শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি সব অফিস আদালতে বা সংস্থায় পদত্যাগের হিড়িক থাকলেও নির্বাচন কমিশনের চিত্র ভিন্ন। পদত্যাগের জন্য ওপর মহলের সিগন্যালের অপেক্ষায় আছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কমিশনে পরিবর্তন আনতে রাষ্ট্রপতিকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতিও অপসারণের ব্যবস্থা নেবেন সংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রস্তাবের ভিত্তিতে। যেহেতু সংসদ নেই, তাই পদত্যাগ হতে পারে বিকল্প পথ। ক্ষমতার পালাবদলের মাঝে বিগত সরকারের আমলে সার্চ কমিটি সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যদের কমিশনও অস্বস্তিতে ভুগছেন। কোনো কোনো সদস্য ঠিকমতো অফিস করছেন না।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে ৬ ও ৭ আগস্ট সিইসি অফিস করেননি। ৮ আগস্ট কয়েক ঘণ্টা অফিস করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান ৭ আগস্ট থেকে নিয়মিত অফিস করছেন। তবে অন্য কমিশনাররা ওইদিন থেকে অফিস করা শুরু করলেও সবাই প্রতিদিন আসছেন না। এর মাঝেই ছাত্র-জনতা সিইসিসহ কমিশনারদের পদত্যাগ চেয়ে ইসি ভবনের সামনে একাধিক ব্যানার টানিয়েছে।
এই অবস্থায় গত ১২ আগস্ট জরুরি বৈঠকে বসেন সিইসি। ওইদিন চার নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পদত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার। কমিশন কোনো অবস্থানে যেন হেনস্তার শিকার না হয়, সে বিষয়টিকেই তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বর্তমানে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা অফিস করছেন। তবে অন্য নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান অফিস নির্বাচন ভবনে আসছেন না। নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আগে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আইন সচিব, মো. আলমগীর শিক্ষা সচিব ও ইসি সচিব এবং মো.আনিছুর রহমান ধর্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ছিলেন জেলা জজ ও নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান ছিলেন সামরিক বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
বঙ্গভবন থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে পদত্যাগ করবে কমিশন। এক্ষেত্রে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আউয়াল কমিশন।
সংবিধানে ১১৮ (৫) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলি রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যে রূপ নির্ধারণ করবেন, সেরূপ হবে; তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যে রূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সে রূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হবেন না। এছাড়া ১১৮ (৬) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি। এরপর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ছাড়াই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ইসি। এর আগে বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ নির্বাচনে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সিইসির স্ববিরোধী বক্তব্য কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়। এছাড়া ভোটের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনায় পড়ে সংস্থাটি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন জেলায় পদায়ন হওয়া ছয় নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ছয় কর্মকর্তা দেশের বিভিন্ন জেলা কার্যালয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ছয় কর্মকর্তা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহের মিয়াকে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ অনুবিভাগে, কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানকে সচিবালয়ের প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগে, সিলেট জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে, গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সচিবালয়ের সংস্থাপন শাখায়, মাগুরা জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখায় এবং কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমানকে জনবল ব্যবস্থাপনা-১ শাখায় সংযুক্ত করা হয়েছে।