বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় না দেওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৬ সমন্বয়ক। শুক্রবার অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতিটি পোস্ট করা হয়।
এতে দাবি করা হয়, ‘আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সকল সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে গত ২৬ জুলাই বিকেলে চিকিৎসাধীন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং তাঁদের সঙ্গে আবু বাকেরকে তুলে আনে ডিবি পুলিশ। পরদিন সন্ধ্যায় তুলে নেওয়া হয় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে। আর ২৮ জুলাই ডিবি অফিস নেওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকে তাঁরা মিন্টো রোডের ডিবি অফিসেই ছিলেন।
একই দিন ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন তৎকালীন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। এরপর সমন্বয়কদের পরিবারের সদস্যরাও ডিবি অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।
ডিবি হেফাজতে থেকেই গত ২৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক সকল আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে এই ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে এরপর থেকেই নতুন করে বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছেন অন্য সমন্বয়কেরা। গত বৃহস্পতিবার তাদের ডিবি কার্যালয় থেকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
৬ সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’
ডিবি অফিসে থাকার সময় অনশন করেছিলেন বলেও বিবৃতিতে জানান ৬ সমন্বয়ক। এতে বলা হয়, ‘অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবি প্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে, অনশন ভাঙা হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের উপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করছে। ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’