তিন দিন পর আজ খুলেছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, ব্যাংক-বিমা এবং আদালত। একই সঙ্গে সব এলাকার শিল্প কারখানা এবং গার্মেন্টস খুলেছে। ফলে রাজধানীর সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য জানান তিনি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার এবং কাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
রাজধানী এবং ঢাকার বাইরে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অফিস-আদালতে যোগ দিতে সকাল থেকে রাস্তায় মানুষের ভিড়। বাসসহ বিভিন্ন যাত্রী পরিবহনের জন্য মানুষ রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। সবাই নিজ নিজ কাজে যাচ্ছেন। তবে ঢাকার বাইরে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
রাজধানীর সেনানিবাস এলাকার কচুক্ষেত বাজার সংলগ্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিশাল যানজট। সেনানিবাসের রাস্তা বন্ধ থাকায় সকল গাড়ি মিরপুরের রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। ফলে সেই রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তীব্র যানজট।
কাফরুল থেকে তেজগাঁওগামী এক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত গাড়িতে যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে করে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন চলবে। এ সময় সব ব্যাংকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সময়ে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে পুঁজিবাজারের লেনদেনও।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের শিল্পকারখানাগুলো সকাল ৮টা থেকে খুলতে শুরু করে। কর্মস্থলে যোগ দেন কয়েক লাখ শ্রমিক। বেলা ১০টায় কারফিউ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১১টার অফিস ধরতে পথে নামেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এ সময় চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় অনেককে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়। ব্যাংকগুলোতে রয়েছে গ্রাহকদের ভিড়।
গাজীপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে আসা গ্রাহক জানান, রাস্তায় গাড়ির অনেক চাপ। কোনো গাড়ি না পেয়ে তাঁকে অনেক ভিড় পার হয়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশায়ও অনেক ভাড়া হাঁকছেন চালকেরা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মাছ-ভর্তি ড্রাম, ককশিটের বাক্স। টানা কয়েকদিনের বিক্ষোভ-সহিংসতার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশ। রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি এখন শান্ত। সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গত দুদিন কোথাও দুর্বৃত্তদের নাশকতা হয়নি। ফলে আতঙ্ক ও শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। ফলে কারফিউ শিথিলের সময় সড়কে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল শান্ত, রাস্তায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে রাতেও রাস্তায় বের হয়েছে মানুষ। বেড়েছে রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলতে দেখা গেছে নিত্যপণ্য পরিবহনকারী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানও। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। বিভিন্ন চেকপোস্টে চলছে তল্লাশি। দেখা হচ্ছে পরিচয়পত্র ও কারফিউ পাস।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা, হামলা ও ভাঙচুর শুরু হলে শনিবার রাতে কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেয় সরকার। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বুধবার থেকে অফিস খোলার ঘোষণা দেয় সরকার।