ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ, হতাহত অনেক

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
  • / ৪০৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট) সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

সকালে বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শুরু হয়। পরে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন দুলাল মাতবর নামের একজন গাড়ি চালক। সংঘর্ষের সময় তিনি একটি হাইএস মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে উত্তরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত এক ছাত্রকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

অন্যদিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। ফারহান নামের ওই শিক্ষার্থী রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিন সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত অবস্থান নেয়। এ সময় রামপুরায় পুলিশ বাক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে বিটিভির ক্যানটিনেও। যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায়ও ফের আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, সাভারে এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১টার দিকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকার পশ্চিম পাশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে দিতে অগ্রসর হন। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডসহ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হন।

খুলনা : এক দফা দাবি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবরোধ করছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবরোধের কারণে শিববাড়ি মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, রূপসা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনে খুলনায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ। শিববাড়ি মোড়ে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে।

পাবনা : পাবনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ৩টা) বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলছে। আহতদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে মিছিলকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। যার অংশ হিসেবে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে গণজমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুই জন শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে মারপিট করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল মোড় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পর্যন্ত লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে কিছু শিক্ষার্থী দলীয় কার্যালয়কে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে এবং কিছু ব্যানার বিলবোর্ড ভেঙে ফেলে। ইট ও পাটকেলের ঢিলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়।

জয়পুরহাট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় জেলার প্রধান সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে শহরের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হন। সোয়া ১০টার দিকে তারা সড়কে নেমে পড়েন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রধান সড়ক হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় মোড় এলাকার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। এদিকে তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয় পুলিশ। সেখান থেকে তারা শহরের জিরো পয়েন্ট অভিমুখে রওনা দেন। বাজলা স্কুল এলাকায় এসে শিক্ষার্থীরা আবারও অবস্থান নিয়ে সড়কে বসে পড়েন। এরপর তারা জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দেয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জিরো পয়েন্টে চলে যায়। সে সময় কিছু শিক্ষার্থীর হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তারা জিরো পয়েন্ট পার হয়ে রেলগেটের দিকে যাওয়ার সময় চিত্রারোধ এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখতে পেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সে সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি ভ্যান তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় ছাত্র আন্দোলনের কিছু শিক্ষার্থী রেলগেটে গিয়ে পাথর নিয়ে ছুড়তে থাকে। সেখানেই শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

নাটোর : কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নাটোর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশ সুপারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার শুরু বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টায়। সকাল থেকেই নাটোর শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে ছাত্রলীগ সেখানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি ও হকিস্টিক হাতে প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত হয়। এই উভয় পক্ষের সমাবেশকে লক্ষ্য করে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ উভয়পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।

টাঙ্গাইল : কোটা সংস্কারের দাবিতে টাঙ্গাইলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারী‌দের ছত্রভঙ্গ কর‌তে পু‌লিশ টিয়ার‌ শেল ও রাবার বু‌লেট ছু‌ড়ছে। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘ‌র্ষে পু‌লিশ সাংবা‌দিকসহ ৩০ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন। এই ঘটনায় শহ‌রে থমথম অবস্থা বিরাজ কর‌ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা হ‌তে দফায় দফায় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নিরালার মোড়, রেজিস্ট্রিপাড়া এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশও টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। এসময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ময়মনসিংহ : শাটডাউন কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সড়কে সব ধরনের যান চলাচল। একই অবস্থা নগরীর মার্কেটগুলোর। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। সেই সঙ্গে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে রিকশাসহ ছোট ছোট যান চলাচল করলেও শিক্ষার্থী অবরোধে ফাঁকা বেশির ভাগ সড়ক। এসব সড়কে হেঁটে হেঁটে পথ চলতে দেখা গেছে সাধারণ পথচারীদের।

নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনালের এন কাউন্টারের সহকারী ম‍্যানেজার মো. খোরশেদ আলম (৫৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকেই দূরপাল্লার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী, হেলপার ও চালকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে কারো কোনো নির্দেশনা নেই।

মানিকগঞ্জ : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য জেলা শহরের জড়ো হওয়ার সময় খালপাড় এলাকায় আসা মাত্রই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় জেলা শহরের খালপাড়া এলাকায় এ ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে জড়ো হতে থাকে। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা শহরে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। মিছিলটি খালপাড় এলাকায় আসার পরই ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো চলে এই সংঘর্ষ।

রংপুর : দফায় দফায় সাধারণ শিক্ষার্থী-পুলিশের সংঘর্ষে রংপুর মহানগর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে রংপুরের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা রংপুর শহরে জড়ো হতে থাকে।

রংপুর জেলা স্কুল থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা জাহাজ কোম্পানি হয়ে রংপুর মর্ডান মোড়ে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও রাস্তায় নেমে আসে। দুপুর ১টার সময় শিক্ষার্থীরা রংপুরের তাজহাট থানা আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসে কিছুক্ষণ পর আবারও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে থানায় যেতে চাইলে পুলিশ আবারও রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ১০ বারের মতো সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে।

