০৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনার দোষী সাব্যস্ত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হলো দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারায় জামায়াত–শিবির নিষিদ্ধ হলো।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জামায়াত–শিবির নিষিদ্ধ করার আলোচনা শুরু হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশ জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছিলেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর কথা।

নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ১৪ দলের সভায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত, তা বেআইনি।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দলটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। আর শিবিরের আগের নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের পূর্ব লগ্নে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার জন্য এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সরাসরি দায়ী করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। অনেকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। যা নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের এক রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারায়। তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনীতির মাঠে তাদের সক্রিয় দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এর জন্য সরকার জামায়াত ও শিবিরকেই দায়ী করছে। এই সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু হতাহত হন। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৬৬ জন।

সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে সহিংসতা উসকে দেয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

আপডেট : ০৪:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনার দোষী সাব্যস্ত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হলো দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারায় জামায়াত–শিবির নিষিদ্ধ হলো।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জামায়াত–শিবির নিষিদ্ধ করার আলোচনা শুরু হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশ জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছিলেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর কথা।

নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ১৪ দলের সভায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত, তা বেআইনি।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দলটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। আর শিবিরের আগের নাম ছিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের পূর্ব লগ্নে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার জন্য এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সরাসরি দায়ী করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। অনেকের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পঁচাত্তরে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। যা নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের এক রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে। ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারায়। তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনীতির মাঠে তাদের সক্রিয় দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এর জন্য সরকার জামায়াত ও শিবিরকেই দায়ী করছে। এই সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু হতাহত হন। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৬৬ জন।

সরকারের দাবি, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে প্রবেশ করে সহিংসতা উসকে দেয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়।