেছেন

দেশে রপ্তানি আয়ে দেখা দিয়েছে ধীর গতি। সাম্প্রতিক সময়ের নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন মন্তব্যই করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন দেশের রপ্তানি আয়ে দেখা দিয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতির প্রভাব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫১.৫৪ বিলিয়ন ডলার; অন্যদিকে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার। সার্বিকভাবে এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ২.০১ শতাংশ হলেও, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮.৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৩.৮৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২.৮৬ শতাংশ হলেও রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭.৬৩ শতাংশ। নিটপণ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৬.১৫ শতাংশ হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওভেন খাতে রপ্তানি কমেছে আগের বছরের থেকে ১.০৯ শতাংশ। এছাড়া সবশেষ অর্থবছরে রপ্তানিতে ধস নেমেছে হোম টেক্সটাইল খাতে। এ খাতে রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রচলিত বাজারগুলোর পাশাপাশি রপ্তানির গতি কমেছে নতুন বাজারগুলোতেও। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ধেকেরই গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ, সেখানে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমছে ধারাবাহিকভাবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেখানে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছিল ৬.৮১ শতাংশ, সেখানে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারেও।

সব মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছে না দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য। যতই দিন যাচ্ছে রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিস্থিতির যেন অবনতি হচ্ছে। এজন্য রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী নেতারা দুষছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিকে। তাদের দাবি, এনবিআরের ট্যারিফ নীতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতির কারণে বেড়ে যাওয়া সুদের হারের প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প উৎপাদনে, যার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না দেশীয় রপ্তানিকারকরা। অর্থনীতিবিদরাও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের রপ্তানি সক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি রপ্তানিবান্ধব নীতি প্রণয়নের ওপর জোর দিচ্ছেন।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এর পাশাপাশি তাদের দেশে ইদানীং মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দিয়েছে, ফলে তাদের ক্রয়ের ক্ষমতা ও প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির কারণে সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ছে; সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এজন্য কারখানা মালিকদের বাড়াতে হচ্ছে শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন। এ সবকিছুর প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানিকারকদের জন্য দেওয়া প্রণোদনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের পুরো গার্মেন্টস সেক্টর হুমকির মুখে পড়ে গেল। এর তীব্র প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপর।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কঠোর মুদ্রানীতি, তার কারণে শুধু সুদের হারই বেড়ে যায়নি, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সুযোগও হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বর্তমান সুদের হারে শুধু গার্মেন্টস সেক্টরই নয়, যে কোন ব্যবসা পরিচালনা করাই অত্যন্ত কঠিন।

চলমান এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নীতিগত পরিবর্তন আনার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি আয়ে ধীরগতি

আপডেট : ১২:০৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

দেশে রপ্তানি আয়ে দেখা দিয়েছে ধীর গতি। সাম্প্রতিক সময়ের নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন মন্তব্যই করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন দেশের রপ্তানি আয়ে দেখা দিয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতির প্রভাব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫১.৫৪ বিলিয়ন ডলার; অন্যদিকে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৫০.৫২ বিলিয়ন ডলার। সার্বিকভাবে এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ২.০১ শতাংশ হলেও, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮.৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৩.৮৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২.৮৬ শতাংশ হলেও রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭.৬৩ শতাংশ। নিটপণ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৬.১৫ শতাংশ হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওভেন খাতে রপ্তানি কমেছে আগের বছরের থেকে ১.০৯ শতাংশ। এছাড়া সবশেষ অর্থবছরে রপ্তানিতে ধস নেমেছে হোম টেক্সটাইল খাতে। এ খাতে রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রচলিত বাজারগুলোর পাশাপাশি রপ্তানির গতি কমেছে নতুন বাজারগুলোতেও। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ধেকেরই গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ, সেখানে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমছে ধারাবাহিকভাবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেখানে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছিল ৬.৮১ শতাংশ, সেখানে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারেও।

সব মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছে না দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য। যতই দিন যাচ্ছে রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিস্থিতির যেন অবনতি হচ্ছে। এজন্য রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী নেতারা দুষছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিকে। তাদের দাবি, এনবিআরের ট্যারিফ নীতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতির কারণে বেড়ে যাওয়া সুদের হারের প্রভাব পড়ছে দেশের শিল্প উৎপাদনে, যার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে সুবিধা করতে পারছেন না দেশীয় রপ্তানিকারকরা। অর্থনীতিবিদরাও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের রপ্তানি সক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি রপ্তানিবান্ধব নীতি প্রণয়নের ওপর জোর দিচ্ছেন।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এর পাশাপাশি তাদের দেশে ইদানীং মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দিয়েছে, ফলে তাদের ক্রয়ের ক্ষমতা ও প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির কারণে সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ছে; সঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এজন্য কারখানা মালিকদের বাড়াতে হচ্ছে শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন। এ সবকিছুর প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানিকারকদের জন্য দেওয়া প্রণোদনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের পুরো গার্মেন্টস সেক্টর হুমকির মুখে পড়ে গেল। এর তীব্র প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপর।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কঠোর মুদ্রানীতি, তার কারণে শুধু সুদের হারই বেড়ে যায়নি, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সুযোগও হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বর্তমান সুদের হারে শুধু গার্মেন্টস সেক্টরই নয়, যে কোন ব্যবসা পরিচালনা করাই অত্যন্ত কঠিন।

চলমান এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নীতিগত পরিবর্তন আনার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।