ঢাকা ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৯৯

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:০২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৮৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দিনভর সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় রাত ১১টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২-এ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১৩জন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে একজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট বাইশজন, বরিশালে একজন, সিলেটে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে আট জন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় পাঁচজন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ তিনজন, নরসিংদীতে ছয় জন, জয়পুরহাটে একজন, কক্সবাজারে একজন, ফেনীতে আটজন ও ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এসব জেলায় আহত হয়েছেন অন্তত কয়েকশ’ মানুষ।

ঢাকা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতে সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। নিহত কিশোর হলেন- ওমর ফারুক (১৬)। তিনি মোহাম্মদপুরের বোর্ড ঘাট এলাকার বাসিন্দা।

এ ছাড়াও ঢামেক হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়া হয়েছে।

ধামরাই
ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। তবে তিনি কখন এবং কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে। মরদেহ এখানে ফেলে সেই যুবকেরা চলে গেছে।’

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজী। একই এলাকার মো. সজল (৩০) ও ডিপজল সর্দার (১৯)। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং ডিপজল ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার সময় মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা।

মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় ও তার ভাগনেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়। এদিকে রংপুর মহানগরীতে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পাবনা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কিশোরগঞ্জ : এ রিপাের্ট লেখা পযর্ন্ত (বেলা ৩.৩০ মিনিট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ চলছিল। দুপুরে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। মিছিল নিয়ে শহরের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পৌঁছলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শোলাকিয়ায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুইজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৯২

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১১ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিব (৪২)।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।

বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।

ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।

বগুড়া : বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পরে পুরো শহর।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিল্লা : অসহযোগ আন্দোলন সমর্থনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছে। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি একই উপজেলার বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রুবেল প্রান্তিক নামের একটি পরিবহনের বাসচালক ছিলেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত রুবেলকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আট আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী : অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতারি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

সিলেট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ২ জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মরহুম মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহিন আহমদ।

এদিকে গোলাপগঞ্জেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

লক্ষীপুর : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাউসার, আদনান, সাব্বীর ও মিরাজ। লক্ষীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরুপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে রিপন শীল নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। সে বিএনপির কর্মী বলে জানা যায়। রোববার (৪ আগস্ট) সদর উপজেলার টাউন হল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেরপুর : শেরপুরে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় গাড়ির চাপায় তিন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের এক জনের নাম মাহবুবুল ইসলাম (২২), তিনি আইটি উদ্যোক্তা ছিলেন। অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।

রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত আরএমও ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাভার : ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে । এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও দুইজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৩৪

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর আনুমানিক দুইটার পর মরদেহটি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। গুলিবিদ্ধ অপরজ হলেন বাইপাইল এলাকার পানি বিক্রেতা বিপ্লব (৪০)।

ধামরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দুপুরের পর ৪-৫ জন তরুণ আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক তরুণের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে। মরদেহটি হাসপাতালে রেখে তারা চলে যায়।

আহত বিপ্লব বলেন, আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করছিলাম। তখনই আমার বুকে গুলি লাগে।

এক দফা কর্মসূচিতে আজ সকালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে নানা ধরনের স্লোগান দেন তারা। একপর্যায়ে সরকার দলীয়পক্ষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ।

রংপুর টাউনহল চত্বরে মূল সড়ক দখলে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে।

দিনাজপুরের মুন্সিপাড়ায় বিক্ষোভ চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দু’টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এছাড়া হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বাসা ভাঙচুর করেছে। মৌলভীবাজারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন কয়েকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিরাসার এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিকের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সেখানে একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত অন্তত ১০ জন হয়েছেন।

খুলনার শিববাড়ি মোড়ে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার পরে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা।

এদিকে পঞ্চগড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও তার মা মহিলা সাংসদ রেজিয়া ইসলামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এক দফা দাবিতে কিশোরগঞ্জ শহর দখল নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এছাড়া গৌরাঙ্গ বাজার স্টেশন রোডে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

রাজশাহীর তালাইমারিতে ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহের টাউনহল মোড়ে জড়ো হয়েছেন ছাত্ররা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।

নিউজটি শেয়ার করুন

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৯৯

আপডেট সময় : ০৫:০২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) দিনভর সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় রাত ১১টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২-এ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১৩জন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে একজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট বাইশজন, বরিশালে একজন, সিলেটে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে আট জন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় পাঁচজন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ তিনজন, নরসিংদীতে ছয় জন, জয়পুরহাটে একজন, কক্সবাজারে একজন, ফেনীতে আটজন ও ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এসব জেলায় আহত হয়েছেন অন্তত কয়েকশ’ মানুষ।

ঢাকা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতে সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। নিহত কিশোর হলেন- ওমর ফারুক (১৬)। তিনি মোহাম্মদপুরের বোর্ড ঘাট এলাকার বাসিন্দা।