এদিকে জাহাজ কোম্পানি, পার্কমোড়, মডার্ন রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীরা টায়ার জ্বালিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিকার আদায় করার জন্য রাস্তায় নামায় পুলিশ আমাদের শিক্ষার্থী ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

নরসিংদী : নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে তাহমিদ ভূঁইয়া নামে এক শিক্ষার্থী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর-জেলখানা মোড় এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।

তাহমিদ ভূঁইয়া সদর উপজেলার চিনিশপুর নন্দীপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে এনকেএম হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিকেলে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী নরসিংদী শহর থেকে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করতে জেলখানা মোড়ের দিকে যায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি সড়ক অবরোধে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের সাথে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা ঘটে।

এসময় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আনার পর তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

এ ছাড়া মাদারীপুরে সংঘর্ষে সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্ত দে (২১) নিহত হয়েছেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি।

তবে পুলিশ প্রশাসন বা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি।

দিনভর সংঘর্ষে ঢাকার অফিস-আদালতেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তায় নেই কোনো গণপরিবহনও। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে উত্তাল ঢাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের অবস্থাও থমথমে। অন্য দিনের তুলনায় সচিবালয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা সচিবালয়ে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের ভেতরেও পরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।

সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এছাড়া দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শিল্পমন্ত্রীর একটি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা ব্রিজের ওপর কথা হয় নাইম ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবির সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরি বাঁচাতে অফিসে যেতে হচ্ছে। তবে রাস্তায় নেমে একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে আছি ভয়ের মধ্যে। রাস্তায় বাসের কোনো দেখা পাইনি। রিক্সা ভাড়াও অনেক বেশি চাচ্ছে। এছাড়া চারিদিকের যে খবর পাচ্ছি, তাতে কখন কোথায় কী হয় বলা মুশকিল। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।

সাতরাস্তা এলাকায় আমিন খান নামের এক পথচারী বলেন, অফিসের কাজে পল্টন যাবো। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে শুধু মারামারির সংবাদ পাচ্ছি। ভয়ের মধ্যে আছি। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যখন পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছিল, ঠিক তখন আশেপাশের বাসার দরজা বন্ধ করে অনেককে ছাদের ওপর উঠে যেতে দেখা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ, হতাহত অনেক

আপডেট সময় : ০৭:২১:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট) সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

সকালে বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শুরু হয়। পরে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন দুলাল মাতবর নামের একজন গাড়ি চালক। সংঘর্ষের সময় তিনি একটি হাইএস মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে উত্তরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত এক ছাত্রকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

অন্যদিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। ফারহান নামের ওই শিক্ষার্থী রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিন সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত অবস্থান নেয়। এ সময় রামপুরায় পুলিশ বাক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে বিটিভির ক্যানটিনেও। যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায়ও ফের আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, সাভারে এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১টার দিকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকার পশ্চিম পাশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে দিতে অগ্রসর হন। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডসহ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে কয়েকজন সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হন।

খুলনা : এক দফা দাবি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবরোধ করছেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবরোধের কারণে শিববাড়ি মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি থেকে সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, রূপসা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনে খুলনায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে পুলিশ। শিববাড়ি মোড়ে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে।

পাবনা : পাবনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সাড়ে ৩টা) বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলছে। আহতদের তাৎক্ষণিক নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে মিছিলকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। যার অংশ হিসেবে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে গণজমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুই জন শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে মারপিট করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল মোড় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পর্যন্ত লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে কিছু শিক্ষার্থী দলীয় কার্যালয়কে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে এবং কিছু ব্যানার বিলবোর্ড ভেঙে ফেলে। ইট ও পাটকেলের ঢিলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়।

জয়পুরহাট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় জেলার প্রধান সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে শহরের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হন। সোয়া ১০টার দিকে তারা সড়কে নেমে পড়েন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রধান সড়ক হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় মোড় এলাকার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। এদিকে তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয় পুলিশ। সেখান থেকে তারা শহরের জিরো পয়েন্ট অভিমুখে রওনা দেন। বাজলা স্কুল এলাকায় এসে শিক্ষার্থীরা আবারও অবস্থান নিয়ে সড়কে বসে পড়েন। এরপর তারা জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দেয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জিরো পয়েন্টে চলে যায়। সে সময় কিছু শিক্ষার্থীর হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। তারা জিরো পয়েন্ট পার হয়ে রেলগেটের দিকে যাওয়ার সময় চিত্রারোধ এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখতে পেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সে সময় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি ভ্যান তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় ছাত্র আন্দোলনের কিছু শিক্ষার্থী রেলগেটে গিয়ে পাথর নিয়ে ছুড়তে থাকে। সেখানেই শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

