০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ০৩:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
  • ২৮ দেখেছেন

দীর্ঘদিনের নেত্রী শেখ হাসিনা মারাত্মক বিক্ষোভের মুখে আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে তার সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সাথে বৈঠক করেন এবং কারফিউ কার্যকর করতে সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন, আলোচনার বিষয়ে অবহিত দুই কর্মরত সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

এরপর জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি যে লকডাউনের কথা বলেছিলেন তা তার সৈন্যরা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, ওই কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন নেই।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় সেনাপ্রধানের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন বিমান ও নৌবাহিনীর দুই প্রধান এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। সেই বৈঠকে কর্মকর্তারা সেনাপ্রধানকে জানান যে বর্তমানে বিক্ষোভ যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে সেনাবাহিনীর পক্ষে তা থামানো একপ্রকার অসম্ভব।

পরের দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী জনতার। মিছিল শুরু হওয়ার একঘণ্টা আগে গণভবনে আসেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। শেখ হাসিনাকে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীকে জনবিক্ষোভ প্রতিরোধ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, তা পালনে তার সেনারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে; কারণ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করার পরামর্শও দেন তিনি।

এই পরামর্শ মানতে একেবারেই নারাজ ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বলেন সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনাকে বোঝানোর অনুরোধ জানান।

কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেনাপ্রধান। জয়ের সঙ্গে কথা বলার পর দেশত্যাগে সম্মত হন শেখ হাসিনা। সেসময় নিরাপদে গণভবন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের হাতে সময় ছিল এক ঘণ্টারও কম।

শেখ হাসিনার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা প্রকাশ্যে দেননি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বিক্ষোভের ব্যাপকতা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে সমর্থন করা সম্ভব হয়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সৈন্যদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। এটাই সম্ভবত সেনাপ্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, কারণ সেনারা বাইরে রয়েছে এবং তারা দেখছে কী ঘটছে।

শনিবার টাউন হল মিটিংয়ে কাঠের অলঙ্কৃত চেয়ারে বসে শত শত ইউনিফর্ম পরিহিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার সমর্থনে দ্বিধাবিভক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। পরে সামরিক বাহিনী সেই আলোচনার কিছু বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান জীবন রক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যে সহিংস বিক্ষোভ জোরপূর্বক দমন করবে না, তার প্রথম ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল হাসিনাকে।

সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানের মতো অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সেনারা। পদাতিক বাহিনীর সাবেক সৈনিক খান বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের আটকায়নি। সেনাবাহিনী যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেনাবাহিনী তাই করেছে।

বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না

আপডেট : ০৩:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪

দীর্ঘদিনের নেত্রী শেখ হাসিনা মারাত্মক বিক্ষোভের মুখে আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে তার সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সাথে বৈঠক করেন এবং কারফিউ কার্যকর করতে সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন, আলোচনার বিষয়ে অবহিত দুই কর্মরত সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

এরপর জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি যে লকডাউনের কথা বলেছিলেন তা তার সৈন্যরা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, ওই কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন নেই।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় সেনাপ্রধানের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন বিমান ও নৌবাহিনীর দুই প্রধান এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। সেই বৈঠকে কর্মকর্তারা সেনাপ্রধানকে জানান যে বর্তমানে বিক্ষোভ যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে সেনাবাহিনীর পক্ষে তা থামানো একপ্রকার অসম্ভব।

পরের দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী জনতার। মিছিল শুরু হওয়ার একঘণ্টা আগে গণভবনে আসেন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক। শেখ হাসিনাকে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীকে জনবিক্ষোভ প্রতিরোধ করার যে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, তা পালনে তার সেনারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে; কারণ পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করার পরামর্শও দেন তিনি।

এই পরামর্শ মানতে একেবারেই নারাজ ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে বলেন সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনাকে বোঝানোর অনুরোধ জানান।

কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেনাপ্রধান। জয়ের সঙ্গে কথা বলার পর দেশত্যাগে সম্মত হন শেখ হাসিনা। সেসময় নিরাপদে গণভবন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের হাতে সময় ছিল এক ঘণ্টারও কম।

শেখ হাসিনার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা প্রকাশ্যে দেননি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বিক্ষোভের ব্যাপকতা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে সমর্থন করা সম্ভব হয়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সৈন্যদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। এটাই সম্ভবত সেনাপ্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, কারণ সেনারা বাইরে রয়েছে এবং তারা দেখছে কী ঘটছে।

শনিবার টাউন হল মিটিংয়ে কাঠের অলঙ্কৃত চেয়ারে বসে শত শত ইউনিফর্ম পরিহিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার সমর্থনে দ্বিধাবিভক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। পরে সামরিক বাহিনী সেই আলোচনার কিছু বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান জীবন রক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যে সহিংস বিক্ষোভ জোরপূর্বক দমন করবে না, তার প্রথম ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল হাসিনাকে।

সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানের মতো অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সেনারা। পদাতিক বাহিনীর সাবেক সৈনিক খান বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের আটকায়নি। সেনাবাহিনী যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেনাবাহিনী তাই করেছে।