০৯:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেমিট্যান্স প্রবাহ নিম্নমুখী, ৬ দিনে এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার

চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ৬ দিনে এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যেখানে প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় আসে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার করে। গড়ে এ আয় কমে আসায় এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান ব্যাংকাররা। তবে আগামী দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে এ বিষয়ে ভাবতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

প্রবাসীরা যে আয় পাঠান, তা শুধু তাদের প্রয়োজন মেটায় না। পূরণ করে রাষ্ট্রের এবং সাধারণ মানুষের চাহিদা। বৃদ্ধি পায় রিজার্ভ এবং স্বাভাবিক রাখে নিত্যপণ্যের দাম।

আর সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরই অর্থ পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয় গেল ১৯ জুলাই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সব লেনদেন বন্ধ থাকায় ২৩ জুলাই পর্যন্ত কোনো অর্থই পাঠানো সম্ভব হয়নি অনেকেরই। এতে ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ হওয়ার দু’একদিন পরেই কেউ কেউ শুরু করেন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো।

একজন প্রবাসী বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দেশে টাকা পাঠাতে পারিনি। ইমার্জেন্সি টাকা পাঠানো প্রয়োজন ছিল তাও পাঠাতে পারিনি। অনেক মানুষ বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা করেছে টাকা পাঠানোর জন্য। কেউ পেরেছে কেউ পারেনি। তবে ২৪ জুলাই থেকে সীমিতভাবে আর্থিক খাতের লেনদেন শুরু হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সে রকম দেখা যায়নি।

পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তার বিপরীতে উৎপাদন এবং আমদানিসহ নানা কাজে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়ে থাকে। আর প্রবাসীরা যে অর্থ পাঠান তার পুরোটাই থেকে যায়। কিন্তু, রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি কমে যায় তাহলে চাহিদার বিপরীতে ব্যাঘাত ঘটবে সরবরাহের। তবে কয়েকদিন প্রবাসী আয় না আসাটাকে বিশ্লেষকরা সমস্যা মনে না করলেও বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের যে দুরবস্থা রয়েছে তাতে এ খাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রেমিট্যান্সে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ছয়দিনে এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কারণ এই সময়ে মাত্র একদিনই ব্যাংকে লেনদেন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯৮ কোটি ডলার আসে প্রথম ১৩ দিনে। আর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই ১০ দিনে আসে প্রায় ৫৩ কোটি ডলার।

তথ্যমতে, এ মাসের ২৪ দিনে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। যা আগের বছরের একই সময় এসেছিল ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর গেল জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। যা কি না গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।

গেল অর্থবছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমায়, ব্যাংক খাতে প্রবাসী আয় আনতে নেয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। এরপরই অক্টোবরে খোলাবাজারের সাথে ডলারের মূল্যের পার্থক্য কমিয়ে আনা ও প্রণোদনাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে ওই অক্টোবর থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি ডলার আসতে শুরু করে।

তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যখন জরুরি প্রয়োজনেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না প্রবাসীরা, তখন হুন্ডির আশ্রয় নেন অনেকেই। এখন সেসব প্রবাসীদের ব্যাংকিং খাতে ফেরানো বিষয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।

সেক্ষেত্রে এখনই এ বিষয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে জানান ব্যাংকাররা। তবে আগামী দিনে প্রবাসী আয় আসা কমে গেলে তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে জানান তারা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এউ মাসের আছেই আর কয়েকদিন। আবার এই মাসের বেশ কয়েকদিন কিন্তু আমরা পাইনি। আবার শুরু করতে সময় লাগবে। বৃহস্পতিবারে যে টাকা এসেছে, সেটা পেতে সময় লেগেছে। এই মাস শেষে আগামী মাসের কয়েকদিন গেলে বুঝা যাবে কী হয়। তবে রেমিট্যান্স আসা কমে গেলে এই বিষয় নিয়ে আসলে চিন্তা করেত হবে।’

সাম্প্রতিক ঘটনায় কয়েকদিন ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকায় সার্বিক রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যা সাময়িক সময়ের জন্য বলে জানান।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ফ্রিল্যান্স যারা করে তাদের টাকাটা লস। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তাদের কাছে কন্ট্রাক্টটা দিতে পারছে না। সেখানে একটা বড় লস হবে। সেটাও কিন্তু রেমিট্যান্সের মধ্যে দিয়েই টাকা আসে। আবার অনেকে জায়গা কেনার জন্য টাকা পাঠায় সেটাও দিতে পারছে না।’

বিদেশি মুদ্রা আয়ে রপ্তানি খাত প্রধান উৎস হলেও রেমিট্যান্সের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে জানান বিশ্লেষকরা।

