০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা শহরে ভাড়াটিয়া কত, জানা নেই মেট্রোপলিটন পুলিশের!

প্রায় ২ কোটি মানুষের ঢাকা শহরে কত ভাড়াটিয়া? কিন্তু অধিকাংশেরই নাম, পরিচয়, ঠিকানা জানা নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। ভাড়াটিয়ার ফরম ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ২০১৪ সালের পর শুরু হলেও পুরোটা সংগ্রহ হয়নি এখনও। সাম্প্রতিক ঘটনার পর আবারও বাড়ির মালিকদের কাছে ভাড়াটিয়াদের তথ্য চেয়েছে ডিএমপি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকারি স্থাপনায় হামলা। মেট্রোরেল, মেয়র হানিফ ফ্লাই ওভারের টোল প্লাজায় আগুন কে দিয়েছে? সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও নাম পরিচয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি স্থানীয়রাও ছবি দেখে নিশ্চিত হতে পারছে না পরিচয়।

অভিযোগ ওঠে এই ঘটনায় জড়িতদের অধিকাংশই নাম পরিচয় গোপন করে থেকেছেন বিভিন্ন এলাকায়। তাদের কেউ কেউ সহিংসতায় জড়িতদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অভিযোগ সামনে রেখে ভাড়াটিয়াদের ১৭ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।

অবশ্য ২০১৪ সালে রাজধানীর ঢাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য বাড়িওয়ালাদের কাছে চায় ডিএমপি। সে সময় সিআইএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ। এছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেয়া হয় ভাড়াটিয়া ফর্ম। এর পর নষ্ট হয় ধারাবাহিকতা অন্য কাজের ফাঁকে ধীরগতি আসে ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমে।

পুরাণ ঢাকার কে এম দাস লেনের ৮ তলা বাড়ির মালিক মোহাম্মদ রাজু। নতুন করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছেন তিনি। তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেবেন ভাড়াটিয়া ফর্মের তথ্য।

বাড়ির মালিক রাজু বলেন, ‘গত দুইমাসে যারা নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে বিট অফিসারকে দেয়ার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

আরেকজন বাড়ির মালিক বলেন, ‘নতুন কেউ আসলে নিজ দায়িত্বে বিট অফিসারকে তথ্য দিয়ে আসি। আর ১ থেকে দেড় মাস পর পর বিট অফিসাররা আমাদের কাছে আসে তথ্য নিতে।’

পুলিশের সংগ্রহ করা তথ্যে নাম, পরিচয়, স্থায়ী ঠিকানা থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার সংযুক্ত করতে হবে বাড়িওয়ালাদের। ভাড়াটিয়াদের তথ্য সিআইএমএস সফটওয়্যারে মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।

ওয়ারী বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা যে ফর্ম বিট অফিসারের মাধ্যমে দিচ্ছি সেখানে বেসিক তথ্যগুলো থাকো ফর্মে। সেখান নাম, মোবাইল নাম্বার, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, বাসার অ্যাসিসট্যান্ট থাকলে তার নাম, ঠিকানা, ড্রাইভারের নাম, হোম ডিস্ট্রিক ইত্যাদি। এছাড়া বাড়ির মালিকের তথ্য হিসেবে সিকিউরিটি গার্ডের তথ্য নেয়া হচ্ছে।’

বিভিন্ন অপরাধী ও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বাড়ির মালিককে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সচেতন করাও এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য দাবি ঢাকার পুলিশ প্রধানের।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেখানে বেশিরভাগই বাহির থেকে এসে এখানে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিল। সিসিটিভি, টেলিভিশনের পর্দ্দা ও তথ্য ফর্ম বিশ্লেষণ করে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি কারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।’

নাগরিক তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি অপরাধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এমন দাবি অপরাধ বিশেষজ্ঞের।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, এই তথ্যগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা বা নিয়মমাফিকভাবে করা তা কিন্তু দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এটি নিয়মমাফিকভাবে হয়নি। হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো সেটার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললাম সেটা যেন থেমে না যায়। এই ব্যবস্থা নেয়াটা চলমান যেন থাকে।

সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার নয় সে দিকে নজর রাখার পরামর্শ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ঢাকা শহরে ভাড়াটিয়া কত, জানা নেই মেট্রোপলিটন পুলিশের!

