বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কৃত্রিম ফুল আমদানি
- আপডেট সময় : ১২:১৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪
- / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে
নেই গন্ধ। নেই জীবন। আছে শুধু সৌন্দর্য। তাজা ফুলের মতো শুভ্রতা না ছড়ালেও নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। ঘর সাজানো থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে কৃত্রিম ফুল। ক্রমাগত বাড়ছে এর চাহিদা। বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কৃত্রিম ফুল আমদানি হয় বাংলাদেশে। যার বড় অংশই আসে চীন থেকে। দেশে কৃত্রিম ফুল উৎপাদনে সরকারের নীতি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা।
সবুজের ডগায় একগুচ্ছ রক্তিম, মৃদু বাতাসে দোলে রঙ্গন। ঐ দুরে গোলাপের সমারোহ। বন্ধুদের স্বাগত জানাতে ফটকে নানা রং এর সুশোভিত পাপড়ি। তবে খালি চোখে বোঝা কঠিন, কোনটা প্রাকৃতিক আর কোনটা কৃত্রিম।
ফুল দেখলে গন্ধ শুকতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এসময় কিছুটা দ্বিধায় পড়বেন আপনি। কারণ এসব ফুলে কোনো গন্ধ নেই। হাত দিয়ে ধরতে গিয়ে কিছুটা অবাকই হবেন। এতো প্রাকৃতিক নয়, এগুলো সব আর্টিফিশিয়াল ফুল, কিন্তু উজ্জ্বলতা কোন অংশে কম নয়।
সুবাস, সজীবতা বিহীন পুষ্প বৃক্ষের জায়গায় এখন প্লাস্টিকের দখলে ফুলের বাজার। কিন্তু কেন?
সাধারণ জনগণ বলেন, ‘কাঁচা ফুল হলে মাথায় একদিনই দিতে পারতাম প্লাস্টিক হওয়াতে অনেকদিন ব্যবহার করা যাচ্ছে।’
কয়েক দশক ধরে কৃত্রিম ফুল বিক্রি হয় রাজধানীর মিউমার্কেট এলাকায়। শুরুর দিকে হাতেগোনা দোকান থাকলেও সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে প্লাস্টিক ফুলের বেচাকেনা। ক্রমাগত এর চাহিদাও বাড়ছে।
এক দশকের ব্যবধানে রাজধানীর চকবাজারে গড়ে উঠেছে কৃত্রিম ফুলের পাইকারি বাজার। বিসমিল্লাহ টাওয়ারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ২৪ বছর ধরে কৃত্রিম ফুল বিক্রি করেন। শুরুটা হয়েছিল গ্রামের মেলা দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘আগে দুই থেকে তিনটা ফুলের দোকান ছিল। এখন নিউমার্কেটে অনেক দোকান হয়ে গিয়েছে।’
দেশে কৃত্রিম ফুলের বাজার দিন দিন বড় হলেও, তার পুরোটাই এখনও আমদানি নির্ভর। যার বড় জোগান আসে চীন থেকে, বছরে এর পরিমাণ মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘প্রাকৃতিক যত গাছ আছে তার সব কৃত্রিম গাছ ও ফুল আমাদের কাছে আছে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমরা মাসে আমদানি করি দুই কনটেইনার ফুল। যেখানে আমাদের ২ কোটি টাকার মতো পড়ে।’
পাইকারি বাজারে ফুলের একেকটি স্টিকের দাম ১শ’ টাকা থেকে শুরু। টবসহ নানা নকশার ফুল কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চকবাজারে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারে কৃত্রিম ফুলের কদর বাড়ছে দিন দিন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ, এ চারমাসে বেড়ে যায় ফুল বিক্রি। যার বড় অংশই যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
বিক্রেতাদের আরেকজন বলেন, ‘বিক্রি বেশি হয় শীতের দিনে। বিভিন্ন ইভেন্ট থাকে সেন্টারে। যার ফলে শীতের দিনে এই ফুল দিয়ে বেশি সাজানো থাকে।’
ঘর সাজানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বাড়ছে কৃত্রিম ফুলের ব্যবহার। জন্মদিন থেকে শুরু করে, সভা-সেমিনার, দোয়া মাহফিল, বাগদান, বিবাহ, বিবাহোত্তর সংবর্ধনা- কোথায় নেই এর চাহিদা। বছরজুড়ে সরগরম কমিউনিটি সেন্টারগুলোর প্রবেশ পথ, সেলফি কর্নার, টেবিল কিংবা মঞ্চে এখন জায়গা করে নিচ্ছে কৃত্রিম ফুল।
অনুষ্ঠানে ফুল সাজাতে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকার বরাদ্দ পান আয়োজকরা। সাজসজ্জায় নতুনত্ব আনতে ও আর্থিকভাবে সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কৃত্রিম ফুলেই আগ্রহ তাদের।
ইভেন্ট আয়োজক একজন বলেন, ‘কৃত্রিম ফুল আমরা কয়েকবার ব্যবহার করতে পারি কিন্তু কাঁচা ফুল একবারের বেশি দুইবার ব্যবহার করা যায় না।’
এদিকে প্লাস্টিক ফুলের বাজার যখন বড় হচ্ছে তখন ক্রমেই ছোট হচ্ছে দেশে উৎপাদিত কাঁচা ফুলের ব্যবসা। কয়েক বছর ধরে কমছে চাষের পরিধি আর ফুল চাষিদের সংখ্যা।
শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কৃত্রিম ফুলের কারণে আমাদের ৪০ বছরে প্রাকৃতিক ফুলের মার্কেট ধিরে ধিরে হারিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, দেশে প্লাস্টিক ফুল তৈরি না হওয়ায়, আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে রিজার্ভের ডলার। এমন অবস্থায়, চাহিদা মেটাতে দেশেই এই কৃত্রিম ফুল উৎপাদনে সরকারে নীতি চান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, ‘এই কৃত্রিম ফুল তৈরি করতে প্রথমে রিসার্চ করতে হয়, ডিজাইন করতে হয়। তৈরি করার জন্য কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়।’
কৃত্রিম ফুলের বাজার বড় হলেও, দেশের বাজারের বড় অংশ এখনও প্রাকৃতিক ফুলের দখলে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, এই পরিমাণ, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।