নাটোর : কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নাটোর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশ সুপারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার শুরু বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টায়। সকাল থেকেই নাটোর শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হতে থাকেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে ছাত্রলীগ সেখানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি ও হকিস্টিক হাতে প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত হয়। এই উভয় পক্ষের সমাবেশকে লক্ষ্য করে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ উভয়পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।

টাঙ্গাইল : কোটা সংস্কারের দাবিতে টাঙ্গাইলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারী‌দের ছত্রভঙ্গ কর‌তে পু‌লিশ টিয়ার‌ শেল ও রাবার বু‌লেট ছু‌ড়ছে। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। সংঘ‌র্ষে পু‌লিশ সাংবা‌দিকসহ ৩০ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন। এই ঘটনায় শহ‌রে থমথম অবস্থা বিরাজ কর‌ছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা হ‌তে দফায় দফায় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নিরালার মোড়, রেজিস্ট্রিপাড়া এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশও টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। এসময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ময়মনসিংহ : শাটডাউন কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সড়কে সব ধরনের যান চলাচল। একই অবস্থা নগরীর মার্কেটগুলোর। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র। সেই সঙ্গে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে রিকশাসহ ছোট ছোট যান চলাচল করলেও শিক্ষার্থী অবরোধে ফাঁকা বেশির ভাগ সড়ক। এসব সড়কে হেঁটে হেঁটে পথ চলতে দেখা গেছে সাধারণ পথচারীদের।

নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনালের এন কাউন্টারের সহকারী ম‍্যানেজার মো. খোরশেদ আলম (৫৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকেই দূরপাল্লার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী, হেলপার ও চালকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে কারো কোনো নির্দেশনা নেই।

মানিকগঞ্জ : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য জেলা শহরের জড়ো হওয়ার সময় খালপাড় এলাকায় আসা মাত্রই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় জেলা শহরের খালপাড়া এলাকায় এ ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে জড়ো হতে থাকে। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা শহরে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। মিছিলটি খালপাড় এলাকায় আসার পরই ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো চলে এই সংঘর্ষ।

রংপুর : দফায় দফায় সাধারণ শিক্ষার্থী-পুলিশের সংঘর্ষে রংপুর মহানগর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে রংপুরের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা রংপুর শহরে জড়ো হতে থাকে।

রংপুর জেলা স্কুল থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা জাহাজ কোম্পানি হয়ে রংপুর মর্ডান মোড়ে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও রাস্তায় নেমে আসে। দুপুর ১টার সময় শিক্ষার্থীরা রংপুরের তাজহাট থানা আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আসে কিছুক্ষণ পর আবারও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে থানায় যেতে চাইলে পুলিশ আবারও রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ১০ বারের মতো সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে।

এদিকে জাহাজ কোম্পানি, পার্কমোড়, মডার্ন রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীরা টায়ার জ্বালিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অধিকার আদায় করার জন্য রাস্তায় নামায় পুলিশ আমাদের শিক্ষার্থী ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

নরসিংদী : নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে তাহমিদ ভূঁইয়া নামে এক শিক্ষার্থী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর-জেলখানা মোড় এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।

তাহমিদ ভূঁইয়া সদর উপজেলার চিনিশপুর নন্দীপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে এনকেএম হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বিকেলে পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী নরসিংদী শহর থেকে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করতে জেলখানা মোড়ের দিকে যায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি সড়ক অবরোধে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের সাথে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা ঘটে।

এসময় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আনার পর তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

এ ছাড়া মাদারীপুরে সংঘর্ষে সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপ্ত দে (২১) নিহত হয়েছেন। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি।

তবে পুলিশ প্রশাসন বা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি।

দিনভর সংঘর্ষে ঢাকার অফিস-আদালতেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তায় নেই কোনো গণপরিবহনও। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে উত্তাল ঢাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের অবস্থাও থমথমে। অন্য দিনের তুলনায় সচিবালয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা সচিবালয়ে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের ভেতরেও পরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।

সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এছাড়া দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শিল্পমন্ত্রীর একটি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা ব্রিজের ওপর কথা হয় নাইম ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবির সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরি বাঁচাতে অফিসে যেতে হচ্ছে। তবে রাস্তায় নেমে একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে আছি ভয়ের মধ্যে। রাস্তায় বাসের কোনো দেখা পাইনি। রিক্সা ভাড়াও অনেক বেশি চাচ্ছে। এছাড়া চারিদিকের যে খবর পাচ্ছি, তাতে কখন কোথায় কী হয় বলা মুশকিল। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।

সাতরাস্তা এলাকায় আমিন খান নামের এক পথচারী বলেন, অফিসের কাজে পল্টন যাবো। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে শুধু মারামারির সংবাদ পাচ্ছি। ভয়ের মধ্যে আছি। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যখন পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছিল, ঠিক তখন আশেপাশের বাসার দরজা বন্ধ করে অনেককে ছাদের ওপর উঠে যেতে দেখা গেছে।