সরকার পতনের পর কানাডায় রাজনীতিবিদদের স্থায়ী আবাস
- আপডেট সময় : ০১:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
দেশ থেকে অর্থপাচার করে কানাডার বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বেগমপাড়া। গেল দেড় যুগে অন্টারিওসহ প্রায় প্রতিটি প্রদেশে বাড়ি-গাড়িসহ বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও মালিক হয়েছেন তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা। গড়ে তুলেছেন আলাদা এক রাজ্য। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সেখানে নতুন নতুন মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। পুরোপুরি ক্ষমতা হারানোর পর ইদানীং সেই আনাগোনা বেড়েছে কয়েকগুণ।
কানাডায় কয়েক মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক বাংলাদেশিরা। টাকার অংকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যা ৩০ থেকে ৫০ কোটির উপরে। স্ত্রী, সন্তানদের নামে আগেই কিনে রাখা হয় আলিশান বাড়ি, যেন ক্ষমতার পালাবদলে হওয়া যায় স্থায়ী।
অন্টারিও প্রদেশে লাখো বাংলাদেশির বাস। যাদের বেশিরভাগই থাকেন টরন্টো শহরের আশপাশে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করে গড়ে তোলা প্রাসাদসম বাড়ির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত টরন্টোর ‘বেগমপাড়া’। এই শব্দটি আসে ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র বেগমপুরা থেকে। কালের বিবর্তনে অন্টারিও ছাড়িয়ে দেশের দুর্নীতিবাজদের বেগম নিবাস গড়ে উঠেছে অন্যান্য প্রদেশেও।
কানাডার চিকিৎসক মাহবুবা রহমান বলেন, ‘কানাডার অন্টারিওতে শুধু বেগমপাড়ায় না, বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের পাড়া গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশের চোরাচালানকারীরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে অন্যদেশগুলোতে টাকা পাচার করছে এবং তাদের সেকেন্ড হোম তৈরি করছে। বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার নিশ্চয়ই কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
গেল দেড় দশকে রাজনীতিবিদ, সরকারি আমলাসহ বাংলাদেশের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মানুষজন সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন কানাডায়। সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন নামি দামি প্রতিষ্ঠানে। প্রতি প্রন্তিকে যেখানে খরচ হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
বিনিয়োগ ভিসায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন অনেক বাঙালি। অধিকাংশই নগদ অর্থে বাড়িসহ কিনেছেন নানা স্থাপনা। অন্টারিও প্রদেশের শহর মিসিসওগা, হ্যামিল্টন, গোয়াল্ফ, লন্ডন ও অন্টারিও লেকের পাড়ঘেঁষা উপশহরগুলোর বিশালাকৃতির অট্টালিকা বা ‘লেকশোর অ্যাপার্টমেন্ট’ কিনে নিয়ে তথাকথিত স্বর্গ গড়ে তুলেছেন দুর্নীতিবাজরা।
কানাডার গবেষক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন ,’ রিসেন্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা দেখেছি যে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি আসছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পয়সা নিয়ে আসছে। তারা মিলিয়ন ডলার, পেট্রোল পাম্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই অবৈধ টাকা দিয়ে গড়ে টুলেছে।’
গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইনটিগরিটি (জিএফআই) এর হিসেবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সে হিসেবে গেলো ১৫ বছরে পাচার হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা।
ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকসময় টাকাগুলো দুবাই, সিঙ্গাপুর একটা হাব বা সোর্স হিসেবে ব্যবহার হয়। তারা টাকাগুলো একটার পর একটা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায়।’
এখনও কানাডার বড় তিন-চারটি ব্যাংকে বাংলাদেশিদের লাখ লাখ ডলার জমা থাকতে পারে বলে ধারণা প্রবাসী অর্থনীতিবিদদের, যার পুরোটাই বাংলাদেশের অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে।