সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিকে ঘিরে চলা সহিংসতায় নিহত বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে এনায়েতপুরে ১৩ পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন, রায়গঞ্জে সাংবাদিক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জন, সদরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ৫ জন নিহত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় থানায় আগুন দেয় তারা। প্রাথমিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে নিহতের মধ্যে থানার এসআই ও এএসআই রয়েছেন। এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্যের নিহতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক।
এর আগে রোববার সকাল ১০টায় খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজ ও খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আন্দোলনে একাত্বতা প্রকাশ করে বিএনপি জামাতের ৫ শতাধিক আন্দোলনকারী লাঠিসোঁটা নিয়ে এনায়েতপুরের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে। এরপর তারা দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাব্যাপী এনায়েতপুরের থানা আওয়ামী লীগের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে, বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এনায়েতপুর হাটসহ থানা এলাকা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের হটাতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এসময় বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের স্থানীয় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জনের মৃত্যু হয়।
আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থানায় ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গণপিটুনিতে ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হন। মরদেহ থানার মধ্যে স্তূপ করে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ নেয় আন্দোলনকারীরা। সংঘর্ষে নিহত আন্দোলনকারীরা হলেন, এনায়েতপুর বেতিল গ্রামের শিহাব ও সিয়াম এবং খুকনী গ্রামের মোহাম্মদ এহিয়া। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কৌশিক আহমেদ।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কিছু সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। এসময় আন্দোলনকারীরা দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে এবং ভাঙচুর করে। দলীয় নেতারা পাশের প্রেসক্লাবে অবস্থান নিলে সেখানেও হামলা করে তারা। এতে নিহত হন- রায়গঞ্জের বম্ব্রগাছার ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার লিটন, তাঁর ছোট ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টিটু হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, দৈনিক খবর পত্রের উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক। রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আমিরুল ইহসান তৌহিদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জে একই দিন সকালে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ ৩ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বাচ্চু। নিহতরা হলেন, স্থানীয় ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মো. সুমন আলী, সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রঞ্জু হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য আব্দুল লতিফ।
জেলায় বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হয়েছে। এরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহতদের স্বজনেরা মৃতদেহ নিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক।
এদিকে রোববার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর মুজিব সড়কের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই বাড়ি থেকে দুইটি পোড়া মরদেহ পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংসদ সদস্যের স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু।
এর আগে দুপুরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, অগ্নিসংযোগের আগে ওই এলাকায় হামলা করে আন্দোলনকারীরা তখন তারা পালিয়ে এমপির বাড়ির বার্থ রুমে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে অগ্নিসংযোগের কারণে আর বের হতে পারেনি তারা। নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।