রেমিট্যান্স প্রবাহ নিম্নমুখী, ৬ দিনে এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার

আপডেট : ০১:৫৭:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ৬ দিনে এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যেখানে প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় আসে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার করে। গড়ে এ আয় কমে আসায় এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান ব্যাংকাররা। তবে আগামী দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে এ বিষয়ে ভাবতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

প্রবাসীরা যে আয় পাঠান, তা শুধু তাদের প্রয়োজন মেটায় না। পূরণ করে রাষ্ট্রের এবং সাধারণ মানুষের চাহিদা। বৃদ্ধি পায় রিজার্ভ এবং স্বাভাবিক রাখে নিত্যপণ্যের দাম।

আর সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরই অর্থ পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয় গেল ১৯ জুলাই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সব লেনদেন বন্ধ থাকায় ২৩ জুলাই পর্যন্ত কোনো অর্থই পাঠানো সম্ভব হয়নি অনেকেরই। এতে ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ হওয়ার দু’একদিন পরেই কেউ কেউ শুরু করেন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো।

একজন প্রবাসী বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দেশে টাকা পাঠাতে পারিনি। ইমার্জেন্সি টাকা পাঠানো প্রয়োজন ছিল তাও পাঠাতে পারিনি। অনেক মানুষ বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা করেছে টাকা পাঠানোর জন্য। কেউ পেরেছে কেউ পারেনি। তবে ২৪ জুলাই থেকে সীমিতভাবে আর্থিক খাতের লেনদেন শুরু হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সে রকম দেখা যায়নি।

পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তার বিপরীতে উৎপাদন এবং আমদানিসহ নানা কাজে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়ে থাকে। আর প্রবাসীরা যে অর্থ পাঠান তার পুরোটাই থেকে যায়। কিন্তু, রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি কমে যায় তাহলে চাহিদার বিপরীতে ব্যাঘাত ঘটবে সরবরাহের। তবে কয়েকদিন প্রবাসী আয় না আসাটাকে বিশ্লেষকরা সমস্যা মনে না করলেও বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের যে দুরবস্থা রয়েছে তাতে এ খাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রেমিট্যান্সে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ছয়দিনে এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কারণ এই সময়ে মাত্র একদিনই ব্যাংকে লেনদেন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯৮ কোটি ডলার আসে প্রথম ১৩ দিনে। আর ১৪ থেকে ২৪ জুলাই ১০ দিনে আসে প্রায় ৫৩ কোটি ডলার।

তথ্যমতে, এ মাসের ২৪ দিনে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। যা আগের বছরের একই সময় এসেছিল ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর গেল জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। যা কি না গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।

গেল অর্থবছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমায়, ব্যাংক খাতে প্রবাসী আয় আনতে নেয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। এরপরই অক্টোবরে খোলাবাজারের সাথে ডলারের মূল্যের পার্থক্য কমিয়ে আনা ও প্রণোদনাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে ওই অক্টোবর থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি ডলার আসতে শুরু করে।

তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যখন জরুরি প্রয়োজনেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না প্রবাসীরা, তখন হুন্ডির আশ্রয় নেন অনেকেই। এখন সেসব প্রবাসীদের ব্যাংকিং খাতে ফেরানো বিষয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।

সেক্ষেত্রে এখনই এ বিষয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে জানান ব্যাংকাররা। তবে আগামী দিনে প্রবাসী আয় আসা কমে গেলে তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে জানান তারা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এউ মাসের আছেই আর কয়েকদিন। আবার এই মাসের বেশ কয়েকদিন কিন্তু আমরা পাইনি। আবার শুরু করতে সময় লাগবে। বৃহস্পতিবারে যে টাকা এসেছে, সেটা পেতে সময় লেগেছে। এই মাস শেষে আগামী মাসের কয়েকদিন গেলে বুঝা যাবে কী হয়। তবে রেমিট্যান্স আসা কমে গেলে এই বিষয় নিয়ে আসলে চিন্তা করেত হবে।’

সাম্প্রতিক ঘটনায় কয়েকদিন ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকায় সার্বিক রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যা সাময়িক সময়ের জন্য বলে জানান।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ফ্রিল্যান্স যারা করে তাদের টাকাটা লস। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তাদের কাছে কন্ট্রাক্টটা দিতে পারছে না। সেখানে একটা বড় লস হবে। সেটাও কিন্তু রেমিট্যান্সের মধ্যে দিয়েই টাকা আসে। আবার অনেকে জায়গা কেনার জন্য টাকা পাঠায় সেটাও দিতে পারছে না।’

বিদেশি মুদ্রা আয়ে রপ্তানি খাত প্রধান উৎস হলেও রেমিট্যান্সের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে জানান বিশ্লেষকরা।