এ ছাড়াও ঢামেক হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়া হয়েছে।

ধামরাই
ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। তবে তিনি কখন এবং কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে। মরদেহ এখানে ফেলে সেই যুবকেরা চলে গেছে।’

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরহাজী (৩৮)। তিনি শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার প্রয়াত কাজী মতিন ফরহাজী। একই এলাকার মো. সজল (৩০) ও ডিপজল সর্দার (১৯)। এদের মধ্যে রিয়াজুল এবং ডিপজল ঘটনাস্থলে এবং সজলকে হাসপাতাল নেওয়ার সময় মারা যায় বলে জানান তার স্বজনরা।

মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর : রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় ও তার ভাগনেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়। এদিকে রংপুর মহানগরীতে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পাবনা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কিশোরগঞ্জ : এ রিপাের্ট লেখা পযর্ন্ত (বেলা ৩.৩০ মিনিট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ চলছিল। দুপুরে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। মিছিল নিয়ে শহরের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পৌঁছলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শোলাকিয়ায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম টিটুর বাসার আগুন নেভানোর সময় দুইজন কেয়ারটেকার ও স্ট্রোক করে একজন ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৯২

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১১ পুলিশকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় শহরের এসএস রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, যুবদল নেতা রন্জু (৪০), ছাত্রদল নেতা সুমন (৩০) ও যুবদল কর্মী আব্দুল লতিব (৪২)।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।

বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।

ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।

বগুড়া : বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। রোববার (০৪ আগস্ট) বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসময় বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ এবং পুলিশের টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা এলাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করায় ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পরে পুরো শহর।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিল্লা : অসহযোগ আন্দোলন সমর্থনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছে। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি একই উপজেলার বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রুবেল প্রান্তিক নামের একটি পরিবহনের বাসচালক ছিলেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত রুবেলকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আট আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী : অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীদের চারজন। মাধবদী থানার ওসি কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নওশের (৪০) ও অজ্ঞাত (৩৮)।

জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার জন্য মিছিলে এলোপাতারি গুলি চালালে কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদের মধ্যে সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১), আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে পাঠানো হয়।

সিলেট : সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ধারাবহর হাসপাতালের সামনের ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে পুলিশ বিজিবি ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ৫০ জন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জের ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ২ জন হলেন ব্যবসায়ী বারকোট গ্রামের মরহুম মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহিন আহমদ।

এদিকে গোলাপগঞ্জেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আহত এবং গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

লক্ষীপুর : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শহরের ঝুমুর ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাউসার, আদনান, সাব্বীর ও মিরাজ। লক্ষীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরুপ পাল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে রিপন শীল নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। সে বিএনপির কর্মী বলে জানা যায়। রোববার (৪ আগস্ট) সদর উপজেলার টাউন হল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেরপুর : শেরপুরে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় গাড়ির চাপায় তিন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের এক জনের নাম মাহবুবুল ইসলাম (২২), তিনি আইটি উদ্যোক্তা ছিলেন। অপর দুজনের নাম জানা যায়নি।

রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত আরএমও ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাভার : ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে । এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আরও দুইজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ৩৪

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর আনুমানিক দুইটার পর মরদেহটি ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। গুলিবিদ্ধ অপরজ হলেন বাইপাইল এলাকার পানি বিক্রেতা বিপ্লব (৪০)।

ধামরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, দুপুরের পর ৪-৫ জন তরুণ আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক তরুণের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে। মরদেহটি হাসপাতালে রেখে তারা চলে যায়।

আহত বিপ্লব বলেন, আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করছিলাম। তখনই আমার বুকে গুলি লাগে।

এক দফা কর্মসূচিতে আজ সকালে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে নানা ধরনের স্লোগান দেন তারা। একপর্যায়ে সরকার দলীয়পক্ষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ।

রংপুর টাউনহল চত্বরে মূল সড়ক দখলে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে।

দিনাজপুরের মুন্সিপাড়ায় বিক্ষোভ চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দু’টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এছাড়া হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বাসা ভাঙচুর করেছে। মৌলভীবাজারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন কয়েকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিরাসার এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিকের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সেখানে একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত অন্তত ১০ জন হয়েছেন।

খুলনার শিববাড়ি মোড়ে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভে ছাত্রলীগের হামলার পরে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা।

এদিকে পঞ্চগড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও তার মা মহিলা সাংসদ রেজিয়া ইসলামের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এক দফা দাবিতে কিশোরগঞ্জ শহর দখল নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এছাড়া গৌরাঙ্গ বাজার স্টেশন রোডে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

রাজশাহীর তালাইমারিতে ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহের টাউনহল মোড়ে জড়ো হয়েছেন ছাত্ররা। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।