শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতিপক্ষ নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার (২ আগস্ট) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মানা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা ও নৈরাজ্য করেছে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় হওয়া হত্যার তদন্তে কমিশন কাজ করছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এই তদন্তে জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। কমিশনে তিনজন বিচারপতি কাজ করছেন। আর্থিক সহায়তা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান কর্মসূচির মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ড. ইউনূসকে সরকার প্রধান করে একটি মন্ত্রিসভা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিভাবে দেখছে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘এটা পাগলের প্রলাপ’।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের সুযোগে তৃতীয় পক্ষ যেন উসকানি দিতে না পারে সে জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা দেখছি নাগরিক সমাজের অনেকে চলমান সংকটে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমরা ব্যক্তিগত মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু একটা রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি সকলের বিবেচনায় থাকা উচিত। তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোনও স্বার্থান্বেষী মহল যেন উসকানি দিতে না পারে সেই বিষয়ে সকলের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সকলের ধৈর্য ধারণ সমীচীন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি যেহেতু পূরণ হয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি তারা ক্লাসে, পরীক্ষার হলে ফিরে যাবে। তারা অশুভ কোনও রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার হোক, এটা জাতি চায় না। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি এবং আটক না করতে আইন প্রয়োগকারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনও শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে দায়িত্বশীল সকলকে সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সে জন্য সময়সূচি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। আটককৃত পরীক্ষার্থীদের মুক্ত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে।
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করায় সরকারকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান কাদের। তিনি বলেন, এর আগেও বাংলাদেশে কয়েকবার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছিল। এবারও জামায়াতের নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের জোরালো দাবি উঠেছিল। সেই গণদাবির প্রতি আস্থাশীল হয়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিষিদ্ধ জামায়াতের রাজনীতির বৈধতা দেন। তারা সবসময় জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে চলেছে। তাই বিএনপির পক্ষে দলটিকে পরিত্যাগ করা অসম্ভব। যে কারণে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধে দেশের মানুষ সাধুবাদ জানালেও মির্জা ফখরুল আলমগীর এ সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক বলবে, স্বাভাবিক।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি কোটার বিষয়ে আদালতে যাবেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, আমি ঠিক জানি না তিনি কি বলেছেন। যদি বলে থাকেন এটা তার ব্যক্তিগত মত, এটা সরকার বা আমাদের দলের কোনও সিদ্ধান্ত না।
শিক্ষার্থীদের নয় দফায় আপনার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগসহ বিভিন্ন বিষয় আছে। দাবি নিয়ে কি ভাবছেন—জবাবে কাদের বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন কে অপরাধী? কে অপরাধী নয়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেটা তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধির আওতায় পড়ে। কাজেই বিষয়টি সেখানেই থাকবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।