কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের ফাইয়াজের কোমরে দড়ি পরানো ভুল ছিলো বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। সোমবার (২৯ জুলাই) বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকার ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এ কথা বলেন। এ বিষয়ে শুনানি আজ দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গতকাল রোববার আইন লঙ্ঘন করে ফাইয়াজকে দড়িবেঁধে পুলিশ ভ্যানে তোলা এবং রিমান্ডে নেওয়ার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ হাইকোর্টকে বলেন, ওই শিশুটিকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না। তার পরিবার আদালতে জামিন আবেদন নিয়ে গেলে তা বিবেচনা করা হবে। আর এ ক্ষেত্রে শিশু আইনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা টিভি চ্যানেলে দেখেছি, তার বাবা সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছে যে ছেলেটির বয়স ১৭। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট তা বিবেচনা (কনসিডার) করেননি! কাজ একটা করে তা হালাল করার জন্য জেদাজেদি করবেন? বিষয়গুলো যেন এমন না হয়।’
আদালত আরও বলেন, ‘ঠিক আছে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, কিন্তু এমন দু-একটা ঘটনার জন্য পুরো বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারকের এমন অপকর্মের কারণে বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।’ একপর্যায়ে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘বাচ্চাটা আপনার হলে কী করতেন? তাই এ বিষয়ে আজই পদক্ষেপ নিন। আমরা আজ কোনও আদেশ দিচ্ছি না। আগামীকাল বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে।’
আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দেখি যে একজন শিশুকে এভাবে দড়িবেঁধে পুলিশ ভ্যানে তুলছে। এটি দেখে সকালে আমরা বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। তখন আদালত বলেছেন, পিটিশন আকারে নিয়ে যেতে। পিটিশন নিয়ে গেলাম। শিশু আইন ২০১৩ যেটি আছে, এই আইনের কতগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে—কাউকে যদি গ্রেফতার করতে হয়, তাহলে পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি কি না। রিমান্ডের বিষয়ে অনেক নিয়ম আছে। আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোনও শিশুকে হাতকড়া পরানো যাবে না। আজ আদালত মৌখিক আদেশ দিয়েছেন, কাল রিটটি শুনানির জন্য তালিকায় আসবে।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আটক ব্যক্তি মাইনর, তাকে রিমান্ডে নিতে পারে না। হাইকোর্ট বলেছেন তার রিমান্ড বাতিল করে মা-বাবার হেফাজতে দিতে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
এর আগে গত ২৭ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ফাইয়াজের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
ফাইয়াজের পরিবার জানান, জন্মনিবন্ধন অনুসারে হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। বর্তমানে সে ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার অধস্তন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর। গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদাপোশাকে একদল লোক এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায়।
রিমান্ডের আদেশের বিষয়ে ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন ও এসএসসির সনদ অনুসারে, ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এই মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং মামলাটি শিশু আদালতে পাঠানোর আবেদন করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করে শিশুটিকে সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।
এদিকে জানা গেছে, রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযুক্ত ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে দাবির স্বপক্ষে বয়স প্রমাণক (এসএসসি ও জন্মসনদ) দাখিল করায় আদালত তার রিমান্ড স্থগিত করেছেন এবং ওই অভিযুক্তের বয়স নির্ধারণ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।