কোটা আন্দোলনে জঙ্গিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকতে পারে : সিটিটিসি
- আপডেট সময় : ১০:২১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪
- / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার নেপথ্যে উগ্রপন্থি বা জঙ্গি সংগঠনের কারও যোগসাজশ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলার ঘটনা ও জঙ্গি ছিনতাই হয়েছে বা ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনে যারা নাশকতা চালিয়েছে ও উসকানি দিয়েছে আমরা এরকম ২/১টি গ্রুপকে শনাক্ত করেছি। একজনকে আমরা গতকাল শনাক্ত করেছি, যিনি এরআগে আমাদের হাতে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এই আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সহিংস কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। ইতোমধ্যে তার নাম নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে। অচিরেই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারবো। তাই আমাদের ধারণা, এই কোটা আন্দোলনে উগ্রপন্থি বা জঙ্গিদের যোগসাজশ বা অংশগ্রহণ থাকলেও থাকতে পারে।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেই গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নরসিংদীর জেলা কারাগারে নজিরবিহীন হামলার সময় কোত (অস্ত্রাগার) ভেঙে অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়। জেল সুপার, জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কারা সদস্যদের জিম্মি করা হয়। তাদের মারধরও করা হয়। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কারা মসজিদে নিয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল। পরে কারা কর্মকর্তাদের বাসা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কারা অভ্যন্তরের আরও কিছু স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরপর কারা ফটক ভেঙে ৮১টি সরকারি অস্ত্র লুট করে হামলাকারীরা। এসময় ৮ হাজার ৫০ রাউন্ড গুলি লুট করে। আন্দোলনের নামে কয়েকশ সশস্ত্র জনতা প্রথমে কারাফটকে হামলা চালায়। এরপর তারা কারারক্ষীর ওপর হামলা করে অস্ত্র কেড়ে নেয়। কারা অভ্যন্তরে ঢুকে বন্দিদের মুক্ত করে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে কারাগারে থাকার ৮২৬ বন্দির সবাই পালিয়ে যান। এর মধ্যে ৯ জঙ্গিও আছেন।
সেখান থেকে পালানো ৯ জঙ্গির মধ্যে শীর্ষ দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
নরসিংদী জেল থেকে পলাতক (অপারেশন গর্ডিয়ান নট) এর সাথে যুক্ত শীর্ষ দুই জঙ্গি হলেন, ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ (৩০) ও খাদিজা পারভীন মেঘলা ওরফে মেঘনা (৩১)।
বুধবার (২৪ জুলাই) ভোরে সিটিটিসির চিরুনি অভিযানে ঢাকার মিরপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট গত ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২০১৮ রাত ৯টা থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪০ ঘণ্টা নরসিংদী মাধকণী শেখেরচড়ের ভগিরথপুর এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ি সড়কে ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়ার ৫ তলা ভবন এবং গাংপাড় এলাকার আফজাল হাজির নিলুফা ভিলা এবং নামক দুটি বাড়িতে অপারেশন গর্ডিয়ান নট অভিযান চালায়। অভিযানে দুই জন নিহত হয়, তারা হলেন নব্য জেএমবির আব্দুল্লাহ আল বাঙালি (৩০) ও তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার মনি (২৮)। অপর দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ (২৪) এবং খাদিজা পারভীন মেঘলা মেঘনা (২৫)।
দুজনেই বেসরকারি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির ফার্মেসি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই দুই জঙ্গিই নরসিংদী জেল সাজা ভোগ করছিলেন। কারাগারের হামলার সুযোগে দুইজনই জেল হতে পালান।
তিনি আরও জানান, আমরা খবর পাওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করি। কারণ, পালানো কয়েদিদের মধ্যে ৯ জঙ্গি ছিল। তাদের মধ্যে দুই জঙ্গি ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। আন্দোলনের নামে জামায়াত বিএনপি তাদেরকেও জেল থেকে পালাতে বা ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। সিটিটিসি দুই নারী জঙ্গির অবস্থান শনাক্তের পর ভোরে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আরও যে ৭ জঙ্গি পলাতক রয়েছেন তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই তাদের আমরা গ্রেপ্তার করতে পারবো।
আন্দোলনের নামে কারাগারে হামলা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের লক্ষ্য বা পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাগারে হামলাকারীরা সব কয়েদিকে মুক্ত ও সব গোলাবারুদ লুট করেছে। সুরক্ষিত সেলে হামলা চালিয়ে জঙ্গিদেরও ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। যদি তাদের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা না থাকতো তাহলে জঙ্গি সেলে গিয়ে তালা ভাঙা হতো না।
তিনি বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলায় সরাসরি যারা জড়িত তাদের সবাইকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হবে। ইতোপূর্বে সব ঘটনা, জঙ্গি হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাইরে উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদে জড়িত ও গ্রেপ্তার হয়েছিল এমন ২/১ জনকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে এই সংঘটিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনার মধ্যে সক্রিয় থাকার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এবিষয়ে আরও গভীরভাবে কাজ করছে সিটিটিসি।