জোরালো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি
- আপডেট সময় : ০১:৩০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে
দশ দিন পেরিয়ে গেলেও কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক হত্যা রহস্যের সুরাহা করতে পারেনি সিবিআই। সন্দেহের তীর উঠছে পুলিশের দিকে, অভিযোগ উঠেছে তদন্তে অবহেলারও। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধোঁয়াশা যত বাড়ছে, ততই জোরালো হচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি। আদৌ কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন মমতা? তাহলে কী ফুরিয়ে যাচ্ছে ‘দিদি ম্যাজিক’?
কলকাতার নারীরা যখন আর জি কর হাসপাতাল হত্যাকাণ্ডের জেরে রাত দখল কর্মসূচির ঘোষণা দেন, তখন সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ করেছিলেন উদয়ন গুহের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতারা। কিন্তু এ আন্দোলনের হাওয়া যে মমতার পতনের দিকে বইবে- সেটা ধারণার বাইরে ছিল তাদের।
গদি বাঁচাতে অবশেষে ১৬ আগস্ট নিজেই রাজপথে নামেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলে মমতার পাশে ছিল তৃণমূলের নারী সংসদ সদস্য, টালিগঞ্জের তারকা ও বিধায়কসহ দলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে ফাঁসি দিতে হবে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মমতার এই প্রতিবাদ নিয়ে বিদ্রুপ ও কটাক্ষ করে বিরোধীদলের নেতারা বলেন, কার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন মমতা? এ হত্যার দায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, কার বিরোধিতা করতে রাস্তায় নেমেছেন মমতা? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো তিনি নিজে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কার? তাহলে কী তিনি নিজেই নিজের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করছেন?
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান প্রশ্ন তোলেন, নিজের প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলন করছেন। আপনি কী জনগণকে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার বুলি শোনাতে এসেছেন? নাকি, আপনি তাদের মনে ভয় ঢোকাতে চান?
আর জি করের নারী চিকিৎসক হত্যার তদন্তের প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিহতের পরিবারও। ঐ নারীর বাবার অভিযোগ, একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় তড়িঘড়ি করে তার মেয়ের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল ঘোষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু বাধা দেয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি।
আন্দোলনকারিদের একজন বলেন, ‘সবাই আমাদের ক্ষতে মলম লাগানোর চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রী এখন ন্যায় বিচারের দাবিতে রাজপথে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যখনই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চেয়েছে, তিনি সেই আন্দোলনে বাধা দিয়েছেন। এটা কেমন রাজনীতি?’
মমতার পদত্যাগ নিয়ে কংগ্রেসের পর এবার সোচ্চার হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপিও। দলের মুখপাত্র জানান, তদন্ত প্রক্রিয়াকে যে ভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে তা থেকে এটি স্পষ্ট, মমতার সরকার ধর্ষকদের পরিচয় আড়াল করতে চায়। তথ্য প্রমাণ লোপাট ও হাসপাতাল ভাংচুরের সাথেও জড়িত ছিলেন মমতা।
বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, মমতা ব্যানার্জির যদি ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থেকে থাকে, তার অবিলম্বে ইস্তফা দেয়া উচিত। নিহতের বাবা-মায়ের বয়ান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, মমতা ব্যানার্জির সরকার ‘কন্যা বাঁচাও’ আন্দোলনকে একেবারেই সমর্থন করে না। ধর্ষকদের বাঁচানোই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। বিজেপি শুরু থেকেই বলছে, প্রমাণ লোপাট করা, যারা সত্য বলতে চায় তাদের মুখ বন্ধ করা- এগুলো সবই মমতার নোংরা রাজনীতির অংশ।
রেলওয়ে প্রতিমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথম থেকে যা সন্দেহ করছিলাম তাই সত্যি হচ্ছে। আমি নিশ্চিত, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কখনোই তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন। দিনশেষে তারা দোষীদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গড়াচ্ছে মামলাটি। সোমবার জমা পড়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। আলামত মিলেছে হত্যারও। কিন্তু মমতার বিরুদ্ধে সৃষ্টি হওয়া জনরোষে চাপা পড়ে যাচ্ছে এসব খবর। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটকে তোয়াক্কা করেননি। জোটের শরীক না হয়েও আধিপত্য ধরে রেখেছেন গোটা পশ্চিমবঙ্গে।