চলমান আন্দোলন-অচলাবস্থার নিরসন ঘটানো উচিত : সুজন
- আপডেট সময় : ০৪:০৬:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে
ছাত্রসমাজসহ নাগরিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের মধ্য দিয়েই চলমান আন্দোলন ও অচলাবস্থার নিরসন ঘটানো উচিত বলে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
তারা বলছে, আর সরকার যদি বল প্রয়োগের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দমন করতে চায় এবং এ ব্যাপারে সক্ষম হয়, তবে ভবিষ্যতে আবারও বড় ধরনের অসন্তোষ মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যার পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার আন্দোলনের অচলাবস্থা নিরসনে করণীয় বিষয় তুলে ধরে বলেন, যেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূচিত চলমান আন্দোলন কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তাই এই অচলাবস্থা নিরসনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় এবং বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে দাবিপূরণের আশ্বাস এখন যথেষ্ট নয়। এখন প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এ জন্য সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে বসতে হবে এবং অচলাবস্থা নিরসনে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল থেকে উঠে আসা সংশ্লিষ্ট সবার যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার যোষণা দিতে হবে।
যে বিষয়গুলোর ওপর সরকারের গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে সুজন মনে করে সেগুলো হলো, নিহতদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রকাশ করা। নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনায় স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তও হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে মামলা না দেওয়া এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া (কেননা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরাই বলছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সহিংসতায় লিপ্ত হয়নি) এবং গায়েবি মামলা ও ব্লক রেইড দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে হয়রানি না করার অঙ্গীকার করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রসমাজসহ নাগরিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের মধ্য দিয়েই চলমান আন্দোলন ও অচলাবস্থার নিরসন ঘটানো উচিত। আর সরকার যদি বল প্রয়োগের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দমন করতে চায় এবং এ ব্যাপারে সক্ষম হয়, তবে ভবিষ্যতে আবারও বড় ধরনের অসন্তোষ মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে; যার পরিণতি হতে পারে আরও ভয়াবহ। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নামা শুরু করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করেছে। সংগঠনটির আজকের কর্মসূচি রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ (আমাদের নায়কদের স্মরণ)।
তারা বলেন, পরিশেষে আমরা বলতে চাই যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের সুদূর প্রসারী বৃষ্টি এই নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারে ব্রতী হতে হবে। আর সেই রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশে দুর্বত্তায়িত রাজনীতির পরিবর্তে আদর্শভিত্তিক জনকল্যাণমুখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে ঐকমত্য। আশাকরি সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সেই শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে আমাদের স্বপ্নের মতো করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।