আ. লীগ হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় : মির্জা ফখরুল
- আপডেট সময় : ১১:২৮:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগ যখন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না তখন হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এটা হচ্ছে তাদের একটি হিংস্র খেলা। যখন তারা আন্দোলনে হেরে যায় তখনই তারা বলবে, হিন্দু ভাইদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার মা-বোনেরা আছেন, দাদারা আছেন, তারা ভালো করেই জানেন এখানে হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে থাকে। এখানে কখনো যুদ্ধ হয় না। হাজার বছর ধরে এই মাটিতে, এই বাংলাদেশেই আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসঙ্গে একটি গাছে ফুলের মতো হয়ে রয়েছি। হিন্দুদের দুর্গাপূজায় আমরা যেমন যাই, আমাদের ঈদেও তারা আসে। আওয়ামী লীগ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটি বিদ্বেষ ছড়াতে চায়। গতকাল পর্যন্ত আমার কাছে ১০টি বিদেশি টেলিফোন ইন্টারভিউ করেছে। আমাদের কথা পরিষ্কার—রাজনীতি যখন পরিবর্তন হয় তখন একটি তাণ্ডব হয়, ধর্মীয় নয় এটা রাজনৈতিক।
তিনি বলেন, বিজয় স্বরণীর সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্তি দড়ি বেঁধে টেনে হিচড়ে ফেলে দেওয়া দেখে খারাপ লেগেছে। কারণ তিনি আমাদের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বিরাট ভূমিকা ছিল। কিন্তু এই লোকটাকে ছোট করে ফেলেছে তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে, এখন গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কোথায়? ঐ ভারতের দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে ভিসা অনুমতি দেবে না নেওয়ার জন্য, ঠিক তেমনি আমেরিকা বলেছে ভিসা দেবো না। কোন দেশ রাজি হয়নি, ভারত যদিও এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি রাজি হয়নি, কিন্তু এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা সেখানেই (ভারতেই) আছেন। এখন ভারত থেকে শুরু করেছেন নতুন এক চক্রান্ত।
গড়েয়ার সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে না, এখন আমাদের হিন্দু ভাইদেরকে ঢাল হিসেবে আগে বাড়ায় দিতে চায়। এটাই তাদের একটা কৌশল-খেলা, অপচেষ্টা। যখনই তারা হারতে থাকবে, যখন জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরায় নিবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, আন্দোলনে হেরে যাবে তখন তারা হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে।
দেশে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা বাংলাদেশে আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চান। ভুলে যাবেন না- আপনাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কখন দেশ ছেড়ে পালায় মানুষ? যখন সে এত অপকর্ম করে তার আর দাঁড়াবার জায়গা থাকে না, এই দেশে যখন তাকে কেউ আর জায়গা দিতে চায়না, কখন পালায় যখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় মানুষ তাকে আর চায়না।
এসময় তিনি আরও বলেন, জনগণের পাশে বিএনপি আছে এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি, আপনারা আমাকে কথা দেন, আপনারা আমাদের হিন্দু ভাইদের পাশে থাকবেন কথা দেন। যে কোন হামলা আসুক আপনারা মোকাবেলা করবেন এবং আজকে যদি অন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে সেই ষড়যন্ত্রকে আপনারা রুখে দিবেন।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা সঠিক সময়ে মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের আমলে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় অনেক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতা খুন হয়েছে, আহত হয়েছে। সবশেষে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে দিয়ে মানুষ হত্যা করাতে চেয়েছিল দাবি করে ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী তাকে জানিয়েছে, আমরা আমাদের ভাইদের ওপর গুলি চালাতে পারব না। সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ।
এ সময় হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ সব অপরাধীর বিচার দাবি করে স্লোগান দেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আবুনুর, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েসসহ জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।