আপডেট : ০২:০৯:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

প্রায় ২ কোটি মানুষের ঢাকা শহরে কত ভাড়াটিয়া? কিন্তু অধিকাংশেরই নাম, পরিচয়, ঠিকানা জানা নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। ভাড়াটিয়ার ফরম ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ২০১৪ সালের পর শুরু হলেও পুরোটা সংগ্রহ হয়নি এখনও। সাম্প্রতিক ঘটনার পর আবারও বাড়ির মালিকদের কাছে ভাড়াটিয়াদের তথ্য চেয়েছে ডিএমপি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকারি স্থাপনায় হামলা। মেট্রোরেল, মেয়র হানিফ ফ্লাই ওভারের টোল প্লাজায় আগুন কে দিয়েছে? সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও নাম পরিচয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি স্থানীয়রাও ছবি দেখে নিশ্চিত হতে পারছে না পরিচয়।

অভিযোগ ওঠে এই ঘটনায় জড়িতদের অধিকাংশই নাম পরিচয় গোপন করে থেকেছেন বিভিন্ন এলাকায়। তাদের কেউ কেউ সহিংসতায় জড়িতদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অভিযোগ সামনে রেখে ভাড়াটিয়াদের ১৭ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।

অবশ্য ২০১৪ সালে রাজধানীর ঢাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য বাড়িওয়ালাদের কাছে চায় ডিএমপি। সে সময় সিআইএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ। এছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেয়া হয় ভাড়াটিয়া ফর্ম। এর পর নষ্ট হয় ধারাবাহিকতা অন্য কাজের ফাঁকে ধীরগতি আসে ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমে।

পুরাণ ঢাকার কে এম দাস লেনের ৮ তলা বাড়ির মালিক মোহাম্মদ রাজু। নতুন করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছেন তিনি। তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেবেন ভাড়াটিয়া ফর্মের তথ্য।

বাড়ির মালিক রাজু বলেন, ‘গত দুইমাসে যারা নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে বিট অফিসারকে দেয়ার জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

আরেকজন বাড়ির মালিক বলেন, ‘নতুন কেউ আসলে নিজ দায়িত্বে বিট অফিসারকে তথ্য দিয়ে আসি। আর ১ থেকে দেড় মাস পর পর বিট অফিসাররা আমাদের কাছে আসে তথ্য নিতে।’

পুলিশের সংগ্রহ করা তথ্যে নাম, পরিচয়, স্থায়ী ঠিকানা থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার সংযুক্ত করতে হবে বাড়িওয়ালাদের। ভাড়াটিয়াদের তথ্য সিআইএমএস সফটওয়্যারে মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।

ওয়ারী বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা যে ফর্ম বিট অফিসারের মাধ্যমে দিচ্ছি সেখানে বেসিক তথ্যগুলো থাকো ফর্মে। সেখান নাম, মোবাইল নাম্বার, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, বাসার অ্যাসিসট্যান্ট থাকলে তার নাম, ঠিকানা, ড্রাইভারের নাম, হোম ডিস্ট্রিক ইত্যাদি। এছাড়া বাড়ির মালিকের তথ্য হিসেবে সিকিউরিটি গার্ডের তথ্য নেয়া হচ্ছে।’

বিভিন্ন অপরাধী ও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বাড়ির মালিককে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে বাসা ভাড়া নিচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সচেতন করাও এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য দাবি ঢাকার পুলিশ প্রধানের।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেখানে বেশিরভাগই বাহির থেকে এসে এখানে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিল। সিসিটিভি, টেলিভিশনের পর্দ্দা ও তথ্য ফর্ম বিশ্লেষণ করে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি কারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।’

নাগরিক তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি অপরাধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এমন দাবি অপরাধ বিশেষজ্ঞের।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, এই তথ্যগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করা বা নিয়মমাফিকভাবে করা তা কিন্তু দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এটি নিয়মমাফিকভাবে হয়নি। হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো সেটার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললাম সেটা যেন থেমে না যায়। এই ব্যবস্থা নেয়াটা চলমান যেন থাকে।

সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার নয় সে দিকে নজর রাখার পরামর্শ অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।