প্যারিস অলিম্পিক শুরু হওয়ার আগে থেকেই আলজেরিয়ান ওয়েল্টার-ওয়েইট ইমান খেলিফ ও তাইওয়ানের ফেদার-ওয়েইট লিন ইউ-তিংকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এ দুজন বক্সার আসলে নারী কিনা, বিতর্কটা ছিল এ নিয়েই। এর আগে দুজনে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিলেও গত বছর ভারতে হয়ে যাওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারেননি। তাদের শরীরে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের জিনের মাত্রা বেশি। ফলে লৈঙ্গিক যোগ্যতা নির্ধারণী টেস্ট ও টেস্টোস্টেরন টেস্টে পাশ করতে না পারায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের খেলতে দেওয়া হয়নি।
তবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) পরিচালিত অলিম্পিক আর রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) আয়োজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুই নীতির কারণে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট ঠিকই পেয়ে যান দুজন। গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ওয়েল্টার-ওয়েটের শেষ ষোলোতে ইতালির অ্যাঞ্জেলা কারিনিকে মাত্র ৪৬ সেকেন্ডে হারিয়ে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন খেলিফ। চারদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এতসব বিতর্ক আর সমালোচনার মাঝেও গতকাল শুক্রবার মেয়েদের ওয়েল্টার-ওয়েইট ৬৬ কেজি বিভাগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন চীনের ইয়ান লিউকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন ২৫ বছর বয়সী খেলিফ। এতে দারুণ একটি রেকর্ডে উঠেছে এ নারী বক্সারের নাম। আলজেরিয়ার ইতিহাসে অলিম্পিকে এই প্রথম নারীদের বক্সিংয়ে সোনা জিতলেন খেলিফ।
নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথমবার বক্সিংয়ে সোনা জিতল আলজেরিয়া। এমন কীর্তির পর এতদিন ধরা চলা বিতর্ক নিয়ে অবশেষে মুখ খেলেছেন খেলিফ। ২৫ বছর বয়সী এ বক্সার জানিয়েছেন, তিনিও অন্যসব মেয়েদের মতোই একজন মেয়ে। তাঁর সাফল্যকে সহ্য করতে না পেরে নিন্দুকেরা এমন সমালোচনা করছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোনা জেতার পর খেলিফ বলেছেন, ‘আমি যোগ্য কিনা, নারী কিনা, এ নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক বিবৃতি দিয়েছি। আমি এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য শতভাগ যোগ্য ছিলাম। অন্যসব মেয়েদের মতো আমিও একজন মেয়ে। আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছি, বড়ও হয়েছি মেয়েদের মতো করেই। আমি একজন মেয়ে হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকেই আছেন, যারা আমার সাফল্যকে সহ্য করতে পারেন না। সত্যি বলতে, এসব আমার সাফল্যে আলাদা একটা স্বাদ এনে দেয়।’
গতকাল রোলাঁ গারোর ফাইনালে প্রায় ১৫০০০ দর্শক উপস্থিত ছিলেন। দর্শকসারি থেকে খেলিফ ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। খেলিফের সোনা জয় নিশ্চিত হতেই গ্যালারিতে তাঁর নামে স্লোগান ওঠে। এ প্রসঙ্গে আলজেরিয়ান বক্সার বলেছেন, ‘আমার সম্মান অক্ষতই আছে। কিন্তু আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব কথা হয়েছে, সেগুলো যুক্তিহীন। এসব মানুষের মর্যাদাকে প্রভাবিত করে। আমার মনে হয়, মানুষের মানসিকতা এখন বদলাবে।’
আইবিএ-র নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেছেন খেলিফ, ২০১৮ সাল থেকে আমি আইবিএর ছত্রছায়ায় বক্সিং করছি। তারা আমাকে খুব ভালো করেই চেনে। তারা জানে আমি কী করতে সক্ষম এবং আমি কীভাবে ধীরে ধীরে এ পর্যায়ে এসেছি, তারা সেটা জানে। কিন্তু তারা এখন আমাকে স্বীকৃতি দেয় না। আমাকে ঘৃণা করে। কিন্তু আমি জানি না, কেন এমনটা করে। এই স্বর্ণপদকের মাধ্যমে আমি তাদের একটি বার্তা দিতে চাই, সবকিছুর ওপরে সম্মান ও মর্যাদাই আমার কাছে শেষ কথা।’