ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর দায় নিতে হবে ১৪ দলের নেতাদেরও। এমন মন্তব্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। তারা বলছেন, হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিচার করতে হবে হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন পর্যন্ত নিরীহ ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধেও। কিন্তু মাঠের বাইরে থেকেও ছাত্র জনতার উপর এ তাণ্ডবে কারা শেখ হাসিনা সরকারকে আকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল?
২৯ জুলাই ২০২৪। কোটা সংস্কারের দাবি থেকে ৯ দফার আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। মাঠেও মুখোমুখি অবস্থানে পুলিশ আর আন্দোলনকারীরা। ঠিক এমন একটি সময় ১৪ দলের নেতাদের গণভবনে ডেকে পাঠান শেখ হাসিনা। তাদের সাথে দীর্ঘ বৈঠকের পর ছাত্র জনতার আন্দোলনকে আরও কঠোর চোখে দেখে সরকার।
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, '১৪ দলের অনেক শরিক আওয়ামী লীগকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে গেছে। সেটা নিজের ইচ্ছায় হোক কিংবা শরিক হওয়ার কারণে। তবে আওয়ামী লীগকে তারা উৎসাহ দিয়ে গেছে।'
২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ এ সময়ে দলটির জোট সঙ্গী হিসেবে কাজ করেছে হাসানুল হক ইনুর জাসদ, রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, আনোয়ার মঞ্জুর জেপি এবং নজিবল বশর মাইজ ভাণ্ডারীরর তরিকত ফেডারেশনসহ ১৪ দল।
আওয়ামী লীগের শরিক দলের অংশ হিসেবে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেয়া হয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। প্রথম সারির কয়েকটি টেলিভিশন ও পত্রিকা বন্ধ করার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মহাজোট সরকারের পরপর দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর পিছনে ১৪ দলের এসব নেতাদের মুখ্য ভূমিকা আছে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সারজিস আলম বলেন, ১৪ দলের সবাই এর সাথে জড়িত। আমাদের ওপর হামলা করার জন্য তারা আওয়ামী লীগকে উৎসাহ দিয়েছে। তারা সবাই এর জন্য দায়ী।
আন্দোলন দমন করবার জন্য চূড়ান্ত অমানবিক ও মানবতাবিরোধী কাজে আওয়ামী লীগের সাথে এর শরিক দলগুলোও জড়িত। দলগুলোর দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না।
তিনি বলেন, 'রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন যে নির্বাচন সঠিক হয়নি। তিনিও সাক্ষ্য দেওয়ার কথাও বলছেন। তারপরও তিনি তাদের সাথে মিশেছেন এবং অন্যায় দেখে সহ্য করেছেন। তাই এড়াতে পারবেন না।'
এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, যা এখন একটি ধ্বংসস্তূপ পরিণত। সরকার পতনের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তেই আত্মগোপনে যেতে থাকে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন গণহত্যার সাথে যেসব দল ও ব্যক্তিরা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।