ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কারা পাচার করেছেন হাজার কোটি টাকা, জানালেন পলক

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রিমান্ডে নেওয়ার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার জবানিতে বেরিয়ে আসছে দেশের সব প্রভাবশালীদের নাম। তবে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আড়াল করে পুরো দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন একটি সিন্ডিকেটের ওপরে।

সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত পলক স্বীকার করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা পুত্র রাদওয়ান সিদ্দিক ববি, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ এবং ইনফরমেশন) সিন্ডিকেট কীভাবে দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পাচার করেছিলেন হাজার কোটি টাকা।

তদন্ত সূত্র বলছে, পলক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা জয়ের সিগন্যাল ছাড়া তার মন্ত্রণালয়ে কোনো কাজই হতো না। তার সিলেক্টেড কোম্পানিগুলো থেকেই সরবরাহকারীরা সব ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়্যার কিনতেন। জয়ের হয়ে মাঝেমধ্যেই সিআরআইয়ের কিছু কর্তাব্যক্তি পলকের সঙ্গে মিটিংয়ে বসতেন। সবশেষ ছাত্র আন্দোলনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বর্বরতা ঢাকতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলেন পলক। তার হুমকিতে বিটিআরসি এবং বেসরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থাগুলো তটস্থ থাকতো সব সময়। তিনি জয়ের নামে ভয় দেখাতেন মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার কোম্পানির কর্মকর্তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, খুব শিগগিরই আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তাদের সম্পৃক্ততা পেলে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে পলক এখনো অনেক কিছুই লুকাচ্ছেন। নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেন, আরও বেশ কিছুদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি, তার কাছ থেকে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইকেট পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে পলক সিন্ডিকেট।

একাধিক সূত্রে দাবি অনুযায়ী, দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের অন্যতম মাফিয়া সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার নাম ভাঙিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন তথ্য প্রযুক্তি খাতে। শুধু পলক নয়, হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন নির্বাচন। নির্বাচনি হলফনামায় লেখেন ১৫ শতক কৃষি জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার। এরপর তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান পলক।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান পলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারী। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও জয়ের সুপারিশে সব অভিযোগ থেকে বেঁচে যান তিনি। ফলে তিন মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার বদল হলেও পলক একই পদে থেকে যান। টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন।

এদিকে, রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তাররা। আনিসুল হককেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ করার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সমাধানের দিকে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের নাম কেবল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চরমভাবে অপব্যবহারও করেছিলেন তারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালক হত্যা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কারা পাচার করেছেন হাজার কোটি টাকা, জানালেন পলক

আপডেট সময় : ১২:০০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

রিমান্ডে নেওয়ার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার জবানিতে বেরিয়ে আসছে দেশের সব প্রভাবশালীদের নাম। তবে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আড়াল করে পুরো দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন একটি সিন্ডিকেটের ওপরে।

সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত পলক স্বীকার করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ রেহানা পুত্র রাদওয়ান সিদ্দিক ববি, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ এবং ইনফরমেশন) সিন্ডিকেট কীভাবে দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পাচার করেছিলেন হাজার কোটি টাকা।

তদন্ত সূত্র বলছে, পলক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা জয়ের সিগন্যাল ছাড়া তার মন্ত্রণালয়ে কোনো কাজই হতো না। তার সিলেক্টেড কোম্পানিগুলো থেকেই সরবরাহকারীরা সব ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়্যার কিনতেন। জয়ের হয়ে মাঝেমধ্যেই সিআরআইয়ের কিছু কর্তাব্যক্তি পলকের সঙ্গে মিটিংয়ে বসতেন। সবশেষ ছাত্র আন্দোলনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বর্বরতা ঢাকতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলেন পলক। তার হুমকিতে বিটিআরসি এবং বেসরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থাগুলো তটস্থ থাকতো সব সময়। তিনি জয়ের নামে ভয় দেখাতেন মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার কোম্পানির কর্মকর্তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, খুব শিগগিরই আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তাদের সম্পৃক্ততা পেলে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে পলক এখনো অনেক কিছুই লুকাচ্ছেন। নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেন, আরও বেশ কিছুদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি, তার কাছ থেকে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইকেট পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে পলক সিন্ডিকেট।

একাধিক সূত্রে দাবি অনুযায়ী, দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের অন্যতম মাফিয়া সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার নাম ভাঙিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন তথ্য প্রযুক্তি খাতে। শুধু পলক নয়, হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

সূত্র বলছে, ২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন নির্বাচন। নির্বাচনি হলফনামায় লেখেন ১৫ শতক কৃষি জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার। এরপর তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান পলক।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান পলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারী। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও জয়ের সুপারিশে সব অভিযোগ থেকে বেঁচে যান তিনি। ফলে তিন মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার বদল হলেও পলক একই পদে থেকে যান। টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন।

এদিকে, রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তাররা। আনিসুল হককেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগ করার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কারণে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সমাধানের দিকে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের নাম কেবল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয়, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চরমভাবে অপব্যবহারও করেছিলেন তারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালক হত্যা মামলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।